মালদা, 25 এপ্রিল : সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারে বাসি খাবার! এই অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷ অভিযোগ, বাসি খাবারের প্রতিবাদ করায় সেন্টারে থাকা শ্রমিকদের মারধরও করা হয় ৷ এই ঘটনায় প্রশাসনের দিকে অভিযোগের তির ছুড়েছে সেখানে থাকা ভিন জায়গার শ্রমিকরা ৷ যদিও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দাবি, পলিপ্যাকে খাবার দেওয়ার জন্য এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল ৷ আজ থেকে সেন্টারে থাকা সবাইকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে খাবার দেওয়া হবে ৷
কোরোনার সংক্রমণ রুখতে চলছে লকডাউন ৷ প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লকডাউনে ভিনরাজ্যে এই মুহূর্তে আটকে রয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার শ্রমিক ৷ তাঁদের অনেকে আবার বিভিন্ন উপায়ে জেলায় ফিরেও আসছেন ৷ তাঁদের জন্য জেলার প্রতিটি ব্লকে কোয়ারানটিন সেন্টার খুলেছে প্রশাসন ৷ এই শ্রমিকদের অনেকে নিজে থেকেই সরকারি নির্দেশিকা মেনে হাজির হচ্ছেন সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারে ৷ অনেক সময় আবার গ্রামবাসীরাই ঘরে ফেরা অনিচ্ছুক শ্রমিকদের হাজির করছেন এই সমস্ত সেন্টারে ৷ প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক 14 দিন সেখানে কাটাতে হচ্ছে ৷ তাঁদের খাবারের দায়িত্বও প্রশাসনের ৷ চারবেলা দেওয়া হচ্ছে খাবার ৷ গতকাল রাতে সেই খাবার নিয়েই তীব্র গোলমাল শুরু হয় হরিশ্চন্দ্রপুর ITI-এ তৈরি কোয়ারানটিন সেন্টারে ৷ সেখানে রয়েছে প্রায় 50 জন শ্রমিক ৷ তাঁদের অভিযোগ, রাতে সেখানে দেওয়া হয়েছে বাসি খাবার ৷
সেন্টারে থাকা এক শ্রমিক রঞ্জিত গোস্বামী বলেন, “দিনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে রাতে ডিম-ভাত দেওয়া হয়েছিল ৷ খাবার থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল ৷ যাঁরা খাবার দিতে এসেছিলেন , আমরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তাঁদের জানাই ৷ তাঁরা আমাদের খাবার খেয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন ৷ কিন্তু সেই খাবার আমরা খেতে পারিনি ৷ ফেলে দিই ৷ তখনই ওই খাবার সরবরাহকারীরা আমাদের একজনকে বেধড়ক মারধর করেন ৷ তাঁরা চারজন ছিলেন ৷ প্রত্যেকেই মত্ত অবস্থায় খাবার দিতে এসেছিলেন ৷ আমরা এরই প্রতিবাদ জানিয়েছি৷”
আরেক শ্রমিক মহম্মদ নৌসাদ বলেন, “কোয়ারানটিন সেন্টারে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন৷ কিন্তু এখানে সেসব কিছুই মানা হচ্ছে না ৷ এখানে ঘুমানোরও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ মেইন গেট দিয়ে লোক ঢুকিয়ে শুধু তালা মেরে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমার বাড়ি বিহারের আজমনগরে ৷ বাড়ির লোক আসতে পারছেন না ৷ অনেক কিছুরই প্রয়োজন পড়ে ৷ কিন্তু কোনও প্রয়োজনে কাউকে ডাকলেও কেউ সাড়া দেন না ৷ দুপুরের খাবার রাতে দেওয়া হচ্ছে ৷ খাবার থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে ৷ সিদ্ধ না হওয়া সবজি দেওয়া হচ্ছে ৷ কী খেয়ে বাঁচব ? আমি পাঁচদিন ধরে এখানে রয়েছি ৷ বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটাব?”
রঞ্জিৎ মণ্ডল নামে এক শ্রমিক বলেন, “দুর্গন্ধযুক্ত খাবার না খেতে পেরে ফেলে দিয়েছিলাম ৷ তখনই মেইন গেটের তালা খুলে খাবার সরবরাহকারীরা আমাকে বাইরে টেনে নিয়ে যান ৷ তাঁরা সবাই মত্ত ছিলেন ৷ আমাকে মারতে শুরু করেন ৷ সেই দৃশ্য দেখে সবাই চিৎকার শুরু করলে তাঁরা আমাকে ফের তালা খুলে ভিতরে ঢুকিয়ে দেন ৷ আমরা শুধু একটু ভালো খাবার চাই ৷ আর কিছু চাই না ৷”
এই প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর ১-এর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ বসু বলেন, “গতকাল রাতে কোয়ারানটিন সেন্টারে গোলমালের খবর পেয়েছিলাম ৷ খোঁজ নিয়ে দেখেছি, খাবারকে কেন্দ্র করে সেই গোলমাল ৷ সাধারণত সেন্টারে থাকা শ্রমিকদের পলিপ্যাকে খাবার দেওয়া হয় ৷ তাতেই খাবারে একটু গন্ধ হয়েছিল ৷ আজ থেকে শ্রমিকদের অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে খাবার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ ফলে আর এই নিয়ে সমস্যা হবে না বলেই মনে হয় ৷ আর সেন্টারে থাকা শ্রমিককে মারধরের যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি ৷”