মালদা, 3 নভেম্বর : শাসকদল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে দপ্তরে তালা মেরে দিলেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য ৷ চাঁচল এক নম্বর ব্লকের অলিহণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা ৷ আজ ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে ৷ দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় ৷ তবে ঘটনায় ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বলে মনে করা হচ্ছে ৷
গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে মুকুলের অভিযোগ, “আজ আমি সকাল 11টা নাগাদ পঞ্চায়েত দপ্তরে আসি ৷ এখানে আমি মাত্র একজন অফিসের কর্মীকে দেখতে পাই ৷ গ্রামবাসীরা এখানে নিজেদের কাজ নিয়ে এসেছিল ৷ দু’জন মহিলা আমাকে অভিযোগ করেন , তখনও পঞ্চায়েত খোলেনি ৷ তখন 11টা 5 বেজে গিয়েছে ৷ আমি দেখি, শুধুমাত্র পঞ্চায়েতের সচিব ছাড়া তখনও কোনও কর্মী সেখানে আসেননি ৷ আমি সচিবকে জিজ্ঞেস করি, চাবি কার কাছে থাকে ? তখন সচিব এক কর্মীকে ফোনে ডেকে পাঠান ৷ ওই কর্মীর কাছেই পঞ্চায়েতের চাবি থাকে ৷ তিনি 11 টা 15 মিনিট নাগাদ অফিসে আসেন ৷ আমি তাঁকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, প্রতিদিন এই সময়েই পঞ্চায়েত খোলা হয় ৷ গ্রামবাসীদের কথা ভেবেই আজ আমি পঞ্চায়েতে তালা মেরে দিই ৷ তারা সকাল 10টা থেকে এখানে এসে বসে রয়েছে ৷ এই পঞ্চায়েতে একপ্রকার জঙ্গলরাজ চলছে ৷ বেলা 12টার আগে অফিসে কাউকে পাওয়া যায় না ৷ প্রধানকে এনিয়ে অনেকবার অভিযোগ জানিয়েছি ৷ তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি ৷ আমি চাই, পঞ্চায়েতে কাজে আসা কোনও মানুষকে যেন কিছুতেই হেনস্তা না হতে হয় ৷”
স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা আলম বলেন, “এখানে মানুষ সময়ে কোনও পরিষেবা পাচ্ছে না ৷ নিজেদের কাজে সবাই সকাল 10টায় পঞ্চায়েত দপ্তরে আসছে ৷ দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও কাজ না হওয়ায় ফিরে যেতে হচ্ছে ৷ তাই আজ আমরা দপ্তরে তালা বন্ধ করে দিয়েছি ৷ আজও প্রায় 25 জন অফিসে এসে বসেছিল ৷ প্রধানকে এনিয়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে ৷ দেখব, দেখছি ছাড়া তিনি কিছু করতে পারেননি ৷ আমরা চাই, মানুষ যেন সঠিক পরিষেবা পায় ৷”
এনিয়ে প্রধান মনোয়ারা বিবির সঙ্গে যোগাযোগ না করা গেলেও পঞ্চায়েতের সচিব সুশীলচন্দ্র দাস অবশ্য গ্রামবাসী কিংবা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৷ তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত কর্মীরা সবসময় দেরি করে দপ্তরে আসেন না ৷ হয়ত কোনও সময় ফিল্ড বা ব্লকে কাজ থাকে ৷ সেই সময় তাঁদের আসতে দেরি হয় ৷ তবে 30 মিনিটের বেশি কারও দেরি হয় না ৷ তার জন্য মানুষের কাজও বন্ধ থাকে না ৷ আর 10টার সময় কর্মীদের অফিসে আসার কথা নয় ৷ সাড়ে 10টার পর তাঁদের আসার কথা ৷ আমরা সন্ধে 6টা কিংবা সাড়ে 6টার পরেও মানুষকে পরিষেবা দিই ৷ আজ আমি 10 টা 45 মিনিটে এখানে এসে দেখি, তখনও অফিস খোলা হয়নি ৷ যার কাছে চাবি থাকে , তাকে ফোন করে জানতে পারি, তার সাইকেল খারাপ ৷ সে হেঁটে অফিসে আসছে ৷ সে 11টা 10 মিনিট নাগাদ অফিসে পৌঁছায় ৷ কিন্তু স্থানীয়রা তাকে অফিসের তালা খুলতে দেয়নি ৷”
দীর্ঘক্ষণ অবরোধের পর শেষ পর্যন্ত সচিব গ্রামবাসী ও ওই তৃণমূল সদস্যকে আশ্বাস দেন, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার দিকে তাঁরা লক্ষ্য রাখবেন ৷ এরপরেই বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয় ৷ পঞ্চায়েতের তালাও খোলা হয় ৷ বেলা সাড়ে 12টা থেকে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম শুরু হয় ৷