কলকাতা, 11 জুলাই: বিধানসভা নির্বাচনে যখন রাজ্যজুড়ে ঘাসফুল ঝড়ে বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়ে যায়, সেই সময় দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়ে তৃণমূলকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিলেন আইএসএফ-এর নওশাদ সিদ্দিকী ৷ অনেকটা একই রকম চমক পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মিলল ভাঙড়ে ৷ তৃণমূলকে হারতে হল এমন একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে, যেখানে বাড়ি ওই অঞ্চলের দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের ৷ স্বাভাবিকভাবে এই নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে ৷ কিন্তু এই জয়ের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না ভাঙড়ের জমিরক্ষা কমিটির নেতা অলীক চক্রবর্তী ৷ তিনি বলছেন, ‘‘বন্দুকের নলের সামনে ব্যালাট বক্সে মানুষের জবাব ।’’
ভাঙড়ের পোলেরহাট-2 গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে স্থানীয় জমিরক্ষা কমিটি ৷ ওই জয়ের অন্যতম কারিগর জমিরক্ষা কমিটি তথা সিপিআইএমএল নেতা অলীক চক্রবর্তী ৷ জয়ের পর ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আরাবুল এবং তাঁর ছেলের অত্যাচার দিনের পর দিন গ্রামবাসীরা সহ্য করেছে । শাসকদলের অত্যাচার ও তাদের এই হিংসাত্মক ভাবধারাকে উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ শাসক দলের এইসব নেতার বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যালট বক্সে নিজের মাতাধিকার প্রয়োগ করেছেন । তাতে আমি বেজায় খুশি ।’’
আরও পড়ুন: অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল, জেলায় জেলায় শুরু বিজয়োল্লাস; দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি
তাঁর আরও দাবি, সন্ত্রাসের এই ভাবধারা এবং শাসকদলের এই হিংসাত্মক রূপকে আর সমর্থন করছেন না সাধারণ মানুষ । গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ বুঝতে শিখে গিয়েছেন, সন্ত্রাস যতই হোক না কেন শেষ কথা তাঁরাই বলবেন । তিনি আরও বলেন, ‘‘এই জয়ের মাধ্যমে জনগণের সন্ত্রাসের প্রতি যে ঘৃণা তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । শাসকদলের এই দুর্নীতি ও রক্তাক্ত কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করার জন্য সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে । আমি আশা করি যে সাধারণ মানুষের এই ভাবধারা এবং সচেতনতা ধীরে ধীরে পুরো ভাঙড়ের উপরেই পড়বে ।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে তৃণমূল যেভাবে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল, তাঁরা সেই পথে হাঁটবেন না ৷ বরং পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী সাধারণ মানুষের জন্য তাঁরা কাজ করবেন ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই জমি রক্ষা কমিটির উৎপত্তি হয় 2016 সালে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকে হাতিয়ার করে । ওই আন্দোলনকে সামনে রেখে জমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের উত্থান হয় । জমি জীবিকা ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি বা জমি রক্ষা কমিটি তৈরি হয় । 2018 সালে এই পোলেরহাটে দাপট দেখিয়েছিল জমিরক্ষা কমিটির সদস্যরা ।
তার পর 2021 সালে ভাঙড়ে জয়লাভ করেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । এর পরেই ধীরে ধীরে আইএসএফ সমর্থকরা পুরো ভাঙড় জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আইএসএফ ও তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের মধ্যে মনোনয়ন পত্র পেশ করাকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁধে । সেই ঘটনায় মোট তিনজনের মৃত্যুর খবর সামনে আসে ।
আরও পড়ুন: নিজের গড়ে জমি রক্ষা কমিটির কাছে হার, রাগে গণনাকেন্দ্র ছাড়লেন আরাবুল