মালদা, 9 জানুয়ারি: হাসপাতালে রোগী দেখছেন মাধ্যমিক পাশ যুবক ৷ তাঁকে সাহায্য করছেন বিএ পাশ এক মহিলা ৷ ভুক্তভোগীদের কাছে অভিযোগ পেয়ে শনিবার ইংরেজবাজারের মিলকির একটি নার্সিংহোমে হানা দিয়ে চোখ কপালে উঠেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দলের (Fraud doctor arrested from Malda nursing home) ৷ রোগীর চিকিৎসা করার সময় ওই দলের সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে যান সেই যুবক ও তাঁর সহকারী মহিলা ৷ ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয় ৷ আদালতের অনুমতিক্রমে তাঁকে সাতদিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ (Fraud doctor arrested from malda) ৷
এর আগেও বৈষ্ণবনগরে আরও একটি নার্সিংহোমে একই ঘটনা ঘটেছিল ৷ মালদা শহর সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমেও বিস্তর গরমিল ধরা পড়েছিল ৷ তদন্তও হয়েছিল ৷ সেই রিপোর্ট যদিও জানা যায়নি ৷ জেলাবাসীর প্রশ্ন, বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও স্বাস্থ্য দফতর জেলাজুড়ে ব্যাংয়ের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলিতে নিয়মিত হানাদারি চালাচ্ছে না কেন ? বেআইনি কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন ?
আরও পড়ুন: সরকারি পাট্টার জমি দখল করতে বৃদ্ধ দম্পতিকে খুনের চেষ্টা !
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই মিলকির ওই নার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে একাধিক বেআইনি কাজকর্ম চালানোর অভিযোগ উঠছিল (nursinghome chaos in malda) ৷ তার ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে ওই নার্সিংহোমে হানা দেন জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা ৷ তাঁদের নজরে পড়ে, ওই নার্সিংহোমে সরকারি নিয়ম কিছুই মানা হচ্ছে না ৷ সেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবও রয়েছে ৷ হঠাতই স্বাস্থ্য দফতরের কয়েকজন প্রতিনিধি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়েন ৷ সেখানে ঢুকেই চক্ষু চড়কগাছ তাঁদের ৷ সেখানে তখন এক রোগীর চিকিৎসা করছিলেন চিকিৎসক, তাঁকে সাহায্য করছিলেন এক নার্স ৷ স্বাস্থ্যকর্তারা চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে আসল তথ্য ৷ দেখা যায়, তিনি মাধ্যমিক পাশ আর নার্স বিএ পাশ ৷ নার্সিংয়ের কোনও শিক্ষাই তাঁর নেই ৷ যদিও মাধ্যমিক পাশ চিকিৎসক দাবি করতে থাকেন, তিনি ওই রোগীকে চিকিৎসা করছিলেন না ৷ শুধু ক্যাথিডার পরাচ্ছিলেন রোগীকে ৷ যদিও তাফাজ্জুল হক নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয় ৷ তাঁর বাড়ি মোথাবাড়ির বাজারপাড়ায় ৷ আদালতের অনুমতিক্রমে তাঁকে সাতদিনের হেফাজতে নিয়েছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: অনশন, আন্দোলনের মধ্যেই শিশুর জটিল অস্ত্রোপচার কলকাতা মেডিক্যালে
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পাপড়ি নায়েক বলেন, "একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে মিলকির ওই নার্সিংহোমটিতে অভিযান চালানো হয়েছিল ৷ সেখানে বেশ কিছু অসঙ্গতি আমাদের নজরে এসেছে ৷ তার ভিত্তিতে আমরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি ৷"
কিন্তু বারবার জেলার নার্সিংহোমগুলিতে এমন ঘটনা ঘটে চললেও এর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতরের নিয়মিত অভিযান কিংবা অভিযুক্ত নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে কড়া কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ৷ জেলায় গজিয়ে ওঠা অসংখ্য নতুন নতুন প্যাথলজি ল্যাব নিয়েও তিনি সেভাবে কোনও উত্তর দেননি ৷ পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছাড়াও এই সমস্ত নার্সিংহোম কিংবা প্যাথলজি ল্যাবগুলি কীভাবে লাইসেন্স পাচ্ছে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন ৷ যদিও স্বাস্থ্য দফতরের একটি মহল জানাচ্ছে, কলকাতা থেকেই এই নার্সিংহোম ও প্যাথলজি ল্যাবগুলি লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে৷ তাহলে কি এই লাইসেন্সের পিছনেও কাটমানি? প্রশ্ন জেলাজুড়ে ৷
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরী বলেন, "প্রশাসনের কাছে একাধিক নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ৷ গত একমাস ধরে এসব নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে ৷ শুধু চিকিৎসা পরিষেবা নয়, নার্সিংহোমের অন্যান্য ব্যবস্থাপনাগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ এপর্যন্ত 15টি নার্সিংহোমকে জরিমানা করা হয়েছে ৷ 8টি নার্সিংহোমের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ প্রশাসনের তরফে বিষয়টির উপর কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে ৷"