মালদা, 23 সেপ্টেম্বর: ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচিয়ে হিরো পঞ্চম শ্রেণির কিশোর ৷ নিজের উপস্থিত বুদ্ধিতে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে যাত্রীবোঝাই ট্রেন রক্ষা করেছে এই খুদে ৷ এখন সবার মুখে মুখে শুধু সাহসী মুরসেলিমের নাম ৷ শুক্রবার রাত থেকেই তার বাড়িতে মানুষের ভিড় ৷ ছেলের এই কাজে গর্বিত মা ৷ গর্বিত এলাকার মানুষজনও ৷ যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করার পুরস্কার পাচ্ছে মুরসেলিম ৷ ইতিমধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে তাকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে ৷
বছর এগারোর মুরসেলিমের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের কড়িয়ালি গ্রামে ৷ বাবা ইসমাইল শেখ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷ তিনি এখন ভিনরাজ্যে ৷ দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন মর্জিনা খাতুন ৷ শুক্রবার বেলা তিনটে নাগাদ ভালুকা রোড রেল স্টেশনের আউটার সংলগ্ন একটি জলাশয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিল মুরসেলিম ৷
তখনই তার নজরে আসে রেল লাইনের নীচে একটি বড় গর্ত ৷ নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই মালদা জেলায় ভালো বৃষ্টি হচ্ছে ৷ হয়তো তার জেরেই লাইনের নীচের পাথর সরে গিয়ে ওই গর্ত তৈরি হয়েছে ৷ এর মধ্যে মুরসেলিম দেখে, ওই লাইনেই ঝড়ের বেগে ছুটে আসছে শিয়ালদা-শিলচর আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৷
আরও পড়ুন: ইঞ্জিন থেকে আলাদা হল 10 কামরা, ডালখোলায় বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচল লোহিত এক্সপ্রেস
মুহূর্তের মধ্যে সে নিজের গা থেকে লাল গেঞ্জি খুলে হাত নিয়ে লাইনের উপর দাঁড়ায় ৷ প্রাণপণে গেঞ্জি দোলাতে শুরু করে, যাতে অনেক দূর থেকে তা দেখতে পান ট্রেনচালক ৷ তা দেখে ট্রেনচালক ট্রেন থামিয়ে দেন ৷ ইঞ্জিন থেকে নেমে এসে ওই গর্ত পরীক্ষা করেন ৷ মুরসেলিম বহু যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছে ৷ তাই তার পিঠ চাপড়ে দেন তিনি ৷
এরপর খবর যায় ভালুকা রোড স্টেশনে ৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছন জিআরপি, আরপিএফ ও রেলকর্মীরা ৷ লাইনের নীচের গর্ত বুজিয়ে ঘণ্টা দেড়েক বাদে ফের শিলচরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ট্রেনটি ৷
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় রীতিমতো বীরের মর্যাদা পেয়েছে 10 বছরের এই খুদে ৷ ছেলের এই কাজে গর্বিত মর্জিনা ৷ তিনি বলেন, "এত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে ছেলে ৷ গর্ব হবে না ! ট্রেনের চালকও ছেলেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷”
এদিকে মুরসেলিম বলে, "মাছ মারতে যাওয়ার সময়ই লাইনের নীচে খাল নজরে পড়ে ৷ ওই লাইনে ট্রেন আসতে দেখেই আমি গেঞ্জি খুলে দেখাতে থাকি ৷ শেষে ট্রেন থামিয়ে চালক নেমে আসেন ৷ এত লোকের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানান ৷"
এক গ্রামবাসী সহিমুদ্দিন বলেন, "সেই সময় আমি টর্চ ঠিক করাতে রেল লাইনের উপর দিয়েই যাচ্ছিলাম ৷ ট্রেন ওই লাইন দিয়ে আসছিল ৷ তখনই মুরসেলিম নিজের গেঞ্জি খুলে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করে ৷ শেষ পর্যন্ত ট্রেন থেমে যায়৷ বাচ্চা খুব ভালো কাজ করেছে ৷"
আরেক গ্রামবাসী আবদুস সাত্তারের বক্তব্য, "আমি তখন ঘটনাস্থলে ছিলাম না ৷ শুনলাম, ট্রেন আটকাতে মুরসেলিম নিজের গেঞ্জি খুলে চালককে সংকেত দেয় ৷ আরও কয়েকটি বাচ্চা লাইন ধরে এগিয়ে গিয়ে হাত দেখিয়ে চালককে ইশারা করেছিল ৷ যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনা আটকানো গিয়েছে ৷ অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে ৷"
এই ঘটনায় মুরসেলিমকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল ৷ এনএফ রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, "ঘটনাটি আমাদের কানে এসেছে ৷ আমরা ওই বাচ্চাটিকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ খুব তাড়াতাড়ি তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে ৷"
পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত না-নিলেও মুরসেলিমকে তার কাজের জন্য বাহবা দিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রও ৷ তিনি বলেন, "উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মধ্যে ঘটনাটি ঘটার জন্যই হয়তো বিষয়টি আমাদের কানে আসেনি ৷ পূর্ব রেলের তরফে আমি ওই বাচ্চাটিকে বাহবা দিচ্ছি ৷ তবে এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করার কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি ৷"
আরও পড়ুন: হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেসে আগুন ! পুড়ল 6টি বগি