মালদা, 26 জুন : বর্ষা শুরু হতে না হতেই ভয়াল রূপ দেখাতে শুরু করল গঙ্গা । মালদার দু'টি ব্লকে শুরু হয়েছে গঙ্গার ভাঙন । মানিকচক ও কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকে পাড় ভাঙছে গঙ্গা । পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সেচ বিভাগ । মানিকচকে ভাঙন রোধের কাজও শুরু হয়েছে । তবে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকে সাতটি বাড়ি ইতিমধ্যেই নদীতে মিশে গিয়েছে ।
গতবছর গঙ্গার ভয়াল রূপ দেখেছিল কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লক । ভাঙনে নদীতে তলিয়ে গিয়েছিল বীরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনাবাজার ও দুর্গারামটোলা গ্রামের শ’খানেক পাকা বাড়ি । পরবর্তীতে গৃহহীনদের অনেককে মাথা গোঁজার জন্য সরকারি জমির পাট্টা দেওয়া হলেও এখনও বেশ কিছু মানুষ গঙ্গাপাড়েই অস্থায়ী আস্তানা বানিয়ে দিন কাটাচ্ছেন । এরই মধ্যে গতকাল ওই এলাকার লালুটোলা গ্রামের নদীপাড়ে শুরু হয় ভাঙন । সাতটি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মানস মণ্ডল । তিনি বলেন, “গতকাল সকাল থেকে ভাঙন শুরু হয় । খবর পেয়েই এলাকায় আসেন প্রশাসনের প্রতিনিধিরা । যাঁদের বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে, তাঁরা যাতে মাথা গোঁজার আশ্রয় পান, তার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি ।”
গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে মানিকচক ব্লকের ভূতনিতেও । হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোশিঘাট এলাকায় পাড় ভাঙছে নদী । এই এলাকা দিয়েই গঙ্গা মালদা জেলায় প্রবেশ করেছে । এখানে রয়েছে গঙ্গার শাখানদী কোশি । দুই নদীর সঙ্গম এলাকাতেই শুরু হয়েছে ভাঙন । এখনও পর্যন্ত প্রায় 100 মিটার এলাকা জুড়ে 15 মিটার চওড়া পাড় নদীতে তলিয়ে গিয়েছে । প্রতিদিনই 20-25 মিটার পাড় চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে । তবে এখানে কোনও বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়েনি । দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে নিয়োগ করা হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের । এই মুহূর্তে নদীপাড় থেকে বাঁধের দূরত্ব মাত্র 100 মিটার বলে দাবি গ্রামবাসীদের । দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না হলে বাঁধের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : গঙ্গাভাঙনে ছাদ হারিয়েছেন; ভোটের আগে কী চাইছেন চিনাবাজারের গৃহহীনরা ?
স্থানীয় বাসিন্দা পবন মণ্ডল বলেন, “মূলত গঙ্গার জলেই কোশি নদী পুষ্ট । কয়েকদিন ধরে জল বাড়ার পর কোশির জল কমতে শুরু করে । এতেই নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে । 10-12টি বুথ এলাকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে । কোনও কারণে বাঁধ ভেঙে গেলে 10-12টি গ্রাম নদীগর্ভে চলে যেতে পারে । ভাঙন রোধ নিয়ে এখনও কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না । আগে এমন ভাঙন আমরা দেখিনি । এবারই ভাঙনের তীব্রতা বেশি ।”
এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য ডলিরানি মণ্ডলের স্বামী দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, “গতবারও কোশিঘাটে ভাঙন হয়েছিল । তা নিয়ে মানুষ আতঙ্কে ছিল । ভাঙন রোধের কাজও শুরু হয়েছে । কিন্তু তারই মধ্যে গতকাল থেকে সেখানে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে । প্রায় 200 মিটার এলাকা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে । ভূতনির মানুষকে বাঁচাতে আমরা এখানেও দ্রুত ভাঙন রোধের কাজ শুরু করার আর্জি জানাচ্ছি ।”
আরও পড়ুন : মুর্শিদাবাদে ফের গঙ্গাভাঙন, নদীগর্ভে 7টি বাড়ি
মালদার সেচ বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত জানিয়েছেন, কোশিঘাট সংলগ্ন নন্দীটোলায় প্রায় 500 মিটার এলাকায় ভাঙন রোধের কাজ শুরু হয়েছে । আপাতত মাটি ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা চলছে । কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের লালুটোলাতেও গঙ্গা পাড় ভাঙছে । তবে ওই এলাকায় ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের । যদিও সেচ বিভাগ লালুটোলার উপরেও নজর রেখেছে ।