মালদা, 19 অক্টোবর : মালদায় যুবতিকে মারধর করে অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল যুবকের বিরুদ্ধে । 14 তারিখ থেকে নিখোঁজ থাকার পর গতকাল দেহটি উদ্ধার হয় যুবতির কলেজের এলাকা থেকে । ঘটনাটি মালদার রতুয়া এলাকার । যুবতি নিখোঁজ থাকাকালীনই অভিযুক্ত শেখ বাপিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী । তার বিরুদ্ধে যুবতির পরিবারের কাছ থেকে চাকরি পাওয়ার নামে 20 লাখ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে । গতকাল যুবতির দেহ উদ্ধার হলে রতুয়া থানার পুলিশ চাঁচল মহকুমা আদালতের মাধ্যমে বাপিকে 10 দিনের পুলিশি হেপাজতে নেয় ।
সোমবার (14 তারিখ) সকালে কলেজের উদ্দেশে রওনা দেয় যুবতি । ফেরার সময় পেরিয়ে গেলেও সে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খুঁজতে শুরু করে তাঁকে । রাত পর্যন্ত খোঁজ না মেলায় নিখোঁজ ডায়েরি করে রতুয়া থানায় । এলাকাবাসী জানতে পারলে তারাই শেখ বাপিকে ধরে পুলিশে দেয় । তারপর গতকাল যুবতির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় । তাঁর মুখে এমনভাবে অ্যাসিড দেওয়া হয়েছিল যে মুখের কোনও অংশে চামড়া বা চুলের লেশমাত্র দেখা যায়নি । খুনের ঘটনা সামনে আসার পর এলাকাবাসীর দাবি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক দোষীদের ।
ঘটনার পর জানা যায়, শেখ বাপির সঙ্গে যুবতির দু'বছর আগে কোর্টে নিকাহ হয়েছিল । খুব তাড়াতাড়িই সামাজিকভাবে নিকাহর পরিকল্পনা ছিল । পরিবারের অভিযোগ, এই দু'বছরে একাধিকবার যুবতির পরিবারের থেকে সেনা বাহিনীতে নিজের চাকরি পাওয়ার নাম করে টাকা নেয় বাপি । 20 লাখ টাকা মোট নেওয়ার পর চাকরি পেয়েছে বলে জানায় । কিন্তু সেটা আদৌ সত্যি কি না তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিল পরিবার । তার বিরুদ্ধে আরও অনেক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগও রয়েছে ।
এবিষয়ে যুবতির দাদা বলেন, "দু'বছর আগে রতুয়ার হাটখোলার যুবক শেখ বাপির সঙ্গে বোনের কোর্টে নিকাহ হয় । এরপরই সেনাবাহিনীতে চাকরির নামে আমাদের থেকে ২০ লাখ টাকা নেয় । ১৪ তারিখ বোনের এক বান্ধবী ওকে কলেজে নিয়ে যাওয়ার নামে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় । আমরা জানি কলেজেই গেছে । রাতে বাড়ি না ফেরায় বোনকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি । ওর মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । ওর বান্ধবীর কাছে জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, বোন তার শওহরের সঙ্গে রয়েছে । বোনের শওহরকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, তার কিছুই জানা নেই । আমরা সমস্ত ঘটনা এলাকায় জানাই । রতুয়া থানায় আমরা বোনের মিসিং ডায়েরি করি । সমাজের লোকজন বোনের শহওরকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় । পুলিশ কোর্টের মাধ্যমে বোনের শওহরকে 10 দিনের পুলিশি হেজাপতে নেয় । গতকাল রাতে ওর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ।"
স্থানীয় এক বাসিন্দা সৌমিত্র রায় বলেন, "14 অক্টোবর থেকে আমাদের প্রতিবেশী এক মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় । এরপরই পরিবারের লোকজন থানায় মিসিং ডায়েরি করেন । পুরো ঘটনায় শেখ বাপি নামে এক যুবককে শনাক্ত করা হয় । গতকাল ওর দেহ উদ্ধার করে তড়িঘড়ি মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । যা মনে হচ্ছে ওকে ধর্ষণের পর অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । আমার অনুমান এই ঘটনার পেছনে ওই ছেলের পরিবারেরও যোগ রয়েছে । আমি জানতে পেরেছি, ওই যুবক বহু মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে । কয়েকদিন আগে এমনই ঘটনায় সালিশিসভায় প্রচুর টাকা জরিমানা দিয়েছে । আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই ।"
এবিষয়ে রতুয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, 14 তারিখ ওই যুবতির মিসিং ডায়েরি করা হয়েছিল । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ বাপি নামে এক যুবককে কোর্টের মাধ্যমে 10 দিনের পুলিশি হেপাজতে নেওয়া হয়েছে । যুবতির মৃতদেহটিকে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই মৃত্যুর কারণে জানা যাবে । মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ।