ডায়মন্ড হারবার, 20 অক্টোবর : গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডে জোড়া খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্য়েই একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে লালবাজার ও ডায়মন্ড হারবার থানায় পুলিশ। বুধবার বিকেলে ডায়মন্ড হারবারের ভাড়া বাড়ি থেকে মিঠু হালদার (42) নামে এক মহিলাকে প্রথমে আটক করে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান হোমিসাইড শাখার আধিকারিকরা। পরে ম্যারাথন জেরার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে বৃহস্পতিবার আলিপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ডায়মন্ড হারবারে বাড়ি মিঠু হালদার নামে ধৃত ওই মহিলার৷ ডায়মন্ড হারবার পৌরসভার 16 নম্বর ওয়ার্ডের নইয়াপাড়াতে ভাড়া বাড়িতে একাই থাকত সে। কলকাতায় পরিচারিকা ও আয়ার কাজ করত । সুবীর চাকি যখন কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরে থাকতেন, তখন তাঁর মায়ের দেখভাল করত মিঠু। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা মনে করছেন, সুবীর এবং তাঁর গাড়ির চালক খুনের ঘটনায় মিঠুর যোগ আছে।
শুধু তাই নয়, মিঠু-সহ তার ছেলে এবং ছেলের তিন বন্ধুর ভূমিকাকেও আতশকাচের তলায় রাখছেন গোয়েন্দারা। অন্যদিকে ডায়মন্ড হারবারে কপাট হাটের কাছে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন মিঠুর ছোট ছেলে বিলাস হালদার ও মিঠুর ভাই তরুণ হালদার। গোয়েন্দাদের অনুমান, কাঁকুলিয়া রোডের ওই বাড়ি বিক্রির প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন মিঠুর ছেলেও। তিনিও বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা নিয়ে আসতেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, সম্ভবত বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কোনও চুক্তি নিয়ে মিঠুর ছেলের সঙ্গে সুবীরের বিবাদ হয় । তবে সেই কারণেই এই খুন কি না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কোনও গোলমালে এই জোড়া খুন কিনা এলাকার জমি, বাড়ির দালালদের জারা করে তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন : Gariahat Murder Case : রক্তমাখা জামা ধোওয়ায় সন্দেহ, গড়িয়াহাটে জোড়া খুনে গ্রেফতার পরিচারিকা
তদন্তের সময় দেখা গিয়েছিল, বালিগঞ্জ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ কুকুর । সেই থেকে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়, খুনের পর সম্ভবত বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে পালিয়েছে আততায়ী । সেই সূত্রে শুরু হয় তল্লাশি । ঘটনাচক্রে মিঠু হালদারও শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা দিয়েই দৈনিক যাতায়াত করেন । এর পরই ওই মহিলাকে ডায়মন্ড হারবার থানায় ডেকে পাঠানো হয় । ডায়মন্ড হারবার পুলিশ সূত্রে খবর, 2020 সালে ডায়মন্ড হারবারের ভগবানপুর এর কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত মিঠুর পরিবার । পারিবারিক বচসার জেরে মিঠু ও তার বড় ছেলে মিলে তার স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা তৈরি করে । পরিকল্পনা মতই মিঠুর স্বামীকে আষ্টেপিষ্টে সেলোটেপ দিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টা করে মিঠু ও তার বড় ছেলে। কিন্তু প্রতিবেশীদের প্রচেষ্টায় মরণাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই ব্য়ক্তিকে । এই ঘটনায় মিঠুকে গ্রেপ্তার করেছিল ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে মিঠু ও তার বড় ছেলে । সুবীর চাকীর সঙ্গেই খুন হয়েছিলেন তাঁর গাড়ি চালকও । বুধবার মৃত রবীন মণ্ডলের মোমিনপুরের বাড়িতে যান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা।
জানা গিয়েছে, মিঠুর ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি পেন ড্রাইভ ও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। বাড়ির মালিক পম্পা গায়েন জানিয়েছেন, "মাস দুয়েক আগে এই বাড়িতে থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া নেয় মিঠু। পেশা হিসেবে বলে কলকাতার একটি বাড়িতে আয়ার কাজ করে । বাড়িতে বেশ রাত করেই আসত ।" সম্প্রতি দশমীর দিন বাড়ির উঠানে একটি কলে রক্তমাখা কাপড় কাচতে দেখে কৌতূহলবশত পম্পা তাকে বিষয়টা জিজ্ঞাসা করে বসেন। পম্পার প্রশ্নের উত্তরে মিঠু বলে, "এই কাপড়টা ছোট ছেলের দশমীর সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সেই জন্যই এই কাপড় পরিষ্কার করছি।"