কলকাতা, 18 নভেম্বর : দীর্ঘ আট বছর পর গড়বেতায় ফিরতে চলেছেন অঞ্চলের এককালের দাপুটে নেতা, প্রাক্তন CPI(M) বিধায়ক এবং গড়বেতার এককালের বেতাজ বাদশা সুশান্ত ঘোষ৷ সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিক্রমে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি ফিরবেন গড়বেতায় এমনি জানা যাচ্ছে তার অনুগামীদের সূত্রে৷ এদিকে গড়বেতাতে ফেরার পর কী হবে তার পরবর্তী পদক্ষেপ সেই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলের।
জল্পনার কারণ অনেকগুলি। গত সেপ্টেম্বর মাসে দলবিরোধী কাজের জন্য পার্টি ঘোষকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছে, যে শাস্তি তাঁর এখনও বহাল৷ শাস্তি নিয়ে একবারও পার্টি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি তিনি৷ কিন্তু গড়বেতা এবং এবং সংলগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তৃত অঞ্চলে আজও তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রচুর।
তাই এখন প্রশ্ন হচ্ছে পার্টির সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে CPI(M)-র হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টার প্রধান মুখ কি আবার হয়ে উঠবেন সুশান্ত ঘোষ? নাকি পার্টির সঙ্গে আরও দূরত্ব বাড়বে তার?এর ফলশ্রতিতে হয় তাঁর রাজনৈতিক সন্ন্যাস, নয় অন্য কোনও দল গঠন, নাকি অন্য কোনও দলে যোগদান এই নিয়েই জল্পনা চলেছে রাজনৈতিক মহলে৷ এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনৈতিক পটভূমিকায় অনেক অদলবদল হয়েছে৷ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এককালের লাল কেল্লার এই জেলায় প্রধান শক্তি আজ BJP৷ এর মধ্যে ঘোষের প্রত্যায়বর্তনে জেলায় রাজনৈতিক নাটক আরও জমবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল৷
ঘোষকে যোগাযোগ করা হলে ETV ভারতকে জানান, যে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে আমি কোনও দিন দলের হয়ে কাজ করেননি। "আমি চিরকালই দলের এবং মানুষের হয়ে কাজ করে এসেছি৷ আগামী দিনেও আমি একই কাজ করে যাবো৷ সুপ্রিম কোর্টের উপর আস্থা চিরকালই বহাল ছিল৷ আগামীতেও থাকবে৷"
2011 সালে বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে গ্রেপ্তার হন ঘোষ৷ তার পরের বছরই জামিন পান তিনি৷ কিন্তু 2012 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট সুশান্তকে জামিন দিলেও শর্ত ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ফিরতে পারবেন না৷ টানা সাত বছর আইনি লড়াই লড়েছেন তিনি৷ গড়বেতায় তিনি ঢুকলে ফের অশান্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়ে অভিযোগ করেছিল রাজ্য সরকার৷ তার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিলেন ঘোষ৷ অবশেষে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে জেলায় না ফেরার শর্ত উঠিয়ে নেওয়া হল৷ ফলে তাঁর আর জেলায় ফেরার পথে কোনও বাধা রইলো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘোষ-ঘনিষ্ঠ এক CPI(M) নেতার কথায়, "টানা তিরিশ ঘণ্টার বেশি হাতলবিহীন চেয়ারে বসিয়ে CID জেরা করেও ওঁর মুখ দিয়ে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে, CPI(M)-র বিরুদ্ধে একটি কথাও বলাতে পারেনি৷ ওঁর চোয়াল শক্ত করা জেদের কাছে বার বার হার মেনেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ এই দশকের সব থেকে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ একের পর এক সাজানো অভিযোগ৷ ওকে টলানো যায়নি লালঝান্ডার প্রতি অকৃত্রিম দায়বদ্ধতা থেকে৷"