মালদা, 2 মে : হচ্ছে 100 দিনের কাজ । কিন্তু শ্রমিকদের বদলে কাজ করছে যন্ত্র (Allegation of using Machine in MNREGS at Malda) । এনিয়ে অভিযোগ দায়ের করায় এক প্রতিবাদী শ্রমিককে মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে । ঘটনাটি ঘটেছে মালদার চাঁচল-2 ব্লকের জালালপুর পঞ্চায়েত এলাকায় । গোটা ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক । ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও ।
অভিযোগ, জালালপুর পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে সম্প্রতি 100 দিন কাজ প্রকল্পে পুকুর খননের কাজ শুরু হয় । কিন্তু সেখানে জবকার্ড থাকা শ্রমিকদের কাজ না দিয়ে রাতের অন্ধকারে এক্সকেভেটর দিয়ে কাজ করা হচ্ছিল । হকের কাজ না পেয়ে শ্রমিকদের একাংশ বিডিও, মহকুমাশাসক ও জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।
অভিযোগ পেয়ে কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন বিডিও । তদন্তের নির্দেশ দেন জেলাশাসকও । তাঁর নির্দেশে রামকৃষ্ণপুরে কাজের তদন্তে যায় প্রশাসনের প্রতিনিধি দল । সেই দলের সামনেই নাকি পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী এক অভিযোগকারীকে বেধড়ক মারধর করেন (100 days work Labour Allegedly Beaten at Malda) ।
ওই শ্রমিক পরে এনিয়ে চাঁচল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন । ঘটনাটি জানিয়েছেন বিডিওকেও । যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান মাস্তারা খাতুনের স্বামী হবিবুর রহমান । তবে তিনিই যে পঞ্চায়েত প্রধানের কাজ দেখাশোনা করেন, তা স্বীকার করেছেন ।
অভিযোগকারী শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “জবকার্ড থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজ পাচ্ছি না । প্রধান আর তার স্বামীরা রাতের অন্ধকারে মেশিন দিয়ে পুকুর খননের কাজ করাচ্ছে । আমি বিডিও আর এসডিওকে অভিযোগ জানাই । জানাই জেলাশাসককেও । তার প্রেক্ষিতে গ্রামে প্রশাসনের তদন্ত টিম যায় । আমাকেও সেখানে ডাকা হয় । আমি সেখানে গিয়ে কীভাবে যন্ত্র ব্যবহার করে পুকুরের মাটি কাটা হচ্ছে, তার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখাই । সেই সময় তদন্তকারী দলের সামনেই প্রধানের স্বামী হবিবুর রহমান আর তাঁর দলবল আমার মোবাইল ফোন কেড়ে আমাকে মারধর শুরু করে । কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে আমি সেখান থেকে চলে আসি । পরে এনিয়ে চাঁচল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি । আমাদের এলাকায় 10-15টা পুকুর এভাবেই মেশিন দিয়ে খোঁড়া হচ্ছে । কোথাও শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না ।”
এলাকার আরেক শ্রমিক সায়েদ শেখ বলেন, “রাতের অন্ধকারে যন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ে ওরা মাটি পাচার করে দিচ্ছে । জবকার্ড থাকলেও আমরা কাজ পাচ্ছি না । প্রধানের স্বামী হবিবুর রহমানই এসব কাজ করছে । কিছু বলতে গেলে আমাদের হুমকি দিচ্ছে । আমাদের গায়ে বিজেপির তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে । অথচ আমরাও তৃণমূল করি । আমরা এনিয়ে প্রশাসনের তিন স্তরে অভিযোগ জানিয়েছি ।”
যদিও এসব অভিযোগ মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হবিবুর রহমান । উলটে অভিযোগকারী রফিকুলকে তিনি দুষ্কৃতী হিসাবে তুলে ধরেছেন । তিনি বলেন, “ওখানে এক্সকেভেটর দিয়ে কোনও কাজ হয়নি । প্রশাসনের কর্তারা এই অভিযোগের তদন্তে গিয়েছিলেন । যে ছেলেটি এনিয়ে অভিযোগ করেছে, ও একটা দুষ্কৃতী । বোমায় হাত উড়ে গিয়েছে । ও আগে 100 দিনের কাজে সংসদ সুপারভাইজার ছিল । ভোটের সময় মেম্বারকে মারধর করে বিজেপিতে যোগ দেয় । স্থানীয় বিজেপি নেতা এনদাদুল হকের পরামর্শে ও আমাদের বদনাম করতে এসব অভিযোগ করছে । আসলে ওরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Bengal CM Mamata Banerjee) উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিতে চায় । আর ভিডিয়োতে যে ছবি দেখা যাচ্ছে, সেটা আমার এলাকার নয় ।”
হবিবুর সাহেবের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি যুব মোর্চার জেলা সহ-সভাপতি সুমিত সরকার বলেন, “তৃণমূলের পঞ্চায়েতগুলি এখন দুর্নীতির কারখানা । এনিয়ে যিনি প্রতিবাদ করবেন তাঁকে হয় মার খেতে হবে, অথবা গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে । বর্তমানে যাঁরাই তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের গায়ে বিরোধী যে কোনও দলের তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যেখানে এই অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার বিধায়ক আবদুর রহিম বকসি জেলা তৃণমূলের সভাপতি । তাঁর এলাকাতেই যদি এমনটা হয়, তাহলে গোটা জেলায় কী হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করতে পারা যায় ।”
এনিয়ে রহিম সাহেবের কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও চাঁচলের মহকুমাশাসক কল্লোল রায় জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে ।
আরও পড়ুন : TMC Factionalism in Malda : দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে এমএলএ কোটার টাকা তছরুপের অভিযোগ ব্লক তৃণমূল সভাপতির