কলকাতা, 1 জুলাই : বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার দিন কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । ঘটনায় মারা যান চারজন । সেই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি । সেই সূত্রে সিআইডি’র গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিকবার তলব করেছিলেন কোচবিহারের তৎকালীন পুলিশ সুপার দেবাশিস ধরকে । তখন তিনি সিআইডি’কে যে বয়ান দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ফরেন্সিকের ব্যালেস্টিক রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে তার কোনও মিল নেই বলে জানা যাচ্ছে ৷ ফলে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়েছেন সিআইডি’র সিটের গোয়েন্দারা ৷
কোচবিহার জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার দেবাশিস ধরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তে অনেকটাই ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা । কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি দু’বার দেবাশিস ধরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিআইডির আধিকারিকরা । সে সময় তাঁর কাছ থেকে চরম উদাসীনতা এবং হতাশাজনক মন্তব্যের সম্মুখীন হয়েছেন গোয়েন্দারা । এমনকি বর্তমানে সাসপেন্ডেড আধিকারিক দেবাশিস ধর সিআইডির আধিকারিকদের একেক সময়, একেক রকম তথ্য দিয়েছেন 10 এপ্রিলের গুলি চালানোর ঘটনার ।
ফলে গোয়েন্দাদের অনুমান, কোনও একটা বিষয় তিনি আড়াল করার চেষ্টা করছেন ৷ হতে পারে এই আড়াল করার নেপথ্যে রয়েছে বড় কোনও চক্রান্ত ৷ গোয়েন্দাদের মতে, একজন পুলিশ আধিকারিক হতে গেলে তাঁকে বেশ কিছু ক্রিমিনাল ম্যানুয়াল এবং পুলিশি ম্যানুয়াল অনুসরণ করতে হয় । সেই সমস্ত কিছুই দেবাশিস ধর মানেননি । যেমন শীতলকুচিতে দু’টি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল । একটি বুথের ভিতরে এবং অপরটি বুথের বাইরে । সেক্ষেত্রে প্রথম ক্ষেত্রে দেবাশিস ধরের নেতৃত্বে একটি মাত্র এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল ।
সেই নিয়ে গোয়েন্দারা তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল, দু’টি গুলি চালানোর ঘটনায় একটি মাত্র এফআইআর কী করে হতে পারে ? সে ক্ষেত্রে জবাব আসে দু’টোই যেহেতু গুলি চালানোর ঘটনা এবং এই দুই গুলি চালানোর ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৷ ফলে তাঁর মনে হয়েছে একটি এফআইআর দায়ের করলেই গোটা ঘটনাটি সম্পন্ন হবে । যদিও পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, একই ধরনের ঘটনা হলেও, দু’টি জায়গার ঘটনায়, দু’টি পৃথক এফআইআর দায়ের করতে হয় ।
আরও পড়ুন : শীতলকুচি কাণ্ডে প্রাক্তন পুলিশ সুপারের বক্তব্যে অসংগতি, ফের তলবের সম্ভাবনা
জানা গিয়েছে, তদন্তে গতি পেতে বেশ কয়েকজন আধিকারিককে ফের একবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে হতে পারে । এদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাথাভাঙ্গা থানার আইসি বিশ্বেশ্বর রায় । তাছাড়াও, রয়েছেন শীতলকুচিতে ওইদিন থাকা কুইক রেসপন্স টিমের প্রধান সুব্রত মণ্ডল এবং তৎকালীন সেক্টর অফিসার রাফা বর্মন । তাঁদের বয়ান এখন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু, তাঁদের ফের কবে ডাকা হবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি ৷