মালদা, 17 জানুয়ারি: মালদায় মাথাচাড়া দিচ্ছে উগ্র মৌলবাদীরা৷ এর সঙ্গে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন, জামাত-ই-ইসলামির যোগাযোগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ ইতিমধ্যে এই নিষিদ্ধ সংগঠনটি তাদের নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে খবর ৷ প্রথম পর্যায়ে তারা টার্গেট করেছে মাদ্রাসাগুলিকে ৷ অভিভাবকদের একাংশের মগজ ধোলাই করে তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দিয়েছে, মাদ্রাসায় মেয়েদের ড্রিল কিংবা ছাত্রদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে হবে ৷ বন্ধ করতে হবে রাখি উৎসবও (radical letter at Malda madrasah) ৷
গোটা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত বেশিরভাগ অভিভাবক৷ আতঙ্কে শিক্ষকরাও ৷ ভয়ে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগও জানাননি ৷ তবে মৌখিকভাবে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে তবে এই বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় কিছু বলতে অস্বীকার করলেও জানিয়েছেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের তরফে এনিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন ৷ তবে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর (radical letter controversy in Malda) ৷
সম্প্রতি ইংরেজবাজার ব্লকের বুধিয়া হাই মাদ্রাসায় এমনই একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে ৷ সেই চিঠিতে স্বাক্ষর রয়েছে বেশ কিছু মানুষের ৷ তাঁদের অনেকেই মাদ্রাসা পড়ুয়াদের অভিভাবক বলে জানা গিয়েছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের লক্ষ্য ছিল মুসলিম ছেলেমেয়েদের শিক্ষার মূল স্রোতে সামিল করা এবং ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সমূহ সংরক্ষণ ও বিকশিত করা ৷ কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মাদ্রাসায় অ-ইসলামিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলোর নামে বড় মেয়েদের লাফঝাঁপ করানো, ছেলেদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে ৷ এতে গ্রামবাসী, অভিভাবক ও ধর্মপ্রাণ মানুষজন ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত ৷ তাই খেলাধুলোর আঙিনা থেকে বড় মেয়েদের সরিয়ে শুধুমাত্র ছোট মেয়েদের রাখতে হবে ৷ রাখি বন্ধন উৎসব পালন বন্ধ করতে হবে ৷ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে ৷
আরও পড়ুন: কেন্দ্র সচেতন না হলে রানিগঞ্জের অবস্থাও জোশীমঠের মতো হবে, আশঙ্কা মমতার
10 জানুয়ারি এই চিঠি পাওয়ার পর থেকেই মাদ্রাসায় আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে ৷ 18 জানুয়ারি মাদ্রাসার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ৷ গতকাল রাতে বিষয়টি ইংরেজবাজার থানার আইসিকে জানিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৷ আজ প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আজিজুর রহমান পুলিশ সুপারকেও মৌখিকভাবে গোটা ঘটনা জানিয়েছেন ৷ ইটিভি ভারতের ক্যামেরার সামনে তিনি জানান, “18 জানুয়ারি আমাদের মাদ্রাসার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল ৷ তার জন্য এক রবিবার মাদ্রাসার ক্রীড়া শিক্ষক ড্রিল রিহার্সাল করাতে ছাত্রীদের মাঠে নিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ সেই মুহূর্তে এলাকার দু’একজন এসে বলে, বড় মেয়েদের দিয়ে স্পোর্টস করানো যাবে না ৷ ড্রিল বা নাচগান কিছুতেই করানো যাবে না ৷ তারা ক্রীড়া শিক্ষককে হুমকিও দেয় ৷ এরপর 10 জানুয়ারি তাঁরা আমাকে একটি চিঠি দেয় ৷"
প্রধান শিক্ষকের দাবি, সেই চিঠির ভাষাও কুরুচিপূর্ণ ৷ ওই চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়, মাদ্রাসার ব্যবস্থা গ্রহণের উপর তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে৷ তাঁর অভিযোগ, এর পিছনে এক প্রাক্তন সেনা, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষক-সহ আরও কয়েকজনের হাত রয়েছে ৷ এই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে মানবাধিকার সংগঠন, এপিডিআর ৷ সংগঠনের তরফে যীষ্ণু রায়চৌধুরি বলেন,“আমাদের কাছে খবর আছে, এই ঘটনার পিছনে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন জামাত-ই-ইসলামির হাত রয়েছে ৷ তারা এবার এই জেলাতেও উগ্র মৌলবাদ ছড়ানোর চেষ্টা করছে ৷ তারা মাদ্রাসার বড় মেয়েদের খেলাধুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছে ৷ এমনকি রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে যে রাখি বন্ধন উৎসব চালু করেছিলেন, সেই উৎসবও তারা মাদ্রাসায় বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ৷"
এপিডিআর এর তরফে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান হয়েছে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার ৷ তাদের আশঙ্কা মৌলবাদের বিষ একবার ছড়িয়ে পড়লে তা আর আটকানো যাবে না ৷ তবে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় কিছু বলতে অস্বীকার করেন পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব ৷ তবে তিনি জানিয়েছেন, কোনও প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের উপর কেউ বা কারা কোনও চাপ সৃষ্টি করলে এবং তা নিয়ে ওই কর্তৃপক্ষ পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷