মালদা, 12 জুন: শুধু তৃণমূল নয়, প্রার্থী নিয়ে কোন্দল বিজেপিতেও ৷ বরং আরও বড়সড় ৷ প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের কর্মীদের মতো বিক্ষোভ প্রদর্শন নয়, দলের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নই জমা দিতে চলেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-নেত্রীরা ৷ এঁদের মধ্যে রয়েছেন 12 জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও ৷ এ নিয়ে তীব্র শোরগোল পড়েছে পদ্ম শিবিরের অন্দরমহলে ৷ এতজন বিজেপি কর্মী নির্দল হিসাবে ভোটে দাঁড়ালে ভোটের ফলে যে তার প্রভাব পড়বেই, তা মেনেও নিচ্ছে নেতৃত্ব ৷ ড্যামেজ কন্ট্রোলের রাস্তা খুঁজছে তারা ৷
ঘটনাটি পুরাতন মালদার ৷ একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব সাহাপুর অঞ্চলের দলীয় নেতা নিতাই মণ্ডলকে কিছুদিন আগে দল থেকে বহিষ্কার করে ৷ কিন্তু ওই এলাকায় দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করার পিছনে নিতাইয়ের অবদান যে অনেকটাই রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের একংশ ৷ সেই নিতাই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর পুরোনো দলকে ঝটকা দিতে তৈরি ৷ সঙ্গী পেয়েছেন সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন দলীয় প্রধান উকিল মণ্ডলকে ৷ এই দু'জনের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই বিজেপির 12 জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নির্দল প্রার্থী হিসাবে ডিসিআর কেটেছেন ৷ ডিসিআর হল ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপট, যা মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে কাউন্টার থেকে কাটতে হয় ৷
আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন বগটুইয়ের স্বজনহারা পরিবারের 3 সদস্য
তবে শুধু গ্রাম পঞ্চায়েত আসনেই নয়, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনেও তাঁরা নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাতে চলেছেন বলে হুঙ্কার দিয়েছেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরের দুই সেনাপতি ৷ উকিল বলেন, "বর্তমানে যাঁরা বিজেপির নেতৃত্ব রয়েছেন, বুথ থেকে জেলা সভাপতি, তাঁদের ভূমিকা খুব নিম্নরুচির হয়ে গিয়েছে ৷ যাঁরা দলের পুরোনো কর্মী, তাঁদের থেকে তৃণমূল থেকে আসা লোকজনকে প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়েছে ৷
তিনি আরও বলেন, "সাহাপুরের বিজেপির বুথ সভাপতি সুভাষ মণ্ডল এখন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান অনেক ঘোষের সঙ্গে যোগসাজশ করে এখানে দলকে শেষ করে দেওয়ার খেলায় নেমেছেন ৷ এসবের প্রতিবাদে 11 জন পঞ্চায়েত সদস্য এবং আমি প্রধান হিসাবে গতকাল নির্দল প্রার্থী হিসাবে ডিসিআর কেটেছি ৷ সাহাপুরের 30টি বুথেই আমরা নির্দল প্রার্থী দেব ৷ মঙ্গলবাড়ি ও মুচিয়া অঞ্চলেও আমাদের প্রার্থী থাকবে ৷ আমরা মানুষের কাজ করেছি ৷ তাই আমাদের আশা রয়েছে, আমরা মানুষের সমর্থন পাব ৷ আমরা পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনেও নির্দল প্রার্থী দেব ৷"
বহিষ্কৃত বিজেপি নেতা নিতাই মণ্ডলের বক্তব্য, তাঁরা শনিবার থেকেই ডিসিআর কাটতে শুরু করেছেন ৷ বহিষ্কৃত হলেও তিনি অন্তর দিয়ে বিজেপি করেন ৷ সেটা জেলা নেতৃত্বও ভালো করে জানে ৷ তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে তিনি দজাবি করেন ৷ নিতাই জানান, তার জন্য তিনি অন্য দলে যাবেন না ৷ তিনি নিজেকে আসল বিজেপি বলে মনে করেন ৷ তাঁর লড়াই মুখোশধারী, তৃণমূলের দালাল বিজেপির সঙ্গে ৷
তিনি বলেন, "এবার মালদা বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার প্রায় সব অঞ্চলেই আসল আর মুখোশধারী বিজেপির মধ্যে লড়াই হবে ৷ পঞ্চায়েত সমিতির 13 নম্বর আসনে নির্দল হিসাবে আমি নিজে ডিসিআর কেটেছি ৷ আমার স্ত্রী 34 নম্বর জেলা পরিষদ আসনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ডিসিআর কেটেছে ৷ বিজেপির নির্বাচিত বহু গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও নির্দল হিসাবে ডিসিআর কেটেছেন ৷ সাহাপুর অঞ্চল দখল করা এবার আমার চ্যালেঞ্জ ৷"
আরও পড়ুন: বিডিও অফিসে মনোনয়ন পেশ পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন সুকান্ত
বিষয়টি যে গুরুতর, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার-সহ সভাপতি তাপস গুপ্ত ৷ তিনি বলেন, "ঘটনাটি আমরাও লক্ষ্য করেছি ৷ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন যথেষ্ট শক্ত হতে চলেছে ৷ এই অবস্থায় বিজেপি মনোভাবাসম্পন্ন কেউ যদি নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তবে ভোট ভাগাভাগি যে হবে, সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই ৷ এতে অবশ্যই দলের ক্ষতি হবে ৷ আমরা দলীয় স্তরে এনিয়ে আলোচনা করছি ৷ আশা করছি, এই সমস্যার দ্রুত সুরাহা হবে এবং আমরা পুরাতন মালদার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রতিটি আসন আমরাই দখল করব ৷ আমাদের সামান্য ভুলের জন্য দলের ক্ষতি হওয়া মোটেই কাম্য নয় ৷ তাই আমার আশা, শেষ মুহূর্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ৷"