ETV Bharat / state

Bengal BJP: পুরনো কর্মীদের বিক্ষোভে বাংলায় কি অস্তিত্ব সংকটে বিজেপি ? - বাংলায় কি অস্তিত্ব সংকটে বিজেপি

Bengal BJP Agitation: গত কয়েকদিন ধরে বিজেপির বিভিন্ন পার্টি অফিসে কর্মীদের বিক্ষোভের ছবি ধরা পড়েছে ৷ এই বিক্ষোভের জেরে বাংলায় বিজেপি কি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে ? সামনেই লোকসভা নির্বাচন, নিচুতলার ক্ষোভের জেরে সেখানেই বা কী প্রভাব পড়তে পারে ?

Bengal BJP Agitation
Bengal BJP Agitation
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 13, 2023, 7:38 PM IST

কলকাতা, 13 অক্টোবর: 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির সাফল্য চমকে দিয়েছিল এই রাজ্যের বাসিন্দাদের ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সাফল্য়ের ধারেকাছে যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির ৷ তারা প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেয়েছিল বটে ! তার পর পৌরনিগম ও পৌরসভার ভোট এবং একাধিক উপ-নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির ৷

সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিতে পেরেছিল বিজেপি নেতৃত্ব ৷ জেলা পরিষদ বাদ দিলে, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ভোটগুলিতে অন্য বিরোধীদের চেয়ে তাদের ফল বেশ ভালো হয়েছে ৷ সেই সাফল্যের উপর নির্ভর করে 2019 এর ফল 2024 সালের লোকসভা ভোটে ধরে রাখতে মরিয়া ছিল গেরুয়া শিবির ৷

কিন্তু তারা কি চব্বিশে পারবে ঊনিশের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে ? এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ সম্প্রতি বিজেপির কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে ৷ কখনও সল্টলেকের দফতরে, কখনও আবার মধ্য কলকাতায় মুরলিধর সেন লেনের পার্টি অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কর্মীরা ৷ রাজ্য নেতাদের ছবি সামনে রেখে চলছে সেই বিক্ষোভ ৷ সরাসরি কয়েকটি নেতার নাম উল্লেখ করে তাঁদের অপসারণের দাবি তোলা হচ্ছে ৷

তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেল বিজেপি ? রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সাংগঠনিকভাবে বিজেপি খুবই ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছে এই রাজ্যে । দল একেবারে বাঁধনহীন হয়ে পড়েছে । তাই আজ দিকে দিকে বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে নিজের দলেরই বিরুদ্ধে । এমনকী, তাঁরা নেতাদের ছবি পা দিয়ে পরিয়ে দিচ্ছেন । এটা প্রমাণ করে যে রাজ্য বিজেপির খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে ।’’

কিন্তু এই বিক্ষোভের পিছনে অন্য কারণ দেখছেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মিত্র ৷ তিনি বলেন, ‘‘2019 সালে বিজেপি যখন নির্বাচনে জিতেছিল, তখনও বহু মানুষ অন্যান্য দল থেকে এই দলে এসে যোগ দিয়েছিলেন । তারপরেও 2021-এর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের থেকে বহু মানুষকে তারা নিতে শুরু করল । এর ফলে বিজেপির একটা তৃণমূলীকরণ হল । তাই তৃণমূলের ঠিক যেভাবে অন্তর্দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে, সেভাবে বিজেপির একই অবস্থা হচ্ছে ।’’

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে বিজেপিকে এখনও সাংগঠনিক এই সমস্যাকে দূর করতে হবে বলে মনে করছেন অমল মুখোপাধ্যায় ৷ কিন্তু সেই সমস্যা দূর করতে গেলে আসলে কোথায় গোলমাল সেটা বের করতে হবে ৷ গত কয়েকদিন বিজেপির যে বিক্ষোভগুলি হয়েছে, সব জায়গাতেই পুরনো কর্মীদের গুরুত্বহীন করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷

এর প্রেক্ষিতে অমল মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, শুভেন্দু অধিকারী নিজেকে অনেকবশি সক্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পেরেছেন । যা দিলীপ ঘোষ বা বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পারেননি । শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছেন বলে তাঁর এই উত্থান বা দলের মধ্যে তাঁর অতি সক্রিয়তা পুরনো নেতাকর্মীরা ঠিক ভালো চোখে দেখছেন না । কারণ পুরনো নেতা-কর্মী যাঁরা অনেক দিন ধরে মন দিয়ে এই দলটা করছেন, তাঁরা দলের জন্য মার খেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন । তাই তাঁদের যদি হঠাৎ করে বসিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা অসন্তুষ্ট হবেন । তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অবিলম্বে এই নিয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন ৷

আর সেটা যদি না হয় ? আগামিদিনে যদি এই ধরনের বিক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে ? তাহলে কী হবে ? এই প্রসঙ্গে শুভময় মিত্রর বক্তব্য, ‘‘যদি সত্যিই সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তাহলে 2021 থেকে বিজেপির যেমন ভোট কমতে শুরু করেছে, আসন্ন লোকসভাও কিন্তু তাদের ভোট আরও কমবে । কারণ বাম বা কংগ্রেসের নির্বাচনে খুব একটা আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ৷ তাই পুরো লাভটা হবে তৃণমূল কংগ্রেসের ।’’

আরও পড়ুন: সল্টলেকের পর মুরুলিধর সেন লেনের পার্টি অফিসে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ

কলকাতা, 13 অক্টোবর: 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির সাফল্য চমকে দিয়েছিল এই রাজ্যের বাসিন্দাদের ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সাফল্য়ের ধারেকাছে যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির ৷ তারা প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেয়েছিল বটে ! তার পর পৌরনিগম ও পৌরসভার ভোট এবং একাধিক উপ-নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির ৷

সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিতে পেরেছিল বিজেপি নেতৃত্ব ৷ জেলা পরিষদ বাদ দিলে, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ভোটগুলিতে অন্য বিরোধীদের চেয়ে তাদের ফল বেশ ভালো হয়েছে ৷ সেই সাফল্যের উপর নির্ভর করে 2019 এর ফল 2024 সালের লোকসভা ভোটে ধরে রাখতে মরিয়া ছিল গেরুয়া শিবির ৷

কিন্তু তারা কি চব্বিশে পারবে ঊনিশের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে ? এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ সম্প্রতি বিজেপির কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে ৷ কখনও সল্টলেকের দফতরে, কখনও আবার মধ্য কলকাতায় মুরলিধর সেন লেনের পার্টি অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কর্মীরা ৷ রাজ্য নেতাদের ছবি সামনে রেখে চলছে সেই বিক্ষোভ ৷ সরাসরি কয়েকটি নেতার নাম উল্লেখ করে তাঁদের অপসারণের দাবি তোলা হচ্ছে ৷

তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেল বিজেপি ? রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সাংগঠনিকভাবে বিজেপি খুবই ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছে এই রাজ্যে । দল একেবারে বাঁধনহীন হয়ে পড়েছে । তাই আজ দিকে দিকে বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে নিজের দলেরই বিরুদ্ধে । এমনকী, তাঁরা নেতাদের ছবি পা দিয়ে পরিয়ে দিচ্ছেন । এটা প্রমাণ করে যে রাজ্য বিজেপির খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে ।’’

কিন্তু এই বিক্ষোভের পিছনে অন্য কারণ দেখছেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মিত্র ৷ তিনি বলেন, ‘‘2019 সালে বিজেপি যখন নির্বাচনে জিতেছিল, তখনও বহু মানুষ অন্যান্য দল থেকে এই দলে এসে যোগ দিয়েছিলেন । তারপরেও 2021-এর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের থেকে বহু মানুষকে তারা নিতে শুরু করল । এর ফলে বিজেপির একটা তৃণমূলীকরণ হল । তাই তৃণমূলের ঠিক যেভাবে অন্তর্দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে, সেভাবে বিজেপির একই অবস্থা হচ্ছে ।’’

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে বিজেপিকে এখনও সাংগঠনিক এই সমস্যাকে দূর করতে হবে বলে মনে করছেন অমল মুখোপাধ্যায় ৷ কিন্তু সেই সমস্যা দূর করতে গেলে আসলে কোথায় গোলমাল সেটা বের করতে হবে ৷ গত কয়েকদিন বিজেপির যে বিক্ষোভগুলি হয়েছে, সব জায়গাতেই পুরনো কর্মীদের গুরুত্বহীন করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷

এর প্রেক্ষিতে অমল মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, শুভেন্দু অধিকারী নিজেকে অনেকবশি সক্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পেরেছেন । যা দিলীপ ঘোষ বা বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পারেননি । শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছেন বলে তাঁর এই উত্থান বা দলের মধ্যে তাঁর অতি সক্রিয়তা পুরনো নেতাকর্মীরা ঠিক ভালো চোখে দেখছেন না । কারণ পুরনো নেতা-কর্মী যাঁরা অনেক দিন ধরে মন দিয়ে এই দলটা করছেন, তাঁরা দলের জন্য মার খেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন । তাই তাঁদের যদি হঠাৎ করে বসিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা অসন্তুষ্ট হবেন । তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অবিলম্বে এই নিয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন ৷

আর সেটা যদি না হয় ? আগামিদিনে যদি এই ধরনের বিক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে ? তাহলে কী হবে ? এই প্রসঙ্গে শুভময় মিত্রর বক্তব্য, ‘‘যদি সত্যিই সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তাহলে 2021 থেকে বিজেপির যেমন ভোট কমতে শুরু করেছে, আসন্ন লোকসভাও কিন্তু তাদের ভোট আরও কমবে । কারণ বাম বা কংগ্রেসের নির্বাচনে খুব একটা আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ৷ তাই পুরো লাভটা হবে তৃণমূল কংগ্রেসের ।’’

আরও পড়ুন: সল্টলেকের পর মুরুলিধর সেন লেনের পার্টি অফিসে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.