মালদা, 22 মার্চ: চাষবাস করে সংসার চলছিল খলিলুর রহমান ৷ অভাবের সংসারে হঠাৎ যেন লটারি পেলেন তিনি ৷ গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তাঁর বাড়ি এসে জানালেন, তাঁর পড়ে থাকা জমিতে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কলাবাগান করে দেওয়া হবে ৷ এর জন্য ওই জমির সরকারি কাগজপত্র প্রয়োজন ৷ সেই কাগজ পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন খলিলুর রহমান ৷ এরপর জমিতে কলাবাগান হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন তিনি ৷ কিন্তু জমিতে কলাগাছের চারা আর বসে না ৷ মাস চারেক অপেক্ষার পর তিনি পঞ্চায়েতে খোঁজ নিতে যান ৷ প্রথমে কিছু জানতে পারনেননি ৷ পরে আসল ঘটনা জেনে হতভম্ব হয়ে যান ৷ তাঁর ওই জমিতে নাকি ইতিমধ্যে কলাগাছ বেড়ে উঠেছে ৷ বাগান তৈরিতে খরচ হয়েছে 3 লক্ষ 22 হাজার 361 টাকা ৷ সেই টাকা সরকারি কোষাগার থেকে তুলেও নেওয়া হয়েছে (Villagers alleges against Ratua TMC Gram Panchayat over misappropriation of one crore in two booths) ৷
খলিলুর রহমান রতুয়া 1 ব্লকের রতুয়া গ্রামপঞ্চায়েতের ভালুয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ৷ তাঁর মতো গ্রামের আরও অনেকের জমির নথি ব্যবহার করে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত বোর্ড সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ ৷ বিষয়টি জানতে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন জানিয়েছিলেন এলাকার এক সিপিএম নেতা ৷ প্রশাসনের কাছ থেকে তিনি সেই সব নথিপত্র পেয়েও যান ৷ শুধু কলাবাগান নয়, পুকুর খনন, বনসৃজন থেকে শুরু করে নদীভাঙন রোধে, ভিটিভার প্রজাতির ঘাস লাগানোর ক্ষেত্রেও ওই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ নাকি ব্যাপক দুর্নীতি করেছে ৷ মাত্র দু'টি বুথে দুর্নীতির পরিমাণ 1 কোটি 27 লক্ষ টাকা বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের ৷
রতুয়া গ্রামপঞ্চায়েতের জাননগর বুথের সিপিএমের সভাপতি ওমর ফারুকের বক্তব্য, "2018 থেকে 2022 সাল পর্যন্ত পঞ্চায়েতের কাজের খতিয়ান দেখতে আমি তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন জানাই ৷ সেই নথিতে দেখা যাচ্ছে, হর্টিকালচার, পুকুর খনন, ভিটিভার প্ল্যান্টেশন-সহ একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতির পাহাড় ৷ কোনও কাজ না-করেই বিল পাশ করে দেওয়া হয়েছে ৷ দু'টি বুথেই দুর্নীতির পরিমাণ সওয়া কোটি টাকারও বেশি ৷ এনিয়ে আমি বিডিও, এসডিও, জেলাশাসক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, কমিশনার-সহ সব জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি ৷ আমরা আর চারদিন দেখব ৷ তার মধ্যে এনিয়ে তদন্ত শুরু না হলে কলকাতা হাইকোর্ট, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব ৷ সব তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে ৷"
ভালুয়ারা গ্রামের বাসিন্দা মান্নিউর ইসলাম বলেন, "পঞ্চায়েত সদস্য বাড়ি এসে বলেছিলেন, আমার জমিতে কলাবাগান করে দেবেন ৷ আমার জমিতে পুকুর তৈরি করবেন ৷ এসব বলে জমির কাগজপত্র নিয়ে যান ৷ কিন্তু আমার জমিতে কিছুই হয়নি ৷ অথচ সেসব কাজের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে ৷" ওই গ্রামেরই খলিলুর রহমান বলেন, "কলাবাগান করার কথা বলে আমার কাছ থেকেও জমির কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য ৷ কিন্তু বাগান তৈরি না-হলেও সেই কাজের বিল পাশ হয়ে গিয়েছে ৷" এবিষয়ে রতুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লাকিনুর বিবির বক্তব্য, "আমি বছর দেড়েক আগে প্রধান পদের দায়িত্ব নিয়েছি ৷ আমার সময়কালে পঞ্চায়েতের কোনও কাজে কোনও দুর্নীতি হয়নি ৷ পূর্বতন প্রধানের আমলে কী হয়েছে, তার দায় আমার নয় ৷ এনিয়ে যে কেউ আদালতে যেতে পারে ৷" যদিও ওই পঞ্চায়েতের পূর্বতন তৃণমূল প্রধান আলমগীর রেজা চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি ৷
আরও পড়ুন: সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ, সমস্যায় বিশেষভাবে সক্ষম যুবক