মালদা, 18 নভেম্বর : মেয়ের জন্ম দেওয়ায় বধূকে খুন করে ঘরের ছাদে টাঙিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পাঁচলা গ্রামে । গতকাল অধিক রাতে 5 জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার বাবা । ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও অভিযুক্তদের নাগাল পায়নি পুলিশ । পলাতক অভিযুক্তদের সন্ধানে শুরু হয়েছে পুলিশি তল্লাশি ।
মৃত বধূর নাম নুরসেবা খাতুন । তাঁর বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগমারা গ্রামে । বছর চারেক আগে স্থানীয় বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নানের সঙ্গে সম্বন্ধ করে তাঁর বিয়ে হয় । গৃহবধূর বাবা রেজাউল মোমিনের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে স্বামী ও শাশুড়ির চক্ষুশূল ছিলেন নুরসেবা । বছর দুয়েক আগে কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে সমস্যা আরও প্রকট হয় ৷
নুরসেবার উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে । এমনকি একবার তাঁকে 3 ঘণ্টা ধরে গাছে বেঁধে রেখে তাঁর বাবার কাছে খবর দিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন । এনিয়ে একাধিকবার গ্রামে সালিশি সভা বসে । শুধু গ্রামের মোড়ল-মাতব্বরা নয়, সভায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যরাও অংশ নিয়েছিলেন । স্ত্রীর উপর অত্যাচারের জন্য মান্নান ও তাঁর পরিবারকে জরিমানা করা হয় । বড় শাস্তির হুমকিও দেওয়া হয় । কিন্তু এত কিছু করেও নুরসেবাকে বাঁচানো যায়নি । গতকাল রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন : Extra Marital Affair : পরকীয়ার সম্পর্ক জানতে পারায় খুন স্বামী, গ্রেফতার স্ত্রী
নুরসেবার বাবা রেজাউল মোমিনের বক্তব্য, "বিয়ের পর থেকে জামাই মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারেনি । তার সঙ্গে অন্য মেয়ের সম্পর্ক ছিল । জামাইয়ের বাবা এই বিয়েটা দিয়েছিল । মান্নানের মাও আমার মেয়েকে দেখতে পারত না । সেখান থেকে অশান্তি শুরু হয় ।" তিনি জানান, বছর দুয়েক আগে মেয়ে কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকে ঝামেলা হতে থাকে । কারণ পরিবারের সদস্যরা ছেলে চেয়েছিল । তিনি বলেন, "মেয়ের জন্ম দেওয়ার জন্যই ওরা আমার মেয়েকে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দিয়েছে । পাঁচজন মিলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেছে । এর আগেও ওরা নুরসেবাকে গাছে বেঁধে মারধর করেছিল । মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি । ওদের সবার শাস্তি চাই ।"
মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আমিরুল ইসলামও জানিয়েছেন, মেয়ের জন্ম দেওয়ার জন্যই নুরসেবাকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুন করেছে । তিনি বলেন, "মেয়ের জন্ম দেওয়ার পরেই নুরসেবার উপর শ্বশুরবাড়ির সবাই অত্যাচার করত । মাস দুয়েক আগে ওরা গাছে বেঁধে মেয়েটাকে মারধর করেছিল । খবর পেয়ে আমরা পাঁচলা গ্রামে গিয়ে বিচার বসাই । তারপর থেকে আর কিছু শুনিনি । মেয়ের জন্ম দিয়েছিল বলেই নুরসেবার উপর অত্যাচার চলছিল বলে আমরা তখনই শুনেছিলাম। আজ শুনলাম, স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা মেয়েটাকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে আমিও সেখানে যাই । এটা খুব লজ্জাজনক ঘটনা । এমন ঘটনা যাতে আর কখনও না ঘটে তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি ।"