মালদা, 28 জুলাই : তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের নতুন নমুনা । দলীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের অপহরণের অভিযোগ উঠল দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে । শুধু তাই নয়, এই অপহরণ কাণ্ডে ভাঙচুর করা হল বিডিও দফতর । গোলাগুলি চলারও আভিযোগ উঠেছে । গোটা ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তিতে শাসক শিবির ।বিক্ষোভে নেমেছে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী ৷
গ্রাম পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য । গতকাল সেই অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষর ভেরিফিকেশনের দিন স্থির করেছিলেন বিডিও । নির্ধারিত সময়ের আগে বিডিও অফিসে হাজির হন বিক্ষুব্ধ 12 জন পঞ্চায়েত সদস্য । বিডিও অফিস থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী জুবেদা বিবির স্বামী তথা এলাকার যুব তৃণমূল নেতা আসরাফুল হক দলবল নিয়ে এসে বিক্ষুব্ধ 11 জন সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ । ঘটনাস্থলে তাঁর বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের গোষ্ঠীর হাতাহাতি হয়, ভাঙচুর চালানো হয় বিডিও দফতরে । সেখানে আসরাফুলের বিরুদ্ধে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে । এরপরেই অপহৃত সদস্যদের অনুগামীরা অস্ত্রশস্ত্র হাতে পথ অবরোধে সামিল হন । বিকেল পর্যন্ত চলে সেই অবরোধ । এখনও পর্যন্ত সেই সদস্যদের উদ্ধার করা যায়নি বলেই খবর ।
ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের শাসকদল পরিচালিত দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতকে ঘিরে । 20টি আসনবিশিষ্ট এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নজিবুর রহমান । বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল । এ নিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে দলের জেলা নেতৃত্বকে অভিযোগ জানান বিক্ষুব্ধ সদস্যরা । কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা প্রধানকে অপসারণের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । আদালতের নির্দেশে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রক্রিয়া শুরু করেন বিডিও । গতকাল ছিল অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষর ভেরিফিকেশনের দিন । তাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড হয় বিডিও অফিসে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ।
আরও পড়ুন : বন্যাত্রাণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বিডিওর
এদিকে অপহৃত পঞ্চায়েত সদস্যদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে তাঁদের সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র সমেত এলাকায় পথ অবরোধ শুরু করেন । যদিও সেখানে থাকা পুলিশকর্মীরা অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ । অবরোধস্থলে উপস্থিত হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ সামাউন হক বলেন, "আসরাফুল ও তার দলবলের প্রত্যেকের হাতে আজ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল । ব্লকের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখলেই সবাইকে চিহ্নিত করা যাবে । ওরা দফতরের এক কর্মীর উপরেও হামলা চালায় । তারা 11 জন পঞ্চায়েত সদস্যকে অপহরণ করেছে । একজন বাইরে থাকায় কোনওক্রমে পালিয়ে আসতে পেরেছে । ওরা মেয়েদের মারধর করতেও ছাড়েনি । এই ঘটনার সঙ্গে দলের বড় বড় নেতাও জড়িত আছে ।"
স্থানীয় তৃণমূল কর্মী তাজমুল হকের দাবি, "এই পঞ্চায়েতে আমাদের দলের প্রধান 10-15 কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত । গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । প্রধানের বিরুদ্ধে প্রথমে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয় । আদালতের নির্দেশে ফের অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ে । আজ ছিল স্বাক্ষর ভেরিফিকেশনের দিন । কিন্তু প্রধানের ষড়যন্ত্রে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বামী বন্দুকের নলের সামনে সবাইকে অপহরণ করে । ওরা মহম্মদ সামায়ুন হককে খুন করার জন্য পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে । তারা সবাই তৃণমূলের ।"
আরও পড়ুন : Fraud Case : প্রতারণায় টাকায় ভোটে জিতেছেন বিজেপি বিধায়ক, অভিযোগ পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীর
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিডিও বিজয় গিরি বলেন, "সিসিটিভি-তে দেখতে পেয়েছি যে ওদের বাদবাকি 50-60 জন মতন এসে বের করে নিয়ে যান ৷ এরকম একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গিয়েছে ৷" কারা নিয়ে গিয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি কারওর নাম উল্লেখ না করে সিসিটিভি ফুটেজের কথা জানান ৷ স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী জুবেদা বিবির স্বামীর বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথাও তিনি জানেন না ৷ এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডিএম-কে জানিয়েছেন তিনি ৷ পুলিশকে এফআইআর লজ করার জন্য তাঁরা চিঠি দিয়েছেন ৷ সাড়ে এগারোটায় আসার কথা থাকলেও সাড়ে 8টা নাগাদই সদস্যরা দফতরে চলে আসায় এই সমস্যা তৈরি হয় । কারণ, " সেই সময় দফতরে পুলিশ ছিল না ৷ সাড়ে 10টা নাগাদ পুলিশের আসার কথা ছিল ৷" তবে পুলিশ তদন্ত করছে আর প্রশাসনও নজর রাখছে বলে জানালেন বিডিও ৷
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর দুলাল সরকার বলেন, "গ্রাম পঞ্চায়েতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত উন্নয়ন করছে, সেই উন্নয়নের নিরিখে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মেম্বাররা তাঁদের ইচ্ছে প্রকাশ করছে প্রধান হবে বলে ৷" তাঁর দাবি, সেই জন্য় বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার চেষ্টা করছে ৷ দল এগুলোর সঙ্গে নেই বলে জানালেন দুলাল ৷ তাঁর মতে যদি কোনও প্রধান দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে তা দলকে জানাতে হবে ৷ দল সেই প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে, প্রয়োজনে অপসরণ করবে ৷ দৌলতনগরের ঘটনা খতিয়ে দেখছে দল ৷ তিনি মনে করেন এখানে বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী দলের উসকানিতে অনাস্থা আনার চেষ্টা করা হয়েছে ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, "এ ওকে উঠিয়ে নিয়ে লুকিয়ে রাখছে ৷ অপহরণের কোনও ব্যাপার নয় ৷" তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসন শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে ৷ আর কারওর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে ৷ দলের বাইরে কোথাও কোনও অনাস্থা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর ৷
আরও পড়ুন : Minister Sabina Yeasmin : মন্ত্রী সাবিনার বিধায়ক প্যাডে চাকরির সুপারিশ, বিতর্ক মালদায়