ETV Bharat / state

Garia Protyoy for Poors খড়কুটোর ঘরে শুধুই ভোট চাওয়া, প্রত্যয়ের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠার স্বপ্নে বুঁদ বাচ্চারা

author img

By

Published : Aug 23, 2022, 2:31 PM IST

Updated : Aug 23, 2022, 2:46 PM IST

ভারতমাতা ক্লাবঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাচ্চারা ৷ কখনও তারা গান গায় আমরা সবাই রাজা, কখনও কবিতা সাত ভাই চম্পা ৷ রঙ নিয়ে আঁকিবুঁকি কেটে অবাক করে দেয় ৷ রাস্তাঘাটে সাজুগুজু করা বাচ্চাদের থেকে এরা কয়েক আলোকবর্ষ দূরে ৷ এদের অক্সিজেন দিয়েছে প্রত্যয় ৷ রইল তার গল্প (Garia Protyoy for Poors) ৷

Garia Protyoy Classroom
গড়িয়ায় প্রত্যয়ের ক্লাসঘর

কলকাতা, 23 অগস্ট: লকডাউনের এক বুধবার দুপুরে বাড়িতে কাজ সেরে খেয়ে উঠেছেন কর্ত্রী ৷ এমন সময় ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে উঠল ৷ দরজা খুলে তিনি দেখেন দু'টি বাচ্চা ভিক্ষে চাইতে এসেছে ৷ কোথাও যেন একটা ধাক্কা লাগল ৷ ঘরে চাল, ডাল, যা কিছু ছিল, তাই দিয়ে সেদিনের মতো তাদের বিদায় দিলেন চন্দ্রাণী দাশগুপ্ত ৷ তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন ৷ সেই সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছিলেন ৷ ওই বাচ্চাদের শনিবার আসতে বললেন ৷ সেদিন তিনি এক মাসের চাল, ডাল, তেল, নুন- সব মিলিয়ে সংসার চালানোর মতো সামগ্রী নিয়ে বাচ্চাদের বাড়ি থুড়ি একচালার ঘরে গেলেন ৷ সেই শুরু (Protyoy social organization working for poors in Garia Slum area) ৷

সেদিন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায় জলপোল বস্তিতে বাচ্চাদের দুরবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠেছিল ৷ এই বস্তিটি সোনারপুর পৌরসভার 1 নং ওয়ার্ড, কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ৷ চন্দ্রাণী দাশগুপ্ত জানালেন, ওই বাচ্চাদের মায়ের হাঁপানি রয়েছে ৷ তিনি কোনও কাজ করার মতো অবস্থায় নেই ৷ এদিকে বাবাও নিখোঁজ ৷ তাই বাচ্চাগুলি বাধ্য হয়ে ভিক্ষে চাইতে বেরিয়েছে ৷ এমন অনেক বাচ্চা ও দুঃস্থ পরিবারের সন্ধান পেলেন ওই বস্তিতে ৷ করোনা মহামারিতে লকডাউনের কোপে কোনও বাচ্চার পেশায় দিনমজুর বাবা কাজ হারিয়েছেন ৷ কারও বা মায়ের পরিচারিকার কাজ গিয়েছে ৷ তার মধ্যে এই বস্তিতে একটি শৌচালয় ব্যবহার করে 50টি পরিবার ৷ তার মাথায় নেই কোনও ছাদ ৷ চারপাশে শুধুমাত্র প্লাস্টিক ৷ অন্য কিছু করার কথা ভাবলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী চন্দ্রাণী ৷

আরও পড়ুন: ছুটিতে স্বদেশে এসে পড়ুয়াদের ইংরেজি শেখাচ্ছে লন্ডনের আরাত্রিকা

একটি পরিবারকে একমাসের সামগ্রী দিলেই তো সমস্যা মিটবে না ৷ তাই অফিসের সহকর্মীদের বিষয়টি জানালেন চন্দ্রাণী দাশগুপ্ত ৷ অনেককেই পাশে পেলেন ৷ 20 জন সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন এবং সেইমতো চাঁদা তুলে মাসে মাসে এই অভাবী পরিবারগুলিকে চাল, ডাল, নুন, তেল জোগানোর দায়িত্ব নিলেন ৷ সূচনা 'প্রত্যয়'-এর ৷

গড়িয়ার জলপোল বস্তি এলাকার বাচ্চাদের আনন্দের ঠিকানা প্রত্যয়

দু'বছর কেটে গিয়েছে ৷ ছবিটাও বদলেছে ৷ এখানকার বাচ্চারা গড়িয়া ভারতমাতা ক্লাবে নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত 'প্রত্যয়ে'র ঘরে আসে পড়াশোনা করতে ৷ তিন বছর থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি বাচ্চা, কিশোর-কিশোরীর সংখ্যাই বেশি ৷ 60 জন বাচ্চাকে নিয়মিত পড়ানোর জন্য 10 জন শিক্ষক আছেন ৷ আঁকা ও গান শেখে 50 জন বাচ্চা, নাচে উৎসাহী 20 জন, ব্যায়াম শেখে 15 জন বাচ্চা ৷ এছাড়া সেলাই শেখে 15 জন ৷ এদের এ সবকিছু শেখাতে স্থানীয় সদ্য স্নাতক হওয়া এবং স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করছেন, এমন তরুণ-তরুণীদের বেছে নিয়েছেন চন্দ্রাণী এবং তাঁর 'প্রত্যয়ে'র সদস্যরা ৷

গত দু'বছরে 'প্রত্যয়ে'র সদস্য সংখ্যা 20 থেকে বেড়ে 40 জন হয়েছে ৷ চলছে সবহারানো বাচ্চাদের লেখাপড়া, গান, নাচ, আঁকা, সেলাই । আরেকদিকে বাড়িতে যাচ্ছে রেশন । উৎসবে বাচ্চাদের নতুন নতুন পোশাকও দেয় প্রত্যয় । রাজস্থানের একটি সমাজসেবী সংস্থা 'মোগলি গ্রুপ'-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে । তারা পুজোতে এই সহায়সম্বলহীন বাচ্চাদের জন্য পোশাক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে । অষ্টম শ্রেণির পর কেউ পড়াশোনা করতে না চাইলে, তার জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা আছে । সেলাই থেকে শুরু করে মোবাইল মেরামতি, যাতে যে কোনও ভাবে বাচ্চাটি ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ৷ ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে প্রত্যয়ের কথা হয়েছে । মিশন কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, জানালেন চন্দ্রাণী ।

আরও পড়ুন: কলকাতার বস্তিবাসীরা পাচ্ছেন বাড়ির জন্য বিশেষ নম্বর

'আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে', শিক্ষিকাদের পাশে দাঁড়িয়ে রবিঠাকুরের গান গাইছে বাচ্চারা ৷ বাকিরা বসে গলা মেলাচ্ছে ৷ ঘরটা কেমন ভরে উঠেছে আগামী রাজাদের আওয়াজে ৷ প্রত্যয় চায় সব বাচ্চাগুলিকে হাসিখুশিতে, আনন্দে রাখতে ৷ বাচ্চারাও এখানে এসে উৎসাহ পায় পড়াশোনা করার ৷ না, কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি ৷ ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা আসেন এই কিছু-না-থাকা খড়কুটোর ছাউনিতে ৷ খড়কুটোর এই মানুষগুলির কাছে হাত জোড় করে ভোট চান ৷ ভোট মিটে গেলে আর এদিকে দেখা যায় না তাঁদের ৷ বৃষ্টিতে জল ঢুকে যায় ঘরে ৷ মায়েরা সব ফেলে পরিচারিকার কাজ করতে যান ৷ ইলেকট্রিক কখনও থাকে না, কখনও থাকে না ৷ এ ভাবেই দিন চলে, রাত কাটে ৷

'মুক্তির মন্দির সোপানতলে/কত প্রাণ হলো বলিদান/লেখা আছে অশ্রুজলে', ওই ক্লাব থেকে আওয়াজ আসছে ৷ সবহারাদের সম্বল 'প্রত্যয়' ৷

কলকাতা, 23 অগস্ট: লকডাউনের এক বুধবার দুপুরে বাড়িতে কাজ সেরে খেয়ে উঠেছেন কর্ত্রী ৷ এমন সময় ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে উঠল ৷ দরজা খুলে তিনি দেখেন দু'টি বাচ্চা ভিক্ষে চাইতে এসেছে ৷ কোথাও যেন একটা ধাক্কা লাগল ৷ ঘরে চাল, ডাল, যা কিছু ছিল, তাই দিয়ে সেদিনের মতো তাদের বিদায় দিলেন চন্দ্রাণী দাশগুপ্ত ৷ তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন ৷ সেই সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছিলেন ৷ ওই বাচ্চাদের শনিবার আসতে বললেন ৷ সেদিন তিনি এক মাসের চাল, ডাল, তেল, নুন- সব মিলিয়ে সংসার চালানোর মতো সামগ্রী নিয়ে বাচ্চাদের বাড়ি থুড়ি একচালার ঘরে গেলেন ৷ সেই শুরু (Protyoy social organization working for poors in Garia Slum area) ৷

সেদিন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায় জলপোল বস্তিতে বাচ্চাদের দুরবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠেছিল ৷ এই বস্তিটি সোনারপুর পৌরসভার 1 নং ওয়ার্ড, কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন ৷ চন্দ্রাণী দাশগুপ্ত জানালেন, ওই বাচ্চাদের মায়ের হাঁপানি রয়েছে ৷ তিনি কোনও কাজ করার মতো অবস্থায় নেই ৷ এদিকে বাবাও নিখোঁজ ৷ তাই বাচ্চাগুলি বাধ্য হয়ে ভিক্ষে চাইতে বেরিয়েছে ৷ এমন অনেক বাচ্চা ও দুঃস্থ পরিবারের সন্ধান পেলেন ওই বস্তিতে ৷ করোনা মহামারিতে লকডাউনের কোপে কোনও বাচ্চার পেশায় দিনমজুর বাবা কাজ হারিয়েছেন ৷ কারও বা মায়ের পরিচারিকার কাজ গিয়েছে ৷ তার মধ্যে এই বস্তিতে একটি শৌচালয় ব্যবহার করে 50টি পরিবার ৷ তার মাথায় নেই কোনও ছাদ ৷ চারপাশে শুধুমাত্র প্লাস্টিক ৷ অন্য কিছু করার কথা ভাবলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী চন্দ্রাণী ৷

আরও পড়ুন: ছুটিতে স্বদেশে এসে পড়ুয়াদের ইংরেজি শেখাচ্ছে লন্ডনের আরাত্রিকা

একটি পরিবারকে একমাসের সামগ্রী দিলেই তো সমস্যা মিটবে না ৷ তাই অফিসের সহকর্মীদের বিষয়টি জানালেন চন্দ্রাণী দাশগুপ্ত ৷ অনেককেই পাশে পেলেন ৷ 20 জন সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন এবং সেইমতো চাঁদা তুলে মাসে মাসে এই অভাবী পরিবারগুলিকে চাল, ডাল, নুন, তেল জোগানোর দায়িত্ব নিলেন ৷ সূচনা 'প্রত্যয়'-এর ৷

গড়িয়ার জলপোল বস্তি এলাকার বাচ্চাদের আনন্দের ঠিকানা প্রত্যয়

দু'বছর কেটে গিয়েছে ৷ ছবিটাও বদলেছে ৷ এখানকার বাচ্চারা গড়িয়া ভারতমাতা ক্লাবে নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত 'প্রত্যয়ে'র ঘরে আসে পড়াশোনা করতে ৷ তিন বছর থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি বাচ্চা, কিশোর-কিশোরীর সংখ্যাই বেশি ৷ 60 জন বাচ্চাকে নিয়মিত পড়ানোর জন্য 10 জন শিক্ষক আছেন ৷ আঁকা ও গান শেখে 50 জন বাচ্চা, নাচে উৎসাহী 20 জন, ব্যায়াম শেখে 15 জন বাচ্চা ৷ এছাড়া সেলাই শেখে 15 জন ৷ এদের এ সবকিছু শেখাতে স্থানীয় সদ্য স্নাতক হওয়া এবং স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করছেন, এমন তরুণ-তরুণীদের বেছে নিয়েছেন চন্দ্রাণী এবং তাঁর 'প্রত্যয়ে'র সদস্যরা ৷

গত দু'বছরে 'প্রত্যয়ে'র সদস্য সংখ্যা 20 থেকে বেড়ে 40 জন হয়েছে ৷ চলছে সবহারানো বাচ্চাদের লেখাপড়া, গান, নাচ, আঁকা, সেলাই । আরেকদিকে বাড়িতে যাচ্ছে রেশন । উৎসবে বাচ্চাদের নতুন নতুন পোশাকও দেয় প্রত্যয় । রাজস্থানের একটি সমাজসেবী সংস্থা 'মোগলি গ্রুপ'-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে । তারা পুজোতে এই সহায়সম্বলহীন বাচ্চাদের জন্য পোশাক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে । অষ্টম শ্রেণির পর কেউ পড়াশোনা করতে না চাইলে, তার জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা আছে । সেলাই থেকে শুরু করে মোবাইল মেরামতি, যাতে যে কোনও ভাবে বাচ্চাটি ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ৷ ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে প্রত্যয়ের কথা হয়েছে । মিশন কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, জানালেন চন্দ্রাণী ।

আরও পড়ুন: কলকাতার বস্তিবাসীরা পাচ্ছেন বাড়ির জন্য বিশেষ নম্বর

'আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে', শিক্ষিকাদের পাশে দাঁড়িয়ে রবিঠাকুরের গান গাইছে বাচ্চারা ৷ বাকিরা বসে গলা মেলাচ্ছে ৷ ঘরটা কেমন ভরে উঠেছে আগামী রাজাদের আওয়াজে ৷ প্রত্যয় চায় সব বাচ্চাগুলিকে হাসিখুশিতে, আনন্দে রাখতে ৷ বাচ্চারাও এখানে এসে উৎসাহ পায় পড়াশোনা করার ৷ না, কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি ৷ ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা আসেন এই কিছু-না-থাকা খড়কুটোর ছাউনিতে ৷ খড়কুটোর এই মানুষগুলির কাছে হাত জোড় করে ভোট চান ৷ ভোট মিটে গেলে আর এদিকে দেখা যায় না তাঁদের ৷ বৃষ্টিতে জল ঢুকে যায় ঘরে ৷ মায়েরা সব ফেলে পরিচারিকার কাজ করতে যান ৷ ইলেকট্রিক কখনও থাকে না, কখনও থাকে না ৷ এ ভাবেই দিন চলে, রাত কাটে ৷

'মুক্তির মন্দির সোপানতলে/কত প্রাণ হলো বলিদান/লেখা আছে অশ্রুজলে', ওই ক্লাব থেকে আওয়াজ আসছে ৷ সবহারাদের সম্বল 'প্রত্যয়' ৷

Last Updated : Aug 23, 2022, 2:46 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.