মালদা, 9 নভেম্বর : সাফাইকর্মীদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ ৷ উত্তপ্ত হয়ে উঠল জেলা প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন এলাকা ৷ ঘটনার পর ক্ষিপ্ত সাফাইকর্মীরা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভ করে ৷ পরে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেয় তাঁরা ৷ এদিকে সাফাইকর্মীদের আন্দোলনে আজ মালদার হাসপাতাল, সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় সাফাইয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে ৷
উল্লেখ্য, মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ছাঁটাই হওয়া 42 জন সাফাইকর্মীর পুনর্নিয়োগের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন সাফাইকর্মীরা ৷ নর্থবেঙ্গল বাঁশফোর অ্যান্ড হরিজন ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজ়েশনের ব্যানারে চলছে আন্দোলন ৷ গত পরশু সংগঠনের মালদা জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ ডোম জানান, 3 অক্টোবর মালদা মেডিকেলের 42 জন অস্থায়ী সাফাইকর্মীকে ছাঁটাই করা হয় ৷ ওই কর্মীদের পুনর্নিয়োগের জন্য তাঁরা মেডিকেলের সহকারী অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তাঁকে ডেপুটেশনও দেওয়া হয় ৷ তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন ৷ 9 অক্টোবর তিনি ফের একই আশ্বাস দেন ৷ সেদিনই নিজেদের দাবিতে মেডিকেলে কর্মবিরতি শুরু করেন সাফাইকর্মীরা ৷ যদিও পুলিশের আবেদনে কর্মবিরতি তুলেও নেন ৷ 10 অক্টোবর ফের এই বিষয়ে জেলাশাসক ও MSVP-কে চিঠি দেন সাফাইকর্মীরা ৷ তখনই তাঁরা জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হলে 17 অক্টোবর ধর্মঘট করা হব ৷ এর মধ্যে গত 14 অক্টোবর জেলাশাসক চিঠি দিয়ে জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে ৷ ৩ নভেম্বর সাফাই কর্মীরা ফের জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে বিষয়টি কতদূর এগোল জানতে চায় ৷ সেই চিঠিতে তাঁরা জানায়, সাতদিনের মধ্যে এই বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে 9 নভেম্বর থেকে জেলাজুড়ে কর্মবিরতি শুরু করতে বাধ্য হবে তাঁরা ৷ শুধু মালদা মেডিকেল নয়, জেলার প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পৌর এলাকা, এমনকী শ্মশানেও কর্মবিরতি চলবে ৷ নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবনের অদূরে টাউন হলের সামনে জমায়েত হন সাফাইকর্মীরা ৷ সেই সময় সেখান দিয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার জঞ্জাল ফেলার কয়েকটি ট্র্যাক্টর যাচ্ছিল ৷ অভিযোগ, ওই ট্র্যাক্টরগুলিকে যেতে বাধা দেন আন্দোলনরত সাফাইকর্মীরা ৷ যদিও পৌরসভার সাফাইকর্মী ও ট্র্যাক্টরচালকরা কাজ করতে চাইছিলেন ৷ এরপর দু’পক্ষের বচসা বাধে ৷ যা তীব্র আকার ধারন করে ৷ খবর পেয়ে ইংরেজবাজার থানার IC মদনমোহন রায়ের নেতৃত্বে ঘটনাস্থানে আসে পুলিশবাহিনী ৷ পুলিশকর্মীরা প্রথমে আন্দোলনরত সাফাইকর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন ৷ তাতে কাজ না হওয়ায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ ৷
সাফাইকর্মীদের সংগঠনের জেলা সভাপতি লবকুমার মল্লিক বলেন, “আমরা আজ শান্তিপূর্ণভাবেই টাউন হলের সামনে আন্দোলন চালাচ্ছিলাম ৷ মহিলা আন্দোলনকারীও ছিলেন ৷ সেই সময় সেখান দিয়ে পৌরসভার সাফাইয়ের গাড়িগুলি বেরোচ্ছিল ৷ আমরা সেই গাড়িগুলি আটকেছিলাম ৷ মহিলারা গাড়ি যেতে দেবেন না বলে রাস্তায় বসে পড়েন ৷ দুঃখের বিষয়, সেই সময় পুলিশ আমাদের মহিলা সদস্যাদের ওপর লাঠিচার্জ করে ৷ আমাদের সংগঠনের জেলা সম্পাদককে আটক করা হয় ৷ পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ আমাদের মূল দাবি, মেডিকেলে ছাঁটাই হওয়া 42 জন অস্থায়ী সাফাইকর্মীকে পুনর্নিয়োগ করতে হবে ৷ আরও 10 দফা দাবি রয়েছে ৷ "
লবকুমার মল্লিক আরও জানান, "পুলিশের লাঠিচার্জে 10-12 জন আহত হয়েছে ৷ একজন হাসপাতালে ভরতি রয়েছে ৷ সমস্ত কিছু জানিয়ে আজ জেলাশাসককে ডেপুটেশন দিচ্ছি ৷”