মালদা, 20 মে : আগামী 1 জুন থেকে রাজ্যে নিষিদ্ধ হচ্ছে 51 মাইক্রনের নীচে থাকা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের সেই নির্দেশিকা প্রতিটি জেলার জেলাশাসকের হাতে পৌঁছে গিয়েছে। নির্দেশিকা এসেছে মালদার জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্রের কাছেও। নির্দেশিকা পেয়েই তিনি জেলার বণিকসভা ও দুই পৌরসভার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিষয়টি কানে গিয়েছে এ ধরনের ক্যারিব্যাগ ব্যবসায়ীদের কানেও। সরকারি নির্দেশিকায় এখন ঘুম উড়েছে তাঁদের (Plastic carrybags below 51 microns cannot be used in bengal) ।
কারণ, তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই কয়েক লাখ টাকার পাতলা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মজুত রয়েছে। হাতে রয়েছে আর মাত্র কয়েকটি দিন। এই সময়ের মধ্যে মজুত ক্যারিব্যাগ যে কিছুতেই বিক্রি করা যাবে না, তা নিয়ে তাঁদের কোনও সন্দেহ নেই।
সরকারের কাছে তাঁদের আর্জি, মজুত থাকা ক্যারিব্যাগ বিক্রির জন্য তাঁদের মাস দু'য়েক সময় দেওয়া হোক। একইসঙ্গে এ ধরনের ক্যারিব্যাগের উৎপাদন বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। ভিনরাজ্য থেকে যাতে এই ক্যারিব্যাগ জেলায় ঢুকতে না পারে, তার জন্য তাঁরা প্রশাসনিক নজরদারিরও আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের অতিরিক্ত টাকা দিয়েই ক্যারিব্যাগ কিনতে হবে বলে জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : দুর্ঘটনায় অকেজো বাঁ হাত, ধনঞ্জয়ের একহাতে তৈরি দশভূজা পাড়ি দিচ্ছে মুম্বই
ব্যবসায়ী মহল জানাচ্ছে, মালদা জেলায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন মেট্রিক টন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবসা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই 51 মাইক্রনের নীচে। ফলে ব্যবসার তাগিদে পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রত্যেককেই ভাল পরিমাণে এ ধরনের ক্যারিব্যাগ মজুত রাখতে হয়। বর্তমানে জেলায় গোটা কুড়ি ক্যারিব্যাগ তৈরির কারখানা রয়েছে। সেগুলিতে উৎপাদিত ক্যারিব্যাগের সিংহভাগ 51 মাইক্রনের নীচে।
এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও সুবিধা হয়। কারণ, এক কিলো ওজনে অন্তত 500 ক্যারিব্যাগ পাওয়া যায়। কিন্তু 51 মাইক্রনের বেশি মাপের ক্যারিব্যাগের ওজন বেশি। তার দামও বেশি পড়ে। প্রতি কিলোয় শ'তিনেকের বেশি ব্যাগ পাওয়া যায় না। তবে পাতলা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যে প্রকৃতিকে বিপন্ন করছে, তা মেনে নিচ্ছেন সবাই। কারণ, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এই ক্যারিব্যাগ মাটিতে মিশে যায় না। এ ধরনের ক্যারিব্যাগের জন্য একদিকে যেমন মাটি দূষণ হচ্ছে, তেমনই ভেঙে পড়ছে নিকাশি ব্যবস্থা। শহর বা গ্রাম, সব জায়গায় একই ছবি।
আরও পড়ুন : বউবাজারের বিপদের ভূগোল দাঁড়িয়ে শহরের ইতিহাসের উপর
মালদা জেলা ক্যারিব্যাগ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খোকন কুণ্ডু বলেন, "দীর্ঘ 10 বছর ধরেই এই জিনিসটি নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু বিকল্প কোনও ব্যবস্থা আমাদের কাছে এখনও নেই। আর যেসব বিকল্পের কথা বলা হচ্ছে, তা এতটাই দামি হয়ে যাচ্ছে যে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পক্ষে তা নিয়ে ব্যবসা করা সমস্যার। 51 মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিয়ে সরকারি নির্দেশিকাকে আমরা অমান্য করব না। কিন্তু সময়টা বড্ড কম দেওয়া হয়েছে। মাত্র 10-12 দিনে আমাদের মজুত থাকা পাতলা ক্যারিব্যাগ বিক্রি করা সম্ভব নয়। তার সঙ্গে সরকারের উচিত, এ ধরনের ক্যারিব্যাগ নিয়ে বছরভর সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা। কারণ, মানুষ সচেতন না হলে এই ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। আরও একটি বিষয়, ভিনরাজ্য থেকে এখানে প্রচুর পরিমাণে 51 মাইক্রনের নীচে থাকা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিক্রি হয়। সেটাও বন্ধ করা উচিত। এক্ষেত্রে পরিবেশ দফতরকে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।"
প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের এক ক্ষুদ্র বিক্রেতা সুকান্ত পালের বক্তব্য, "মজুত থাকা প্লাস্টিক বিক্রির জন্য আমাদের একটু সময় দেওয়া হোক। নইলে আমাদের পথে বসতে হবে।" শহরের নেতাজি পৌর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মানিক জয়সওয়াল বলছেন, "আমরাও চাই, পাতলা ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হোক। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, সরকার এ ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের উৎপাদন বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এসব কারখানার লাইসেন্স তো সরকারই দিচ্ছে।"
আরও পড়ুন : 11 মুখোশে সাড়ে 300 বছর ধরে মহিলা পুরোহিতের হাতে পূজিত হচ্ছেন মালদার জহুরাচণ্ডী
দশকর্মা এবং মুদি ব্যবসায়ী বিমলকুমার সাহার কথায়, "এখন কাগজের ঠোঙা পাওয়া যায় না। আমরা সবাই এ ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তবে বেশি দাম দিয়ে আমাদের 51 মাইক্রনের ক্যারিব্যাগ কিনতে হলে তার দাম ক্রেতাদের কাছ থেকেই আমাদের আদায় করতে হবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে হবে। আমাদেরও তো টিকে থাকতে হবে।"
এ নিয়ে জেলাশাসকের কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন যে কঠোর হতে চলেছে তার প্রমাণ মিলেছে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর গলায়। তিনি বলেন, "এ ধরনের প্লাস্টিক সমাজ ব্যবস্থায় ভীষণ ক্ষতি করছে। ড্রেনগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট নোংরা হচ্ছে। এ ধরনের প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে কখনও মেশে না। তাই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে জেলার বণিকসভাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা মজুত মাল বিক্রির জন্য যে অতিরিক্ত সময় চাইছেন, তা দেওয়া হবে না। হঠাৎ করে কারফিউ ঘোষণা হলে কি আমরা এক ঘণ্টা সময় চাইতে পারি? আমাদের সাফ কথা, রাজ্য সরকারের ঘোষণা কার্যকর করা হবেই। কোনও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে না। ভিনরাজ্য থেকে যাতে এ ধরনের ক্যারিব্যাগ না ঢুকতে পারে, তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। 1 জুনের পর এ ধরনের ক্যারিব্যাগ বিক্রি করলে আর্থিক জরিমানা কিংবা তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।"