কলকাতা, 21 মার্চ : কেউ 44 বছর, কেউ 26 বছর, আবার কেউ 37 বছর ধরে কর্মরত কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ঐতিহ্যবাহী কফি হাউজ়ে । এত বছরের কর্মজীবনে কেউ কোনওদিন সোমবারের মতো ঘটনা দেখেননি । দেখেননি রাজনীতিকে এই রূপে কফি হাউজ়ের অন্দরে প্রবেশ করতে । একরাশ আক্ষেপ নিয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের রাজনীতি যেন আর কোনও দিন কফি হাউজে প্রবেশ না করে, এই আর্জি জানালেন কফি হাউজ়ের কর্তা-কর্মীরা ।
15 মার্চ 'মোদিপাড়া' লেখা গেরুয়া রঙের টি-শার্ট পড়া বাহিনীর তাণ্ডব এখনও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে কফি হাউজ়ের কর্মীদের । ঠিক কী ঘটেছিল ওইদিন ? অন্যান্য দিনের মতোই সপ্তাহের প্রথম দিন সন্ধ্যায় কফি হাউজে চলছিল 'আড্ডা' । সেই সময় গেরুয়া টি-শার্ট পড়া 20-30 জনের দলটি আসে কফি হাউজ়ে । অন্য ক্রেতাদের মতো তাঁরাও বসে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া করেন । তারপরে বিল মিটিয়ে বেরিয়ে আসার সময় কফি হাউজ়ে প্রবেশের সিঁড়িতে 'নো ভোট টু বিজেপি' এবং 'বিজেপিকে একটিও ভোট নয়' লেখা পোস্টার দেখে সেগুলি তাঁরা ছিঁড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ । 'নো ভোট টু বিজেপি' লেখার 'নো' অংশটুকু কালি দিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন । ওখানে উপস্থিত বামপন্থী কয়েকজন তরুণী প্রতিবাদ জানালে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে । গেরুয়া গেঞ্জিধারীরা বিজেপির সমর্থনে স্লোগান তুলতে শুরু করেন । এমনকি তাঁরা কফি হাউজ়ের ভিতরে ঢুকেও স্লোগান তোলেন বলে অভিযোগ ওঠে । প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে স্লোগান ও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মত বিনিময় ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কফি হাউজ় ও তা লাগোয়া কলেজ স্ট্রিট চত্বরে ।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় । পরেরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরেই কফি হাউজ়ের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয় । সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সামিল হন সেই প্রতিবাদে । সুজাত ভদ্রের মতো সমাজের বিশিষ্ট জন থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রতিবাদ জানান ওইদিন । বিজেপি-আরএসএস বিরোধী স্লোগান তুলে, প্রতিবাদী গান গেয়ে হয় সভা । বক্তব্য রাখেন সুজাত ভদ্র সহ অন্যান্যরা । 'বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা' মঞ্চের পক্ষ থেকে ফের লাগানো হয় 'নো ভোট টু বিজেপি' পোস্টার । প্রতিবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ।
ওইদিনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে কয়েকদিন। কিন্তু, এখনও ওইদিনের ঘটনা ভুলতে পারেননি কফি হাউজ়ের কর্তা-কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কফি হাউজ়ে এতো বছরে কোনও দিন এই রকমের ঘটনা ঘটতে দেখেননি তাঁরা। ইন্ডিয়ান কফি হাউজ়ের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তপনকুমার লাহিড়ী বলেন, "আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে অভ্যস্ত নই। হঠাৎ দেখে চমকে উঠলাম। কাস্টোমার হিসেবেই মোদিপাড়া লেখা গেরুয়া রঙের গেঞ্জি পরে প্রায় 40 জন এসেছিল। এসে অর্ডার দিলেন, খাওয়া দাওয়া করলেন, বিল পেমেন্ট করলেন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিপত্তিটা হল। কত পালা বদল হয়েছে, কতো কী হয়েছে, আমার 26 বছরের সার্ভিসে এরকম ঘটনার সাক্ষী কফি হাউজ কোনও দিন ছিল না। এটা নতুন নজির। ইতিহাস গড়ল। আমরা এককাট্টা হয়ে এর প্রতিবাদ করব, প্রতিহত করব। এটা ঠিক নয়। কফি হাউজকে কফি হাউজের মতো চলতে দেওয়া উচিত। আমি সকল স্তরের মানুষের কাছে আর্জি জানাব, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় হোক। কফি হাউজ়ে এটা করা ঠিক নয়। আগামীদিনে যাতে না হয় সেটা সবার কাছে অনুরোধ করব।"