কলকাতা,13 ফেব্রুয়ারি: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়া হল (Nandini Chakraborty Relieved from her post of principal secretory to the GUV)। রবিবার বেশি রাতে রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছিল তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। শেশমেশ সেটাই হল । শোনা যাচ্ছে নন্দিনীর বদলে নতুন কাউকে প্রধান সচিব হিসেবে সরকারের কাছ থেকে চাওয়া হবে। এমনটাও শোনা যাচ্ছে রাজ্যপাল তার নিজের পছন্দমত টিম নতুন করে তৈরি করতে চাইছেন।
কিন্তু ঠিক কী কারণে প্রধান সচিব বদল? রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ বলছে,রাজ্যপাল হিসাবে সিভি আনন্দ বোস রাজ্যে আসার পর থেকেই নন্দিনীকে নিয়ে বিজেপির মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এমনকী রাজ্যপালের হাতে খড়ির সময়ও গেরুয়া শিবিরের দাবি ছিল, প্রধান সচিবের পরামর্শেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । আর এভাবে কি শেষমেশ বিজেপির চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেন রাজ্যপাল সেই প্রশ্নও তুলছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ । এ রাজ্যে রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্যপালের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত চরম আকার নেয় । এরপর অস্থায়ী রাজ্যপাল হন লা গণেশন । তাঁর সঙ্গে সরকারের যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল ।
সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গেও রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্কের রসায়ন বেশ ভালো । শুধু তাই নয়, প্রকাশ্য মঞ্চে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করেছেন । মমতাকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ, এপিজে আবদুল কালামের সঙ্গে তুলনা পর্যন্ত করেছেন রাজ্যপাল । আর তার জন্য বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বিজেপি বিধায়কদের গো ব্যাক স্লোগান পর্যন্ত শুনতে হয়েছে রাজ্যপালকে । সবমিলিয়ে সাম্প্রতিক অতীতের গতিপ্রকৃতি থেকে স্পষ্ট বর্তমান রাজ্যপালের কাজকর্মে আদেও খুশি ছিলেন না এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান এবং প্রশাসনিক প্রধানের মধ্যে সখ্যতা তারা ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই বিভিন্ন সময়ে রাজ্যপালকে নিয়ে নানান মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতাদের।
এর আগে শনিবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজ্যপালের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন । এরপরই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কড়া অবস্থান নেন রাজ্যপাল। এরই ফলশ্রুতিতে রবিবার বিকেলের দিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফাঁদে উনি পা দিয়েছেন। রাজ্যপাল ভাল মানুষ। শিক্ষিত লোক। উনি ট্র্যাকে ফিরে আসুন, সঠিক রাস্তায় ফিরে আসুন। গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী ও জগদীপ ধনকরের দেখানো পথে সাংবিধানের রক্ষক হিসেবে উনি কাজ করুক। আমার বিশ্বাস, উনি ট্র্যাকে আসতে শুরু করেছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। উনি আস্তে আস্তে ট্র্যাকে ফিরছেন।" এরকমই নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে রাজ্যপালের প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়া হল।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের বিবৃতি নিয়ে উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই, মত সৌগত রায়ের