মালদা, 21 মার্চ : অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন ৷ সেই নিরিখে মালদার বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বুথগুলিতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে ৷ শনিবার জেলায় বৈঠক করে বার্তা দিলেন রাজ্যের দ্বিতীয় পর্যবেক্ষক অনিলকুমার শর্মা ৷ পুরাতন মালদার নারায়ণপুরের একটি হোটেলে তিনি মালদা, দুই দিনাজপুর ও মুর্শিদাবাদ জেলার প্রশাসন, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বৈঠক করেন ৷ সমস্ত জেলার প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য 10 মিনিট করে সময় দেওয়া হয় ৷
বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিল শর্মা শনিবার হেলিকপ্টারে মালদায় আসেন ৷ বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি হোটেলে যান ৷ সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন চার জেলার প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ৷ প্রথমে তাঁদের সঙ্গেই বৈঠক করেন পর্যবেক্ষক ৷ বৈঠক শেষে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, “ বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের কাছে আমরা বেশ কয়েকটি দাবি রেখেছি ৷ বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যেখানে বিএসএফ সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে, সেখানে বিএসএফ এর কিছু অফিসার সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন এবং বিশেষ একটি দলকে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন ৷ এছাড়াও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে ভোট প্রচার করছে ৷ তারা কতদিন এলাকায় থাকতে পারবে এবং এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা জানতে চেয়েছি ৷”
আরও পড়ুন : রাজনীতিকদের পুর-প্রশাসকের পদ থেকে সরাতে নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি তাপস গুপ্ত বলেন, “মালদায় সীমান্ত এলাকার সমস্ত বুথকেই এবার আমরা সংবেদনশীল বলে মনে করছি ৷ এখনও মালদা জেলার সমস্ত থানার পুলিশ শাসকদলের কথামতো কাজ করছে ৷ আধা সামরিক বাহিনীকে তারা পরিচালনা করার চেষ্টা করছে ৷ আমরা জানিয়েছি, পুলিশি নিয়ন্ত্রণে আধা সামরিক বাহিনীকে রাখে চলবে না ৷ উপরমহল থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৷”
আরও পড়ুন : মোদির প্রশংসার পর দিলীপকে ঘিরে বাড়ছে জল্পনা, কী বলছে আরএসএস ?
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অম্বর মিত্র বলেন, “আমরা বলেছি, মালদা জেলার প্রতিটি বুথই সংবেদনশীল ৷ গত 10 বছরে আমরা প্রতিটি ভোটেই দেখেছি, গণতন্ত্র লঙ্ঘিত হয়েছে ৷ মানুষ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি ৷ এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনেও এই ঘটনা ঘটেছে ৷ মালদা জেলার চারদিকেই সীমান্ত ৷ ভোটে এখানে অস্ত্র থেকে গুণ্ডা আমদানি করা হয়৷ রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদল এসব কাজ করে ৷ এর মধ্যে মানুষের গণতন্ত্র যাতে রক্ষিত হয়, তার জন্য আমরা বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষককে জানিয়েছি ৷”
প্রায় একই বক্তব্য জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কালীসাধন রায়ের ৷ তিনিও বাংলাদেশ, ঝাড়খণ্ড ও বিহার সীমান্ত এলাকার বুথগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষককে জানিয়েছেন ৷
বৈঠক শেষে অনিলকুমার শর্মা বলেন, “আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আজ এখানে চার জেলার প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে ৷ বৈঠক করা হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও ৷ মানুষ যাতে কোনও ভয় কিংবা চাপ ছাড়াই নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য ৷ সীমান্ত এলাকার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ নয়, ঝাড়খণ্ড ও বিহার সীমান্তও আমাদের বিশেষ নজর থাকবে ৷ তবে রাজ্য পুলিশ সবসময়ই নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ৷ এবারও তাদের সেই ভূমিকা নিতে হবে ৷ বর্তমানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুব খারাপ বলা যাবে না ৷ তবে নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, আরও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে ৷”