কলকাতা, 22 ডিসেম্বর: কখনও পাহাড়ি পথে, আবার কখনও জঙ্গলে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ান দুই বন্ধু মধুঋতু দে এবং অরুণাভ রায় ৷ তাঁরা একটি ভ্রমণ সংস্থাও চালান ৷ এককথায় পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ তবে, এই জুটিকে সপ্তাহের বেশ কয়েকদিন দেখতে পাওয়া যায় গড়িয়াহাট মোড়ে হাতে কৌটো ও একটি ছোট পোস্টার হাতে অর্থসংগ্রহ করতে ৷ অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান কোনওটারই সমস্যা নেই তাঁদের ৷ তবুও তাঁদের জনবহুল রাস্তার মোড়ে কৌটো হাতে সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়ানোর কারণ, পথ কুকুর ও বিড়ালদের জন্য ৷
হ্যাঁ তাই ৷ রাস্তার কুকুর ও বিড়ালদের সেবার জন্য যেমন অর্থ সংগ্রহ করা মধুঋতু এবং অরুণাভর কাজ ৷ তাঁদের আরও একটি বড় উদ্দেশ্য, মানুষকে সচেতন করা ৷ জীবনজন্তুদের প্রতি মানুষ যেভাবে হিংস্র হয়ে উঠছে, সেই হিংসার বিরুদ্ধে আরও সচেতন করে তোলা মানুষকে ৷ সেই সঙ্গে তাঁদের এই সচেতনা ও সেবার সঙ্গে আরও অনেক মানুষকে একছাতার তলায় নিয়ে আসাই এই দুই যুবক-যুবতীর উদ্দেশ্য ৷ তাই মানুষের কাছে পৌঁছতে গড়িয়াহাট মোড়ে কৌটো ও পোস্টার হাতে নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়ে যান দু’জনে ৷ পথচলতি সকলকে তাঁদের কথার মাধ্যমে সচেতন করে চলেন দু’জনে ৷
অরুণাভ রায় কমার্সে স্নাতক ৷ এর পর একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন ৷ মধুঋতু কলকাতার একটি খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থায় 6 বছর কাজ করেছেন ৷ কয়েক বছর যাবৎ দু’জনে চাকরি ছেড়ে ভ্রমণ সংস্থা খোলেন ৷ পর্যটন ব্যবসায় মন দেন তাঁরা ৷ একের পর হোম-স্টে এখন তাঁদের ৷ শুধু পর্যটন ব্যবসা নয়, নিজেরাও বাইক চালিয়ে জলে জঙ্গল ও পাহাড়ি পথে ঘুরে বেড়ান ৷
সারাদিনের কাজের পর বিকেল ও সন্ধ্যা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে গলা ফাটান মধুঋতু এবং অরুণাভ ৷ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন তাঁদের মুখ থেকে ক্লান্তির ছাপ মুছে যায় ৷ মুছে যায় আনন্দে ৷ কারণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গলা ফাটানোর উদ্দেশ্যের কিছুটা তো সার্থক হচ্ছে ৷ শুধুই অর্থ সংগ্রহ করছেন এই দুই বন্ধু তেমনটা নয় ৷ তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যেমন কুকুরদের চিকিৎসা করান ৷ তেমন কুকুরের প্রতি মানুষের মনে যে ভয়, তা কমাতে নানা ভেবে সচেতনতামূলক প্রচার চালান ৷ সোশাল মিডিয়ায় সারমেয় প্রেমীদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছেন ক্রমশ ৷ বাড়ছে দায়িত্ব ৷ আসছে নানা প্রান্ত থেকে অহরহ ফোন ৷ ছুটে যাচ্ছেন অসহায় পথ কুকুরদের সেবায় ৷
মধুঋতু এবং অরুণাভ বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য এই কাজকে আরও বড় আকার দেওয়া ৷ যতটা পকেটের টাকা দিয়ে করতে পারি করছি ৷ কিন্তু, দিনে দিনে চাপ বাড়ছে তাই এই ভাবে দাঁড়ানো ৷ এটা ভিক্ষা বলতে পারেন, বা অর্থ সংগ্রহ বা তহবিল গঠন ৷ তবে, সবটা পথ কুকুরদের স্বার্থে ৷’’ এর সঙ্গেই সচতনতার পাঠ দেন বিভিন্ন স্কুলে ৷ পথ কুকুরদের উপর যে হারে অত্যাচার হচ্ছে ৷ তা যাতে কমানো যায়, সেই বিষয়ে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলকে সচেতন করছেন দু’জনে ৷
আরও পড়ুন: