মালদা, 4 সেপ্টেম্বর: পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ৷ তার জেরে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠল চাঁচলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৷ এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ৷ বিচার চাইতে প্রায় প্রতিদিন থানায় ধরনা দিচ্ছেন ওই অন্তঃসত্ত্বা ও তাঁর মা ৷ এবার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা ৷ যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ৷ উলটে তাঁর দাবি, তাঁকেই নাকি মারধর করেছেন মা ও মেয়ে ৷
অন্তঃসত্ত্বার স্বামী সিআরপিএফ কর্মী ৷ বর্তমানে ভিনরাজ্যে কর্মরত তিনি ৷ স্বামী বাইরে থাকায় যুবতী তাঁর মায়ের সঙ্গে চাঁচলের দক্ষিণপাড়ার বাড়িতে থাকেন ৷ এটি তাঁর প্রয়াত বাবার পৈতৃক বাড়ি ৷ অন্তঃসত্ত্বার অভিযোগ, সেই বাড়ি থেকেই তাঁর বিধবা মা ও তাঁকে তাড়ানোর চেষ্টা করছেন চাঁচল 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতি অমিতেশ পাণ্ডে ৷ এ নিয়ে অনেক আগে থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা চলছে ৷ গত 29 অগস্ট সেই ঝামেলা চরমে ওঠে ৷
অভিযোগকারী অন্তঃসত্ত্বার বলেন, "মাকে নিয়ে আমি পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করছি ৷ কিন্তু আমার জ্যেঠতুতো দাদা তথা চাঁচলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা অমিতেশ পাণ্ডে, তাঁর ব্যবসায়ী দাদা অভিষেক পাণ্ডে ও মা গীতা পাণ্ডে আমার আর আমার মায়ের উপর প্রচণ্ড অত্যাচার চালাচ্ছে ৷ মারধর করছে ৷ এর আগেও কেরোসিন তেল ঢেলে আমার মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে ৷ কিন্তু কখনই আমরা থানা থেকে কোনও পদক্ষেপ পাইনি ৷ 29 অগস্ট রাত সাড়ে 12টা নাগাদ আমি শুয়ে ছিলাম ৷ সেই সময় তারা আমার মাকে মারধর করে ৷ আমার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করতে অমিতেশ পেটে লাথি মারে ৷ আমাকে তিনদিন হাসপাতালে ভরতি থাকতে হয় ৷ ওরা চাইছে, আমরা যাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই ৷ আমি অমিতেশ পাণ্ডের শাস্তি চাই ৷ এ নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করব ৷ আমি দেখতে চাই, অমিতেশ পাণ্ডে শাস্তি পায় কি না ৷"
আরও পড়ুন: শিউরে ওঠা ঘটনা! অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী'র ঠোঁট কামড়ে পালাল স্বামী, অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশ
তাঁর মার কথায়, মেয়ের ডাক্তার দেখানোর ডেট ছিল ৷ ঘরের পর্দাটা খোলা ছিল ৷ তাই পর্দা ঠিক করার জন্য ঘরের ভিতরের দেওয়ালে একটা ছোট পেরেক ঠুকছিলেন তিনি ৷ তার আওয়াজে নাকি ওদের সমস্যা হচ্ছিল ৷ তাই ওরা তাঁদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে ৷ তিনি অভিযোগ করেন, "আমার গলা টিপে ধরে মারধর করে ৷ আমার সাড়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারে অমিতেষ আর অভিষেক ৷ অথচ আমি বিয়ের পর যে ঘরে উঠেছিলাম, শুধু সেই ঘরটিতেই খুব কষ্ট করে থাকি ৷ মার খেয়ে আমিও হাসপাতালে ভরতি হই ৷ ওরা আমার মেয়ের গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করতে চায় ৷ আমার জামাই দেশের নিরাপত্তা দিচ্ছে ৷ কিন্তু তার পরিবারের নিরাপত্তা কোথায়? ওদের গ্রেফতার না করা হলে আমরা প্রাণে বাঁচব না ৷ আমার মেয়ের সন্তানও পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে না ৷"
এ দিকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অমিতেশ পাণ্ডের দাবি, এটা তাঁদের পারিবারিক ঝামেলা ৷ 2018 সাল থেকে চলছে ৷ এই সম্পত্তি তাঁর দাদুর হাতে করা ৷ তিনি এখনও জীবিত ৷ দাদু যাকে ভালো মনে করেছেন, সম্পত্তি দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "2018 সাল থেকে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করে আসছে ৷ ওরা দাদুকেও মামলায় আসামি করেছে ৷ আসলে আমার দাদুর কাছ থেকে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ আর আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলছে, সব ভিত্তিহীন ৷ উলটে সেদিন ওঁরাই আমাদের মারধর করেছে ৷ আমি যেহেতু দলের একটা জায়গায় আছি, তাই আমাকে বদনাম করার চেষ্টা করছে ৷"
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে লাথি মারার অভিযোগ তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে
এ বিষয়ে চাঁচল থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই মহিলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশি তদন্তও শুরু করা হয়েছে ৷