ETV Bharat / state

কাল বোর্ড অফ কাউন্সিলর্সের সভা, ঝামেলার আশঙ্কা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণের

আগামীকালের বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স বৈঠককে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মনে করছেন কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভায় ঝামেলাও বাধতে পারে বলে মনে করছেন তিনি ৷

ইংরেজবাজার পৌরসভা
ইংরেজবাজার পৌরসভা
author img

By

Published : Dec 23, 2019, 10:02 PM IST

মালদা, ২৩ ডিসেম্বর : বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা ঘিরে আগামীকাল ঝামেলা বাধতে পারে ইংরেজবাজার পৌরসভায় ৷ আজ সে'রকম ইঙ্গিতই পাওয়া গেল পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জ ঘোষের কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির কথায় ৷ আগামীকালের বৈঠককে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মনে করছেন তিনি ৷ অভিযোগ, নিজের বেআইনি কাজকর্মগুলিকে স্বীকৃতি দিতেই চেয়ারম্যান এই বৈঠক ডেকেছেন ৷

প্রায় একবছর পর আগামীকাল ইংরেজবাজার পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স বৈঠক ৷ এই বৈঠক ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে কাউন্সিলরদের মধ্যে ৷ কৌতুহল রয়েছে পৌর নাগরিকদেরও ৷ কারণ, গত বছর বাজেট পেশ হওয়ার পর থেকে পৌরসভায় কোনও বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স (BOC) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি ৷ চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, "আগামীকালের বৈঠকের প্রথম এজেন্ডা হল, গত একবছর ধরে কাউন্সিলর ও জনগণের অনুরোধে যেসব কাজ করা হয়েছে সেসব অনুমোদন করানো ৷ কিছুদিনের মধ্যেই পৌরসভার কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷ BOC বৈঠক না হওয়ায় কাউন্সিলরদের যে কাজগুলি আটকে রয়েছে, আগামীকাল সেগুলি নিয়েও আলোচনা করা হবে ৷ গৃহ নির্মাণ, জল প্রকল্প, মিউটেশন সম্পর্কিত অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সেগুলির কাজ শুরু করা হয়নি ৷ এসব নিয়েও আগামীকাল আলোচনা হবে ৷"

আগামীকাল বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা ঘিরে ঝামেলার আশঙ্কা

সঙ্গে নীহাররঞ্জন ঘোষ আরও জানান, এর মধ্যে পৌরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছে ৷ কিন্তু কাউন্সিলরদের আপত্তির জন্যই BOC বৈঠক হয়নি ৷ আগামীকালের বৈঠকে 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকবেন না ৷ আইন মেনেই তাঁকে বৈঠকে ডাকা হয়নি ৷ সম্প্রতি নীহারবাবুর বিরুদ্ধে দলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলর অনাস্থা নিয়ে এসেছিলেন ৷ শোনা যাচ্ছে, আগামীকালের BOC বৈঠকে তাঁরা একাধিক প্রশ্ন তুলবেন ৷ এ'নিয়ে অবশ্য মোটেই চিন্তিত নন তিনি ৷ বলেন, "যারা প্রশ্ন তুলবেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নিয়ে যতক্ষণ না সরকারি নির্দেশিকা পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ BOC বৈঠক হবে না ৷ আর BOC-র দায়িত্ব শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের নয় ৷ এর দায়িত্ব বর্তায় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্যসহ অন্য কাউন্সিলরদের উপরেও ৷ নিজের ওয়ার্ডে কাজ করানোর দায়িত্ব কাউন্সিলররেই ৷ ফলে কোনও কাউন্সিলরই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না৷"

তবে আগামীকালের বৈঠকে যে ঝামেলা হতে পারে, তা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির বক্তব্যেই পরিষ্কার ৷ তিনি বলেন, "চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় পৌর আইনের 50 ধারায় মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছিলেন শ্রীযুক্ত ঘোষ ৷ শপথে তিনি সংবিধান মেনে চলার কথা বলেছিলেন ৷ 1993 সালের বেঙ্গল মিউনিসিপাল আইনের 51 ধারায় উল্লেখ রয়েছে প্রতি মাসে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা করতেই হবে ৷ সাব সেকশন 3-এ বলা আছে, পৌরসভার সমস্ত বিষয় নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে ৷ কিন্তু দেখা গেল, এসবের কিছুই বর্তমান পৌরপ্রধান করলেন না ৷ পৌর আইনের 82 ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর 10 মার্চের মধ্যে চেয়ারম্যানকে বাজেট পেশ করতে হবে ৷ এর দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে বাজেট আলোচনা করতে হবে ৷ এরপর সেই বাজেট BOC বৈঠকে অনুমোদন করাতে হবে ৷ কিন্তু এখানকার চেয়ারম্যান গত ডিসেম্বরে বৈঠক করেছিলেন, আগামীকাল ফের বৈঠক ডেকেছেন ৷"

বৈঠকের নোটিস অদ্ভুত বলেই মনে করছেন কৃষ্ণেন্দু ৷ বলেন, "নোটিসে 2018-19 সালের বাজেট বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে ৷ আর বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি মাসিক সভা পাশ করতে হবে ৷ যা আইনে কোথাও বলা নেই ৷ এই সভা তো কার্যত বাৎসরিক সভা হয়ে গেছে ৷ এই নোটিস পেয়ে আমিও বুঝতে পারিনি নতুন কোনও আইন প্রণয়ন হয়েছে কিনা ৷ আমি সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি নতুন কোনও আইন প্রণয়ন হয়নি ৷ আগামীকালের BOC বৈঠক নিয়ে যে নোটিস করা হয়েছে তা পুরোটাই ভাঁওতা ৷ নিজের দুর্নীতি ঢাকার জন্য এই নোটিশ বার করেছেন চেয়ারম্যান ৷ আগামীকাল আমরা বৈঠকে যাব ৷ আইনিভাবেই চেয়ারম্যানের কাছে জবাব চাইব ৷ তারপরও যদি বাজেট পাশ করানো হয়, তবে আমরা আদালতে যাব ৷"

অন্যদিকে, নীহারবাবুও আজ স্বীকার করেছেন, পৌরসভার অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী 21 ডিসেম্বর 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বর্ণালী কুণ্ডু হালদারকে 46 হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে ৷ কিন্তু এর জন্য 2018 সালের বাজেট বৈঠক অবৈধ বলে মানতে রাজি নন তিনি ৷ এ'বিষয়ে বর্ণালীদেবীর সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ৷

মালদা, ২৩ ডিসেম্বর : বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা ঘিরে আগামীকাল ঝামেলা বাধতে পারে ইংরেজবাজার পৌরসভায় ৷ আজ সে'রকম ইঙ্গিতই পাওয়া গেল পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জ ঘোষের কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির কথায় ৷ আগামীকালের বৈঠককে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মনে করছেন তিনি ৷ অভিযোগ, নিজের বেআইনি কাজকর্মগুলিকে স্বীকৃতি দিতেই চেয়ারম্যান এই বৈঠক ডেকেছেন ৷

প্রায় একবছর পর আগামীকাল ইংরেজবাজার পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স বৈঠক ৷ এই বৈঠক ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে কাউন্সিলরদের মধ্যে ৷ কৌতুহল রয়েছে পৌর নাগরিকদেরও ৷ কারণ, গত বছর বাজেট পেশ হওয়ার পর থেকে পৌরসভায় কোনও বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স (BOC) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি ৷ চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, "আগামীকালের বৈঠকের প্রথম এজেন্ডা হল, গত একবছর ধরে কাউন্সিলর ও জনগণের অনুরোধে যেসব কাজ করা হয়েছে সেসব অনুমোদন করানো ৷ কিছুদিনের মধ্যেই পৌরসভার কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷ BOC বৈঠক না হওয়ায় কাউন্সিলরদের যে কাজগুলি আটকে রয়েছে, আগামীকাল সেগুলি নিয়েও আলোচনা করা হবে ৷ গৃহ নির্মাণ, জল প্রকল্প, মিউটেশন সম্পর্কিত অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সেগুলির কাজ শুরু করা হয়নি ৷ এসব নিয়েও আগামীকাল আলোচনা হবে ৷"

আগামীকাল বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা ঘিরে ঝামেলার আশঙ্কা

সঙ্গে নীহাররঞ্জন ঘোষ আরও জানান, এর মধ্যে পৌরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছে ৷ কিন্তু কাউন্সিলরদের আপত্তির জন্যই BOC বৈঠক হয়নি ৷ আগামীকালের বৈঠকে 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকবেন না ৷ আইন মেনেই তাঁকে বৈঠকে ডাকা হয়নি ৷ সম্প্রতি নীহারবাবুর বিরুদ্ধে দলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলর অনাস্থা নিয়ে এসেছিলেন ৷ শোনা যাচ্ছে, আগামীকালের BOC বৈঠকে তাঁরা একাধিক প্রশ্ন তুলবেন ৷ এ'নিয়ে অবশ্য মোটেই চিন্তিত নন তিনি ৷ বলেন, "যারা প্রশ্ন তুলবেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নিয়ে যতক্ষণ না সরকারি নির্দেশিকা পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ BOC বৈঠক হবে না ৷ আর BOC-র দায়িত্ব শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের নয় ৷ এর দায়িত্ব বর্তায় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্যসহ অন্য কাউন্সিলরদের উপরেও ৷ নিজের ওয়ার্ডে কাজ করানোর দায়িত্ব কাউন্সিলররেই ৷ ফলে কোনও কাউন্সিলরই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না৷"

তবে আগামীকালের বৈঠকে যে ঝামেলা হতে পারে, তা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির বক্তব্যেই পরিষ্কার ৷ তিনি বলেন, "চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় পৌর আইনের 50 ধারায় মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছিলেন শ্রীযুক্ত ঘোষ ৷ শপথে তিনি সংবিধান মেনে চলার কথা বলেছিলেন ৷ 1993 সালের বেঙ্গল মিউনিসিপাল আইনের 51 ধারায় উল্লেখ রয়েছে প্রতি মাসে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা করতেই হবে ৷ সাব সেকশন 3-এ বলা আছে, পৌরসভার সমস্ত বিষয় নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে ৷ কিন্তু দেখা গেল, এসবের কিছুই বর্তমান পৌরপ্রধান করলেন না ৷ পৌর আইনের 82 ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর 10 মার্চের মধ্যে চেয়ারম্যানকে বাজেট পেশ করতে হবে ৷ এর দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে বাজেট আলোচনা করতে হবে ৷ এরপর সেই বাজেট BOC বৈঠকে অনুমোদন করাতে হবে ৷ কিন্তু এখানকার চেয়ারম্যান গত ডিসেম্বরে বৈঠক করেছিলেন, আগামীকাল ফের বৈঠক ডেকেছেন ৷"

বৈঠকের নোটিস অদ্ভুত বলেই মনে করছেন কৃষ্ণেন্দু ৷ বলেন, "নোটিসে 2018-19 সালের বাজেট বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে ৷ আর বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি মাসিক সভা পাশ করতে হবে ৷ যা আইনে কোথাও বলা নেই ৷ এই সভা তো কার্যত বাৎসরিক সভা হয়ে গেছে ৷ এই নোটিস পেয়ে আমিও বুঝতে পারিনি নতুন কোনও আইন প্রণয়ন হয়েছে কিনা ৷ আমি সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি নতুন কোনও আইন প্রণয়ন হয়নি ৷ আগামীকালের BOC বৈঠক নিয়ে যে নোটিস করা হয়েছে তা পুরোটাই ভাঁওতা ৷ নিজের দুর্নীতি ঢাকার জন্য এই নোটিশ বার করেছেন চেয়ারম্যান ৷ আগামীকাল আমরা বৈঠকে যাব ৷ আইনিভাবেই চেয়ারম্যানের কাছে জবাব চাইব ৷ তারপরও যদি বাজেট পাশ করানো হয়, তবে আমরা আদালতে যাব ৷"

অন্যদিকে, নীহারবাবুও আজ স্বীকার করেছেন, পৌরসভার অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী 21 ডিসেম্বর 23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বর্ণালী কুণ্ডু হালদারকে 46 হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে ৷ কিন্তু এর জন্য 2018 সালের বাজেট বৈঠক অবৈধ বলে মানতে রাজি নন তিনি ৷ এ'বিষয়ে বর্ণালীদেবীর সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি ৷

Intro:মালদা, ২৩ ডিসেম্বর : বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা ঘিরে আগামীকাল উত্তপ্ত হতে চলেছে ইংরেজবাজার পৌরসভা৷ আজ সেই ইঙ্গিত মিলেছে পৌরসভার চেয়ারম্যান, নীহাররঞ্জ ঘোষের কট্টর বিরোধী হিসাবে পরিচিত কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির কাছ থেকে৷ আগামীকালের বৈঠককে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু৷ তাঁর অভিযোগ, নিজের বেআইনি কাজকর্মগুলিকে স্বীকৃতি দিতেই চেয়ারম্যান এই বৈঠক ডেকেছেন৷ তেমন হলে তিনি এই বৈঠক নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন৷


Body:         প্রায় এক বছর পর আগামীকাল ইংরেজবাজার পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স বৈঠক৷ এই বৈঠক ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে কাউন্সিলরদের মধ্যে৷ কৌতুহল রয়েছে পৌর নাগরিকদেরও৷ কারণ, গত বছর বাজেট পেশ হওয়ার পর থেকে পৌরসভায় কোনও বিওসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “আগামীকালের বৈঠকের প্রথম এজেন্ডা হল, গত এক বছর ধরে কাউন্সিলর ও জনগণের অনুরোধে যেসব কাজ করা হয়েছে সেসব অনুমোদন করানো৷ কিছুদিনের মধ্যেই পৌরসভার কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ বিওসি বৈঠক না হওয়ায় কাউন্সিলরদের যে কাজগুলি আটকে রয়েছে, আগামীকাল সেগুলি নিয়েও আলোচনা করা হবে৷ গৃহ নির্মাণ, জল প্রকল্প, মিউটেশন সম্পর্কিত অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সেগুলির কাজ শুরু করা হয়নি৷ এসব নিয়েও আগামীকাল আলোচনা হবে৷ বিগত দিনে পৌরসভার বাজেট পেশ করার পরেই নির্বাচন ঘোষিত হয়ে যায়৷ ফলে বাজেট নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারিনি৷ নিয়ম হল, বাজেট পেশ করার পর আলোচনা সাপেক্ষে সেই বাজেট বিওসিতে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়৷ তাছাড়া ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নিয়েও একটা মতভেদ ছিল৷ তখন একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সরকারি নির্দেশিকা না পাওয়া গেলে বিওসি বৈঠক করা যাবে না৷ এসব কারণেই বিওসি বৈঠক এতদিন করা যায়নি৷ তবে সরকারি সেই নির্দেশিকা আমরা পেয়েছি৷ তাই আগামীকাল এই বৈঠক ডাকা হয়েছে৷” নীহারবাবু দাবি করেন, এর মধ্যে পৌরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছে৷ কিন্তু কাউন্সিলরদের আপত্তির জন্যই বিওসি বৈঠক হয়নি৷ আগামীকালের বৈঠকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকবেন না৷ আইন মেনেই তাঁকে বৈঠকে ডাকা হয়নি৷ সম্প্রতি নীহারবাবুর বিরুদ্ধে দলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলর অনাস্থা নিয়ে এসেছিলেন৷ শোনা যাচ্ছে, আগামীকালের বিওসি বৈঠকে তাঁরা বৈঠক নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করবেন৷ এনিয়ে অবশ্য মোটেই চিন্তিত নন নীহারবাবু৷ তিনি বলেন, “যাঁরা প্রশ্ন তুলবেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নিয়ে যতক্ষণ না সরকারি নির্দেশিকা পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ বিওসি বৈঠক হবে না৷ আর বিওসি’র দায়িত্ব শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের নয়৷ এর দায়িত্ব বর্তায় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সদস্য সহ অন্যান্য কাউন্সিলরদের উপরেও৷ নিজের ওয়ার্ডে কাজ করানোর দায়িত্ব কাউন্সিলররেই৷ ফলে কোনও কাউন্সিলরই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না৷”
         তবে আগামীকালের বৈঠক যে গরম হতে চলেছে তা নীহারবাবুর বিরোধী হিসাবে পরিচিত কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির বক্তব্যেই পরিষ্কার৷ তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভায় আছি৷ পৌরপ্রধানও ছিলাম৷ হৃদযন্ত্র অপারেশনের পরেও পৌরসভায় মাসিক সভা করেছি৷ আমি মন্ত্রী ছিলাম৷ বিধানসভায় জবাবি ভাষণের আগেও পৌরসভার বৈঠক করে গিয়েছি৷ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় পৌর আইনের ৫০ ধারায় মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছিলেন শ্রীযুক্ত ঘোষ৷ শপথে তিনি সংবিধান মেনে চলার কথা বলেছিলেন৷ ১৯৯৩ সালের বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল আইনের ৫১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে প্রতি মাসে বোর্ড অফ কাউন্সিলর্স সভা করতেই হবে৷ সাব সেকশন ৩-এ বলা আছে, পৌরসভার সমস্ত বিষয় নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে৷ কিন্তু দেখা গেল, এসবের কিছুই বর্তমান পৌরপ্রধান করলেন না৷ পৌর আইনের ৮২ ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ মার্চের মধ্যে চেয়ারম্যানকে বাজেট পেশ করতে হবে৷ এর দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে বাজেট আলোচনা করতে হবে৷ এরপর সেই বাজেট বিওসি বৈঠকে অনুমোদন করাতে হবে৷ কিন্তু এখানকার চেয়ারম্যান গত ডিসেম্বরে বৈঠক করেছিলেন, আগামীকাল ফের বৈঠক ডেকেছেন৷ বৈঠকের নোটিশটাও অদ্ভুত৷ সেখানে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বাজেট বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে৷ আর বলা হয়েছে বেশ কয়েকটি মাসিক সভা পাশ করতে হবে৷ যা আইনে কোথাও বলা নেই৷ এই সভা তো কার্যত বাৎসরিক সভা হয়ে গিয়েছে! এই নোটিশ পেয়ে আমিও বুঝতে পারিনি নতুন কোনও আইন প্রণয়ন হয়েছে কিনা৷ আমি সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি নতুন কোনও আইন প্রণয়ন হয়নি৷ ২০১৭ সালের ১৭ অগাস্ট ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বর্ণালি কুণ্ডু হালদারের কাউন্সিলর পদ বয়সের কারণে খারিজ হয়ে যায়৷ তিনি ২০১৮ সালের বাজেট বৈঠকে উপস্থিত হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ করি৷ কারণ, ওই কাউন্সিলর পৌরসভার বৈঠকে থাকতে পারেন না৷ কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করা সত্বেও বর্তমান চেয়ারম্যান বর্ণালিদেবীকে মাসিক ভাতা সহ সমস্ত সুযোগসুবিধে দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ অবশেষে গত পরশু পৌরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার চিঠি দিয়ে বর্ণালিদেবীকে ৪৬ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেছেন৷ অর্থাৎ ওই কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে যে বাজেট সভা হয়েছিল, তা অবৈধ ছিল৷ সেই বাজেট অনুমোদিত হতে পারে না৷ আর ২০১৯ সালে বাজেট পেশ হলেও তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি৷ ফলে এই বাজেটও অনুমোদিত হতে পারে না৷ আর দুটি বাজেট কীভাবে একসঙ্গে অনুমোদন পাবে? মাসিক বৈঠকও কখনও বার্ষিক হতে পারে না৷ তাই আগামীকালের বিওসি সভা নিয়ে যে নোটিশ করা হয়েছে তা পুরোটাই ভাঁওতা৷ নিজের দুর্নীতি ঢাকার জন্য এই নোটিশ বের করেছেন চেয়ারম্যান৷ আগামীকাল আমরা সভায় যাব৷ আইনিভাবেই চেয়ারম্যানের কাছে জবাব চাইব৷ তারপরেও যদি বাজেট পাশ করানো হয় তবে আমরা আদালতে যাব৷”


Conclusion:         এদিকে নীহারবাবুও আজ স্বীকার করে নিয়েছেন, পৌরসভার অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী গত পরশু ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বর্ণালী কুণ্ডু হালদারকে ৪৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু এর জন্য ২০১৮ সালের বাজেট বৈঠক অবৈধ বলে মানতে রাজি হননি তিনি৷ তিনি জানান, যা হওয়ার আগামীকালের সভাতেই হবে৷ তবে এদিন বর্ণালিদেবীর সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি৷ একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি৷
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.