মালদা, 2 ডিসেম্বর: ফিরহাদ হাকিমের নামে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার দাবিতে 16 লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ, রাস্তায় গণধোলাই তৃণমূল নেতাকে (TMC Leader) ৷
হরিশ্চন্দ্রপুরের সংগঠন পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল গাফফার। কয়েকবছর আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন ৷ তাঁর দুই মেয়ে পুতুলনেশা পারভিন এবং হাজেরা খাতুন। অভিযোগ, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফিরহাদ হাকিমের নাম করে অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দফায় দফায় পুতুলনেশা পারভিনের থেকে 16 লক্ষ টাকা নেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জয়হিন্দ বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম ৷ ভোটের আগেই চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও চাকরি পাননি দুই বোন (TMC Leader Allegedly Took 16 Lakh Rupees from 2 Sisters) ৷
পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে বারবার নির্যাতিত হতে হয়েছে তাঁদের ৷ শুক্রবার দুপুরে পুতুলনেশা পারভিন শুনতে পান জাহাঙ্গিরবাবু বাড়িতে এসেছেন ৷ এই খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে তড়িঘড়ি যান পাওনা টাকা চাইতে ৷ সেই সময় পুতুলনেশা পারভিনকে পেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ (Woman Beaten by TMC Leader) ৷ প্রাণ বাঁচাতে জাহাঙ্গিরবাবুর জামার কলার ধরে ফেলেন পুতুল ৷ বিষয়টি নজরে আসতেই স্থানীয় বাসিন্দারা তড়িঘড়ি এসে পুতুলকে উদ্ধার করে জাহাঙ্গিরকে গণধোলাই দিতে থাকেন ৷
আরও পড়ুন: ব্যাংকে চাকরির টোপ দিয়ে প্রতারণা, বিধাননগরে গ্রেফতার 16
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ পুলিশ জাহাঙ্গিরবাবুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় ৷ যদিও এই ঘটনা নিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ পুতুল নেশা পারভিন বলেন, "গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুই বোনকে অঙ্গনওয়াড়ি সুপার ভাইজার পদে চাকরি দেওয়ার জন্য আমি তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির আলমকে 16 লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত টাকা ফেরত দেননি ৷ বাড়িতে গেলে ওনার বউ বলে দিচ্ছেন বাড়িতে আসবেন না ৷ আজ আমি শুনতে পেয়েছিলাম উনি বাড়িতে এসেছেন ৷ তাই বাড়িতে গিয়েছিলাম ৷"
তিনি আরও বলেন, "বাড়িতে যেতেই আমাকে বুট জুতো দিয়ে লাথি মেরে, গলা চেপে ধরে ৷ দু-চার থাপ্পরও মারে ৷ সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে আমি জামার ওনার কলার ধরে ফেলি ৷ এরপরেই গ্রামের লোকজন এসে ওনাকে ছাড়ায় ৷ উনি আমার ফোন নম্বর ব্লক লিস্টে ফেলে রেখেছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে টাকার কথা বলছি ৷ কিন্তু টাকা দিচ্ছে না ৷ গ্রামবাসীদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওনাকে নিয়ে গিয়েছে ৷ জমি বিক্রি করে ও ছাদ ঢালাইয়ের জমানো টাকা দিয়েছিলাম ৷ সেই সময় আমাকে বলেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফিরহাদ হাকিম চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন ৷ মোবাইলের সেই কথোপকথনের রেকর্ডিংও আছে আমার কাছে ৷ প্রাথমিক চিকিৎসার পর আমি এনিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করব ৷"
আরও পড়ুন: 100 দিনের কাজের নামে বৃদ্ধাকে 'প্রতারণা'! প্রতিবাদ করলে মারধরের অভিযোগ সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে
অন্যদিকে, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির আলম বলেন, "আমি কোনও টাকা নিইনি ৷ উনি সিপিএম নেতার স্ত্রী ৷ স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিচ্ছিলেন ৷ তাতে রাজি না-হওয়ায় এই অভিযোগ তোলা হয়েছে ৷ পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করেনি ৷ আমি নিজে পুলিশকে ডেকেছি ৷" হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা এ বিষয়ে বলেন, "ঘটনার সময় আমি দোকানে ছিলাম ৷ হইচই শুনে আমি ঘটনাস্থলে যায় ৷ সেখানে গিয়ে জানতে পারি, এক মহিলা জাহাঙ্গির নামে এক ব্যক্তিকে চাকরির জন্য 16 লক্ষ টাকা দিয়েছেন ৷ উনি যদি টাকা নিয়ে থাকেন তবে তাঁকে টাকা ফেরত দিতে হবে ৷ আমরা ওই মহিলার পাশে রয়েছি ৷ জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, বিষয়টি তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক ৷ তৃণমূলের নাম করে অনেক দালাল টাকা তুলছে ৷ উনি তৃণমূলের লোক হলেও অপরাধ বরদাস্ত করা হবে না ৷ আইন আইনের পথে চলবে ৷"
ঘটনাপ্রসঙ্গে বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সহসভাপতি তাপস গুপ্ত বলেন, "সারা বাংলাজুড়ে এধরনের ঘটনা সামনে এসেছে ৷ তৃণমূল সুপ্রিমো থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী পর্যন্ত চোরের দায়ে দায়বদ্ধ ৷ হরিশ্চন্দ্রপুরে জয় হিন্দ বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক কারও নেতৃত্বে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন ৷ চাকরি না-পেয়ে যখন চাকরিপ্রার্থীরা টাকা ফেরত চাইতে যাচ্ছেন তখন তাঁদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে ৷ আগামিদিনে মানুষ কী করতে চলেছেন তার একটা উদাহরণ দিয়েছেন ওই মহিলা ৷" জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানান, এই ঘটনায় ওই মহিলা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ৷