কলকাতা, 3 এপ্রিল: অনেক টানাপোড়েনের পর অবশেষে রাজ্যের লক্ষ্মীলাভ । রাজ্যের কোষাগারে ঢুকল কেন্দ্রের টাকা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা শেষের 24 ঘণ্টার মধ্যেই ঢুকল মিড ডে মিলের 638 কোটি টাকা । তবে 100 দিনের বকেয়া টাকা না-মিটিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে কেন্দ্র - এই অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু দিন ধরনায় বসলেও সেই টাকা ঢোকেনি ৷
রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে, মমতার ধরনার চাপের মুখে পড়েই রাজ্যকে টাকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র । ধরনায় কেন্দ্রের বঞ্চনাকেই প্রধান হাতিয়ার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । তাই রাজ্যের মানুষের এই নিয়ে কেন্দ্রের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে এই নিয়েও আশংকা রয়েছে কেন্দ্রের শাসকদলের । তাই তড়িঘড়ি টাকা পাঠানো । অন্তত এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।
অন্যদিকে, এ বার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় আনা হল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন এবং বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদেরও । যে কার্ডের কথা শুনলে বেশিরভাগ বেসরকারি এমনকী কিছু সরকারি হাসপাতালও পিঠটান দেয়, সেই কার্ডের ছাতার তলায় আনা হচ্ছে আরও মানুষজনকে । একদিকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, রাজ্যের ভাঁড়ার শূন্য ৷ এই অবস্থায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা প্রয়োজনে এই কার্ড যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন কি না এই নিয়ে সংশয় রয়েছে বিরোধীদের । পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল সরকারের এটা একটা গিমিক মাত্র ? এমনই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা ।
বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, মিড ডে মিলের একটা কিস্তির টাকা যে কেন্দ্র রাজ্যকে দেবে, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জেনে গিয়েছিলেন । তাই জেনে শুনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্নায় বসেছিলেন । রাজ্য সরকার হিসাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়াতে কেন্দ্রের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, মিড ডে মিলের একটা কিস্তির টাকা পাঠানো হবে ।
এর আগেও একটা কিস্তির টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী কোনও ধরনায় বসেননি - এমনই যুক্তি রাহুলের । তাঁর দাবি, মমতা বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন । এ ভাবে তৃণমূল সরকার নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে বলে দাবি রাহুলের । তিনি বলেন, এতে কিছু যায় আসে না । কারণ মানুষ বুঝেছে বর্তমান সরকার মানুষের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বিষয় রাহুল বলেন, "এটা লোক ঠকানোর আরেকটা উপায় । স্বাস্থ্যসাথী আসলে অস্বাস্থ্যসাথী । সরকারি হাসপাতালে এই কার্ডের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না ৷ বেসরকারি হাসপাতালে তো এই কার্ড দেখলে প্রথমেই নাকচ করে দেওয়া হয় । এই কার্ড তো 100 জনের মধ্যে 10 জনের প্রয়োজন হয় । আর বাকি 100 জন এই আশায় বাঁচেন যে, যদি আমার কিছু হয় তাহলে এই কার্ডের সুবিধা আমি পাব । কিন্তু যখন তাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছেন তখন আর কিছু পাচ্ছেন না ।"
পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন দেব বলেন, "যাঁরা চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁদের প্রাপ্তিটা হচ্ছে একেবারেই তলার দিকে । প্রতিশ্রুতি থেকে মানুষের প্রত্যাশা জাগে এবং তাঁরা যখন নিতে যাচ্ছেন এই সুবিধা, তাঁদের প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ফারাক থেকে যাচ্ছে । আসলে সাগরদিঘিতে পরাজয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিশেহারা হয়ে এখন নতুন নতুন সব প্রকল্পের ঘোষণা করছেন । কার্ড দিলেই তো আর হল না রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার তো শূন্য, কোথা থেকে তিনি টাকা দেবেন ! সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন আর এই সমস্ত ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাতে সেই বৈতরণী পার হওয়া যায়, সেটারই চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী । বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্ড নেওয়া হচ্ছে না ৷ যদিও রাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, পদক্ষেপ করা হবে কিন্তু সে পদক্ষেপ আর করা হয় না ।"
মিড ডে মিলের টাকা সম্বন্ধে রবীন দেব বলেন, "21-22-এর অর্থবর্ষ শেষ হলে যে এই টাকা পাওয়া যাবে সেটা আগেই জানা ছিল । শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনায় বসলেন । অথচ সেই ধরনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তিনি একটি কথা বললেন না, বরং বামের দিকে নিশানা দাগলেন ।"
এআইসিসি সদস্য ও প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, বিজেপি, তৃণমূলের আসল লড়াই নয় । দ্বিচারিতা করছে । মানুষের কাছে ওরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছে না । ধর্মতলায় নাটক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আগেই বলা হয়েছিল, রিপোর্ট জমা দিলে টাকা দেওয়া হবে । সেই রিপোর্ট সংসদে জমা দিয়েছে । রিপোর্ট জমা দিলে তো কারও টাকা আটকানোর ক্ষমতা নেই ।
তিনি আরও বলেন, ভোটের আগে মানুষকে আবার ভুল বোঝানো হচ্ছে । মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ভুল বুঝিয়ে পঞ্চায়েতের আগে সাধারণ গ্রামের মানুষকে কাছে টানতে চাইছে বলেই এই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ।
আরও পড়ুন: খেজুরির পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠান থেকেও 100 দিনের কাজ নিয়ে সরব মমতা