কলকাতা, 8 জুলাই : সরকারি কোভিড হাসপাতালে কোরোনা রোগীর চিকিৎসা বিনামূল্যে হলেও বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ বহন করতে হচ্ছে রোগী অথবা তাঁর পরিজনদের । তবে, বেসরকারি কোনও কোভিড হাসপাতালে কোনও রোগীকে সরকারের তরফে স্থানান্তর করা হলে ওই রোগীর চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করছে । সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে কলকাতায় সাতটি কোভিড হাসপাতালে রয়েছে 2059 টি বেড । এর মধ্যে 1685 টি সরকারি, 374 টি বেসরকারি হাসপাতালের বেড । 1685 বেডের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে 515 টি ।
কলকাতায় রাজ্য সরকার স্বীকৃত সাতটি কোভিড হাসপাতাল রয়েছে । এর মধ্যে চারটি সরকারি এবং তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল । কলকাতায় অবস্থিত এই কোভিড হাসপাতালগুলিতে কত সংখ্যক বেড রয়েছে?
সরকারি হাসপাতাল -
1. কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, 500 টি বেড
2. ইনফেকশাস ডিজ়িজ়েস অ্যান্ড বেলেঘাটা জেনেরাল (ID&BG) হাসপাতাল, 115টি বেড
3. এম আর বাঙুর হাসপাতাল, 670টি বেড
4. চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট (নিউটাউন), 400টি বেড
বেসরকারি হাসপাতাল-
1. AMRI সল্টলেক, 61টি বেড
2.ডিসান হাসপাতাল, 113টি বেড
7. KPC মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, 200টি বেড
কোভিড হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য খরচ কত?
সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে । যে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার, সেই হাসপাতালগুলিতে যে সব কোরোনা রোগীকে চিকিৎসার জন্য সরকার পাঠাচ্ছে, সেই রোগীদের চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকার বহন করছে ।
তবে, বেসরকারি কোনও কোভিড হাসপাতালেও কোনও কোরোনা রোগী ভরতি হতে পারেন । এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ ওই রোগী অথবা তাঁর পরিজনদের বহন করতে হবে । কোরোনা নয় এমন কোনও রোগীর ক্ষেত্রে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেভাবে খরচ হয়, কোরোনা রোগীদের ক্ষেত্রেও সেভাবে খরচ হয় । তবে, এই খরচের সঙ্গে যুক্ত হবে কোরোনা টেস্ট, চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য PPE (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট), মাস্ক সহ অন্যান্য সামগ্রী, স্যানিটাইজ়ার , চিকিৎসকের পরামর্শ, নার্সের জন্য খরচ । রোগীকে কোন ধরনের বেডে রাখা হবে অর্থাৎ জেনেরাল বেড না ICU-তে রাখা হবে, না ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখা হবে, তার উপরও নির্ভর করে খরচ কত হবে । কোনও কোরোনা রোগীকে যদি 14 দিনের জন্য জেনেরাল বেডে রাখা হয়, তা হলে 1 লাখ 50 হাজার থেকে 1 লাখ 80 হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে । ICU অথবা ভেন্টিলেশনে প্রথম দিন থেকে কোনও কোরোনা রোগীকে রাখা হলে প্রথম দিন সব থেকে বেশি খরচ পড়ে । কারণ প্রথম দিন বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় । এ ক্ষেত্রে ICU-তে প্রথম দিন 60-65 হাজার থেকে 75-80 হাজার টাকা খরচ হতে পারে । ভেন্টিলেশনের ক্ষেত্রে 70-80 থেকে 90-95 হাজার টাকা খরচ হতে পারে । পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরেও করা হতে পারে । তার উপর রয়েছে রোগীর শারীরিক অবস্থা । এ সবের উপর নির্ভর করে বাড়তে থাকে চিকিৎসার খরচ । বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কোরোনা চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মহলে । 26 জুন রাজ্য সরকার এক নির্দেশে জানিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি কোনও কোরোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য PPE-সহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর ক্ষেত্রে প্রতিদিনের খরচ 1 হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না । প্রতিদিন চিকিৎসকদের পরামর্শের জন্য খরচ 1 হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না । বেসরকারি হাসপাতালে কোরোনা টেস্টের জন্য অনেক বেশি খরচ নেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল । 26 জুন সরকারের ওই নির্দেশে জানানো হয়েছে কোরোনা টেস্টের জন্য 2250 টাকার বেশি নেওয়া যাবে না ।
সরকারি কোভিড হাসপাতাল এবং সরকার স্বীকৃত বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিতে কীভাবে রোগীদের ভরতি নেওয়া হয়? কীভাবে কোরোনা টেস্ট করা হয়?
জ্বর-সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কোনও রোগীকে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করানো হলে তাঁর কোরোনা টেস্ট করানো হয় । এক্ষেত্রে টেস্টের রিপোর্ট যদি পজ়িটিভ আসে তাহলে ওই হাসপাতালে যদি কোরোনা রোগীদের জন্য বেড থাকে, তা হলে ওই বেডে রোগীকে স্থানান্তর করা হয় । যদি বেড না থাকে তা হলে কোনও কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় । অন্য কোনও চিকিৎসার প্রয়োজনে কোনও রোগীকে ভরতি করানো হলে কোরোনা টেস্টের রিপোর্টে যদি পজ়িটিভ আসে, এ ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যবস্থা করা হয় । বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কোনও রোগী যেতে পারেন । চিকিৎসকের পরামর্শে যদি কোরোনা টেস্ট করানো হয়, এক্ষেত্রে যদি কোরোনা পজ়িটিভ আসে, তা হলে ওই হাসপাতালে কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেড থাকলে ওই রোগীকে ভরতি করানো যেতে পারে । রোগী অন্য কোনও হাসপাতালে ভরতি হতে চাইলেও সেখানে তিনি যেতে পারেন । সরকারি কোনও হাসপাতাল থেকে কোরোনা কোনও রোগীকে বেসরকারি কোনও কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করানো হতে পারে ।
সরকারি কোনও কোরোনা হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে কোনও রোগীকে নিয়ে যাওয়া হলে, ওই রোগীকে ভরতি নেওয়া হতে পারে । কোরোনা টেস্টের রিপোর্টে কোরোনা পজ়িটিভ পাওয়া গেলে ওই হাসপাতালের কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেডে স্থানান্তর করা হয় । কোরোনা হাসপাতাল নয়, এমন কোনও হাসপাতালে কোনও চিকিৎসার প্রয়োজনে কোনও রোগীকে ভরতি করানো হলে যদি কোনও কারণে ওই রোগীর কোরোনা টেস্টের রিপোর্টে কোরোনা পজ়িটিভ পাওয়া যায়, তা হলে ওই রোগীকে কোনও সরকারি কোরোনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় । কারও ক্ষেত্রে কোরোনা টেস্টের ক্ষেত্রে যখন সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়, তখন প্রতিটি নমুনার জন্য SRF ID তৈরি করা হয় । অনলাইনে ICMR (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ)-এর ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপের মাধ্যমে তৈরি হয় এই ID । কোরোনা টেস্টের রিপোর্ট পজ়িটিভ বা নেগেটিভ যা-ই আসুক না কেন, সেই তথ্য ICMR-এর ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হয় । যাঁর কোরোনা টেস্ট করানো হচ্ছে, তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর নিয়ে রাখা হয়। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে যোগাযোগ করা হয় ।
কোরোনা রোগীদের জন্য সিম্পটোম্যাটিক এবং সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট করা হয় । সিম্পটোম্যাটিক অর্থাৎ কোনও উপসর্গ থাকলে, সেই উপসর্গ প্রশমনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয় । এর সঙ্গে সাপোর্টিভ অর্থাৎ সহযোগী চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে । উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসার জন্য গোটা বিশ্বে পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ব্যবহার হচ্ছে । এ সবের মধ্যে রয়েছে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, রেমডেসিভির, ডেক্সামিথাসন, ফেভিপিরাভির ।