মালদা, 11 মে : ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বিধ্বস্ত উত্তর মালদা ৷ গতকাল রাতে ঝড় বৃষ্টির সঙ্গে শিলা বৃষ্টিতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ নষ্ট হয়েছে প্রচুর আম ৷ ভেঙে গিয়েছে অসংখ্য কাঁচা বাড়ি ৷ বৃষ্টি আজও চলছে ৷ আর এতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের ৷ আজ সকাল থেকে দুর্গত এলাকাগুলি পরিদর্শন করছেন মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সি ৷ আগামীকাল এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে চাষের ব্যাপক ক্ষতির কথা স্বীকার করলেও এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিতে পারেনি কৃষি দফতর ৷ আমে ক্ষতির পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি উদ্যানপালন বিভাগের তরফেও ৷
গতকাল রাত আটটা নাগাদ চাঁচল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায় ৷ সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি ৷ কয়েক ঘণ্টা শিলাবৃষ্টিও হয় ৷ এতে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ও 2, চাঁচল 1 ও 2, রতুয়া 2, গাজোল ও বামনগোলা ব্লকে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় ৷ মাঠে থাকা বোরো ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ পাটগাছের মাথা ভেঙে গিয়েছে ৷ ক্ষতি হয়েছে ভুট্টা চাষে ৷ মাখনা চাষও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ প্রচুর আম গাছ থেকে ঝরে পড়েছে ৷ উড়ে গিয়েছে অসংখ্য বাড়ির চালা ৷
আজ মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সি তাঁর সংসদীয় এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, "গতকালের প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাঁচল 2 নম্বর ব্লকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ বোরো ধান গাছ থেকে ঝরে গিয়েছে ৷ আম চাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ প্রচুর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে ৷ গরীব মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে ৷ করোনা মহামারীর মধ্যে এই দুর্যোগ ৷ সরকার দুর্গত মানুষের পাশে রয়েছে ৷" আজ কলকাতা থেকে ফিরে চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, "চাঁচল কৃষিভিত্তিক এলাকা ৷ প্রায় 90 শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল ৷ গতকাল রাতে দুর্যোগের খবর পেয়েই আমি চাঁচলের মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলি ৷ দুর্যোগে যাঁদের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের সবাইকে স্থানীয় কৃষি দফতরকে ক্ষতির তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে ৷ বিষয়টি নিয়ে আমি কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব ৷ দুর্গত মানুষকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার সব ব্যবস্থা করা হবে ৷"
আরও পড়ুন : ভিজল কলকাতা, আকাশ কালো করে নামল বৃষ্টি
জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা স্নেহাশিস কুইলা বলেন, "গতকাল রাত থেকে চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, গাজোল, বামনগোলার বিভিন্ন এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে ৷ তাতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ ক্ষতি হয়েছে পাট, ভুট্টা সহ অন্যান্য ফসলেরও ৷ তবে এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট আমাদের কাছে আসেনি ৷ আশা করছি, সন্ধের মধ্যে সেই রিপোর্ট চলে আসবে ৷ এই জেলায় প্রায় 65 হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয় ৷ এরপর ফের যদি শিলা পড়ে তাতে ধানের আরও ক্ষতি হবে ৷" জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু নন্দনের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ায় আমচাষে ক্ষতির পরিসংখ্যান জানতে পারা যায়নি ৷
হরিশ্চন্দ্রপুরের পাটচাষি মহম্মদ সামু বলেন, "গতকাল রাতের কালবৈশাখীতে ঝড়ের সঙ্গে ব্যাপক শিলা পড়েছে ৷ এতে আমাদের পাকা ধান ও পাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ করোনার প্রকোপের মধ্যে অনেক চাষি কাজ হারিয়েছেন ৷ ঋণ নিয়ে সবাই ধান ও পাট চাষ করেছিল ৷ এখন চাষিরা কীভাবে বাঁচবে জানি না ৷ সরকার সহায়তা করলে আমরা বাঁচতে পারব ৷" একই বক্তব্য হরিশ্চন্দ্রপুরের শাহানাজ বিবি, মালতিপুরের আইনাল হকেদের মতো কৃষকদেরও ৷