কলকাতা, 10 এপ্রিল : সরকারি সিদ্ধান্তে বিভ্রান্ত হচ্ছেন রাজ্যের বাসিন্দারা । যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে এই অভিযোগ করলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী । রাজ্য সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি । এখনও কেন স্বাস্থ্যকর্মীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সুরক্ষা পেল না তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চেয়েছেন ৷ আজ ফোনেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি ৷ সেখানেও ফের তাঁর অভিযোগগুলি জানান ৷
কোরোনার সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে 21 দিনের লকডাউন চলছে ৷ আর এই লকডাউনের ফলে সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই । সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, "খাদ্য নেই । টাকা-পয়সা নেই । একে গৃহবন্দী তার উপর সরকারের পদক্ষেপগুলি মানুষকে খুবই বিপদে ফেলছে । রাজ্যজুড়ে চিকিৎসার হাল যথেষ্ট খারাপ । সরকারের অপদার্থতায় প্রতিদিন সংকট বাড়ছে । মানুষ অসহায় । তথ্য গোপনের ধাক্কা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে রাজ্যের চিকিৎসক, হাসপাতালের সুপার, স্বাস্থ্যকর্মীরাও অসহায়তার শিকার ৷" রাজ্য সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারের পাশেই যে সকলে রয়েছে তা আর একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে করিয়ে দেন তিনি ।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যে রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে । থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু সহ অনেকে বিপদে । এইরকম সময় স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরি । কিন্তু অতি সম্প্রতি সরকারই সামাজিক রক্তদান শিবির বাতিল করে দিচ্ছে । 4 ও 5 এপ্রিল কলকাতা কেন্দ্রিক কয়েকটি জায়গায় 76টি রক্তদান শিবির সরকার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কেন?
সুজন চক্রবর্তী বলেন, "আজ কলকাতায় একজন বামপন্থী কাউন্সিলরের উদ্যোগে রক্তদান শিবির হয় । অনুমোদিত 30জন রক্তদান করার পর সংগঠকদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । শাসক দলের নেতাদের নির্দেশে জঘন্য অপরাধ চলছে । সরকার রক্তের জোগান দিতে পারছে না । অথচ সামাজিক রক্তদান শিবির বন্ধ করতে চাইছে কেন? রক্তদান শিবির সংক্রান্ত সরকারি আদেশ না মানায় কি কোনও বদল হয়েছে? তাহলে এই বেআইনি কাজ কেন? পুলিশ রক্ত দিলে তা অবশ্যই সাধুবাদ । কিন্তু পুলিশ ছাড়া কেউ রক্তদান শিবির করতে পারবে না এরকম মনোভাব কার মস্তিষ্কপ্রসূত? সমাজবিচ্ছিন্ন স্বেচ্ছাচারী এই মনোভাব । এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা । মেনে নেওয়া যায় না । সরকারের ব্যর্থতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকট হচ্ছে ।"
ত্রাণ বিলি নিয়ে তিনি বলেন, "গরিব মানুষের কাছে খাদ্যের প্যাকেট পৌঁছানো, অর্থসংস্থান, চিকিৎসার বন্দোবস্ত, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা, রক্তের জোগান, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে যেন আর অসুবিধায় পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করুন মুখ্যমন্ত্রী । মানুষের বিপদের সময় এটা । দায়বদ্ধভাবে সবাইকে যুক্ত করেই আমাদের চলতে হবে । ব্যক্তি কিংবা রাজনীতির স্বার্থে অথবা কারও অনুগ্রহ লাভের এটা সময় নয় । মানুষের পাশে থাকা জরুরি । মানুষকে সার্বিকভাবে বাঁচানোই এখন মূল কাজ । অনুপ্রেরণা নয়, চিকিৎসা এবং সমাজবিজ্ঞানের নীতিসমূহ মান্য করেই কোরোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে ।"