কলকাতা ও দুর্গাপুর, 1 জানুয়ারি: বেশ কয়েক বছর ধরেই শীতের সঙ্গে আড়ি-ভাবের খেলা চলছে। চলতি বছরে শুরুর কয়েকদিন জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়লেও বড়দিন আসতেই শীত উধাও। তবে, কনকনে ঠান্ডা বলতে যা বোঝায়, তা থেকে আপাতত বঞ্চিতই সত্যজিতের শহর। তার জেরে শীতের পোশাক কেনা থেকেও বিরত থাকছেন মানুষ। শীতের এই খামখেয়ালিপনার কারণে কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ীদের সেই রমরমা আজ আর নেই। তাই কেউ কেউ আবার পেশাও বদলেছেন। অনেকেই কাশ্মীরের ট্যুর গাইডের কাজ করছেন। আবার কারও আস্থা বাপ-দাদার ব্যবসাতেই ৷
আগে শালওয়ালারা এলেই ঘরে ঘরে তাদের নিয়ে এক প্রকার টানাটানি লেগে যেত। এখন তারা ডেকেও সাড়া পায় না বাড়ির লোকজনদের। ভালো শাল, সোয়েটার, জ্যাকেট আজ আর লাগছে না তাঁদের। সব আছে... বাড়ির কেউ আবার বলে, "দাদা অনলাইনেই তো কিনে নিই আজকাল। সস্তায় পাই।" আর মুখ কালো করে চলে যান ওঁরা। তবু প্রতিবছর বিক্রির আশায় তাঁরা আসেন কলকাতায়। ফেব্রুয়ারি এলে ফিরে যান নিজের মুলুকে। কেউ কেউ আবার পেশাও বদলেছেন। অনেকেই কাশ্মীরের ট্যুর গাইডের কাজ করছেন। অনেকে ট্যুরিজম ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছেন। অনেকে আবার লাভক্ষতির হিসেব না-করে স্থির রয়েছেন এই পেশাতেই। অন্য পেশায় যেতে নারাজ তাঁরা।
- এমনই এক কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ী নিসার ডার। আজ 30 বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতায় ব্যবসা করতে আসছেন তিনি। নিসার ইটিভি ভারতকে বলেন, "কলকাতায় আর তেমন ঠান্ডা নেই ৷ পনেরো-কুড়ি বছর আগেও কত ঠান্ডা পড়ত এখানে। আমাদের তখন খুব ভালো ব্যবসা হত। আমি অনেক বছর ধরে এখানে আসি। নতুন কাস্টমারের কাছে যাই না। পুরনোরাই আমার কাছ থেকে যেটুকু নেওয়ার নেয়। নতুনদের কাছে গেলে বলে আমার আছে, লাগবে না। ব্যবসার অবস্থা ভালো না। তবে, আমি অন্য পেশাতে যেতে পারব না। এটাই করতে হবে। অনেকে পেশা পালটেছে এটাও ঠিক। তবে, যাঁরা আগেও আমাদের থেকে কিনেছে তাঁরা আজও কেনে আমাদের থেকেই৷ তাঁদের বিশ্বাসেই বেঁচে আছি।"
- এদিকে দুর্গাপুরেও শীত পড়লেই চেনা ছবি ছিল দরজায় দরজায় শাল বিক্রি করা। কিন্তু সেই ছবি অনেকটা উধাও দুর্গাপুর-সহ অন্যান্য জেলায়। শাল বিক্রেতাদের মুখে একটাই কথা, "কাশ্মীরি শাল বিক্রি অনেকটা কমে গিয়েছে।" দুর্গাপুরে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে শাল বিক্রি করা শফিক আহমেদ প্রথমে পাড়ায় পাড়ায় শাল বিক্রি করতেন ৷ পরে দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে কাশ্মীরি শাল বিক্রির শো-রুম খুলে বসেন। কিন্তু শফিক আহমেদ এখন শাল বিক্রির পাশাপাশি টুরিস্ট এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন। এখান থেকে বহু মানুষ তার মাধ্যমে পাড়ি দিচ্ছেন ভূস্বর্গ কাশ্মীর দর্শনের জন্য। কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন শফিক আহমেদ।
- তিনি ইটিভি ভারতকে জানালেন, এখানে শীতের দাপট অনেকটাই কমে যাওয়া এবং অনলাইন ব্যবসার কারণে তাঁদের শালের ব্যবসাতে আর সেরকম বাজার নেই। 38 বছর ধরে দুর্গাপুরে এই শাল ব্যবসা করছেন তিনি। শাল বিক্রেতা হিসাবে প্রায় 4 দশক শিল্প নগরীর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর এখন শফিক আহমেদের নতুন পরিচয় তিনি একজন পর্যটন ব্যবসায়ী। তাহলে কি এ রাজ্যে অনতিকাল পরেই হারিয়ে যাবে কাশ্মীরের শাল বিক্রেতাদের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানোর সেই চেনা ছবি? উত্তর দেবে আগামী সময়।
আরও পড়ুন: