মালদা, 5 জুন: আর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হল না ইউনুসের ৷ আগামী বছর তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ৷ সংসারের আর্থিক অনটন খানিকটা মেটাতে বন্ধুর সঙ্গে শ্রমিকের কাজ করতে পাড়ি দিয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশে ৷ এক মাস কাজ করে ঘরে ফিরছিলেন তিনি ৷ কিন্তু বালাসোর থেকে 28 কিলোমিটার দূরে বাহানাগা বাজার রেল স্টেশনের কাছে থেমে গিয়েছে তাঁর জীবনের গতি ৷
দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত ইউনুসকে ভরতি করা হয়েছিল সেখানকার হাসপাতালে ৷ কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি ৷ 18 বছরের তরতাজা ইউনুসের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছতেই তাঁর বাড়িতে যান ইংরেজবাজারের বিডিও সৌগত চৌধুরী, এলাকার বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী-সহ আরও অনেকে ৷ দেহ বাড়ি ফিরিয়ে আনতে রবিবার রাতেই বালাসোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন ইউনুসের দাদা ৷
ইউনুসের বাড়ি ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি গ্রামে ৷ মাধ্যমিক পাশ করার পর পরিবারের আর্থিক সংকটে তাঁর পড়াশোনায় ভাঁটা পড়ে ৷ ইচ্ছা ছিল, অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করবেন ৷ তার জন্য কমলাবাড়ি হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভরতিও হয়েছিলেন ইউনুস ৷ এরই মধ্যে স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে যায় ৷ তখন গ্রামেরই এক বন্ধু জামিল আখতার তাঁকে বলেন, বাড়িতে বসে না-থেকে ভিনরাজ্যে কিছুদিন কাজ করলে পরিবারের খানিকটা সুরাহা হয় ৷ বন্ধুর কথায় ইউনুসও বাইরে কাজে যেতে রাজি হন ৷ গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে মাসখানেক আগে তাঁরা অন্ধ্রপ্রদেশে রওনা দেন ৷
আরও পড়ুন: মা আমি বাড়ি আসছি বলেও ফেরা হল না আসিফের
ইউনুসের বাবা সাজ্জাদ আলি নিজেও শ্রমিক ৷ তিনি জানান, ছেলে বাইরে কাজে যেতে চাইছিল না ৷ কিন্তু বন্ধুর কথা সে ফেলতেও পারছিল না ৷ বাড়র লোক প্রথমে তাঁকে বাইরে যেতে বারণ করেছিল ৷ কিন্তু জেদ দেখে ইউনুসকে বাইরে কাজে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় ৷ তিনি বলেন, "আমরা গরিব মানুষ ৷ দিন আনি দিন খাই ৷ ছেলে বাইরে গিয়ে উপার্জন করলে সংসারের যে সুরাহা হত, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই ৷ ধারদেনা করে এবারই বাড়ি করেছি ৷ অনেক টাকা শোধ করতে হবে ৷ তাই ছেলেকে বাইরে কাজে যাওয়া থেকে বিরত করিনি ৷ একমাসও হয়নি ওর বাইরে যাওয়া ৷ ওখান থেকে ফিরে আসছিল ৷ জামিলও সঙ্গে ছিল ৷ আগামী বছর ওর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ৷"
আরও পড়ুন: ট্রেন দুর্ঘটনায় ভাইরাল ছবি, ছেলের মুখের সঙ্গে মিল, চিন্তায় পরিবার
ইউনুসের মৃত্যুর খবরে বাড়িরহ সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েছে ৷ গোটা গ্রামই যেন উঠে এসেছে তাঁর বাড়িতে ৷ খবর পেয়ে ইউনুসের বাড়িতে ছুটে যান ওই এলাকারই বাসিন্দা, জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি মোত্তাকিন আলম ৷ তিনি জানান, খুব বেদনাদায়ক খবর ৷ ইউনুসরা যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিল ৷ গ্রামের আরও কয়েকজন ওই ট্রেনে ছিল ৷ এই ট্রেনটি কিছুক্ষণ পরে দুর্ঘটনার শিকার হয় ৷ এই দুর্ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারই দায়ী ৷ আর ইউনুসদের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্য সরকারও দায় এড়াতে পারে না ৷ রাজ্যে কাজ দিতে না পারার জন্যই ইউনুসের মতো অনেক মানুষ ভিনরাজ্যে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে ৷ তিনি দাবি করেন, ইউনুসের পরিবারকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে 20 লক্ষ টাকা এবং রাজ্য সরকারকে 10 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ৷