মালদা, 17 জুলাই: ভোট পর্ব মিটেছে ছ'দিন আগে ৷ আতঙ্ক এখনও কাটছে না গ্রামবাসীদের ৷ তাঁদের অভিযোগ, একদিকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলা ৷ অন্যদিকে খাকি উর্দির সন্ত্রাসে তাঁরা শান্তিতে থাকতে পারছেন না ৷ গ্রামবাসীদের দাবি, মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ গ্রামের 57 জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ৷ শাসকদলের হামলার ঘটনায় গ্রামের মহিলারা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ তাঁদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেনি ৷ এমনটাও অভিযোগ উঠেছে ৷ ভয়ে গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার মহিষবাথানি পঞ্চায়েতের খুনিবাথান গ্রামে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে শাসকদলের সঙ্গে পুলিশকে বিঁধেছেন এলাকার বিজেপি বিধায়ক ৷ যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ৷ অবশ্য এ নিয়ে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷
গ্রামের এক বধূ রামকুমারী চৌধুরী বলছেন, "এই গ্রামে প্রায় সাতশো মানুষ ৷ সবাই তৃণমূল আর পুলিশের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ৷ ভয়ে কেউ খাবারটুকু খেতে পারছে না ৷ প্রায় প্রতিটি বাড়ির পুরুষ ঘরছাড়া ৷ সবার নামে পুলিশ মামলা দিয়েছে ৷ তৃণমূলের গুণ্ডারা সবাইকে বোমাবাজি, গলা কেটে খুন করার হুমকি দিচ্ছে ৷ কাউকে বলছে, ঘরের লোকের মুণ্ডু কেটে আঁচলে দিয়ে দেব, আবার কাউকে বলছে, কাটা মুণ্ডু কোলে রেখে দেব ৷ এরা সবাই তৃণমূলের ৷ গ্রামের 57 জন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে ৷ ওরা আমার দুটো সাবমার্সিবল পাম্প ভাঙচুর করেছে ৷ মহিলাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছে ৷"
আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীর পুকুরে বিষ, ভেসে উঠল মরা মাছ ! কাঠগড়ায় তৃণমূল
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুনিবাথান গ্রামের বুথে জয়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভোটের আগেই শাসকদল বুঝে ফেলেছিল, এই এলাকায় তারা সুবিধে করতে পারবে না ৷ তাই তখন থেকে তারা গ্রামে সন্ত্রাস চালাতে শুরু করে ৷ গণনাপর্ব মিটলে তাদের সন্ত্রাস আরও বেড়ে যায় ৷ গ্রামের আরেক বধূ অষ্টমী মণ্ডলের কথায়, এই গ্রামের একজন আগে তৃণমূল করত ৷ এবার তারা সবাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে ৷ ভোটের আগে ওরা আমাদের সঙ্গে ঘুরছিল ৷ তা জানতে পেরে তৃণমূলের গুণ্ডারা ওদের বাড়ি ভাঙচুর করে ৷ ভোটের পর তৃণমূলের গুণ্ডারা এই পরিবারটিকে দিয়ে আমাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য করে ৷ তারপর থেকেই ওদের অত্যাচারে আমরা গ্রামে থাকতে পারছি না ৷ পুলিশ আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়েছে ৷ মালদা থানার পুলিশ 57 জনের নামে ধর্ষণের মামলা দিয়েছে ৷
এ নিয়ে এলাকার বিজেপি বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহার দাবি, "ভোটের আগে থেকেই খুনিবাথান গ্রামে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে ৷ ওরা ভেবেছিল, সন্ত্রাস করে জিতে যাবে ৷ পুলিশকে দিয়ে গ্রামবাসীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেতার ষড়যন্ত্র করেছিল ৷ আমরা এ নিয়ে পুলিশকে অনেকবার অভিযোগ করেছি ৷ কিন্তু পুলিশ তৃণমূলের দলদাস ৷ তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ ওখানে আমাদের কার্যকর্তা সুবোধ মণ্ডলকে তৃণমূলের গুণ্ডারা মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে ৷ তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ ওখানে বিজেপির লোকজনের উপর হামলা হচ্ছে ৷ অথচ পুলিশ আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করছে ৷ পুলিশ গ্রামের মহিলাদের অভিযোগপত্র নিতেও অস্বীকার করছে ৷ আমরা কোথায় বাস করছি?"
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ, পার্টি অফিসে ঠাঁই 500 ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীর
যদিও তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি শুভময় বসুর বক্তব্য, প্রশাসন সব জায়গাতেই কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ৷ এবার মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৷ তৃণমূল পায়নি ৷ তাই সেখানে তৃণমূল গোলমাল করছে, মানুষকে বাড়িছাড়া করছে, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ৷ গোটা বাংলায় পর্যদুস্ত হয়ে বিজেপি এখন এসব অভিযোগ করে বাজার গরম করার চেষ্টা করছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে যেখানেই গোলমাল করুক না কেন দলমত নির্বিশেষে সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে ৷