কলকাতা, ৩০ এপ্রিল : উচ্চপদ বা ঘরের কাছে স্কুলে কাজের সুযোগ পেতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের বহু ইন-সার্ভিস শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। 2016 সালে SLST পরীক্ষায় বসেন একাদশ-দ্বাদশের এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়ম অনুযায়ী পুরানো স্কুলের চাকরি ছেড়ে নতুন স্কুলে আসার পরই বাধে বিপত্তি। অভিযোগ, তাঁদের সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন ও পে প্রোটেকশন না দিয়ে ইনিসিয়াল স্যালারি দেওয়া হচ্ছে। কারও ক্ষতির পরিমাণ মাসে 17 হাজার, তো কারও 13 হাজার টাকা। যদিও স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইন-সার্ভিসদের বেতন নিয়ে ডাইরেক্টরেট অফ স্কুল এডুকেশনে একটি ফাইল তৈরি হয়েছে। সেটি ফাইন্যান্স থেকে পাশ হয়ে গেলে সাত মাসের বকেয়া পেয়ে যাবেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
সেপ্টেম্বর মাসে বাগবাজার মাল্টিপারপাস স্কুলে যোগ দেন শিক্ষিকা পরমা মাঝি। তিনি বলেন, " আমরা 2016 সালে প্রথম ফর্ম ফিল আপ করি। আমি হায়ার স্কেলের জন্য জয়েন করি। আমার প্রথমে অনার্স ছিল। তারপরে মাস্টার ডিগ্রি করার পরেও হায়ার স্কেল পাইনি। তার জন্য পরীক্ষায় বসি। আগেও অনেকে এভাবে পরীক্ষায় বসেছে। সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন পেয়েছে। সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন পাওয়া যাবে কি না সেবিষয়ে DI-এর কাছে DSC-তে খোঁজখবর নিয়েই জয়েন করেছিলাম। জয়েন করার পর অনুমোদন পেতে দেরি হয়। তার আগে স্কুলের কাছে মেইল আসে যে আমার স্যালারি ইনিসিয়াল স্টেজ থেকেই শুরু হবে। ফলে প্রতিমাসে ১৩ হাজার টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে।"
পূর্ব বর্ধমানের সুনীল কুমার ঘোষ বলেন, "আমি পাশ গ্রাজুয়েট হিসাবে কাজ করছি 1999 সাল থেকে। তারপর 2018 সালের সেপ্টেম্বর মাসে PG (স্নাতকোত্তর) পোস্টে পরীক্ষা দিয়ে আমি জয়েন করি ইলেভেন-টুয়েলভের এডুকেশন বিষয়ে। তারপরে হঠাৎ করেই বলা হল এখন সব ইনিসিয়াল হবে। এখন পে প্রোটেকশন বা সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন কিছু হবে না। ফলে আমার আগে বেসিক বেতন ছিল 51 হাজার 163 টাকা। সেপ্টেম্বরে অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পর সেটা 35 হাজার সামথিং হয়ে গেল। জানুয়ারিতে যে DA ঘোষণা হল তারপর আমার লসের পরিমাণটা দাড়াচ্ছে প্রতি মাসে 17 হাজার টাকার মতো। এই বছরের জুলাই মাসে আমার 20 বছর সম্পূর্ণ হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী সেক্ষেত্রে আমার দ্বিগুণ ইনক্রিমেন্ট হওয়া উচিত। কিন্তু সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন না হলে ওটাও দেবে না। তখন আমার লসের পরিমাণটা প্রতি মাসে 18 হাজারের মতো হয়ে যাবে। আমরা বিকাশ ভবনে আবেদন করেছি। DI-দের কাছে আবেদন করেছি। কোথাও PF কাটা হচ্ছে। কোথাও PF কাটা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন ও পে প্রোটেকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব সমস্যার মধ্যে আছি। এমন অবস্থা হয়েছে যে ধার করতে হচ্ছে সংসার চালানোর জন্য।"
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গেজেট অনুযায়ী লোয়ার থেকে হায়ার স্কেলে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে আবেদন করা যাবে। তবে, সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন বা পে প্রোটেকশন SSC-র আওতায় না থাকায় সেবিষয়ে কিছু বলা নেই গেজেটে। ইন-সার্ভিসদের সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন ও পে প্রোটেকশনের বিষয়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ROPA-90-র সময় 1995 সালে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন ও পে প্রোটেশন দেওয়ার বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি ছিল। সেই অনুযায়ী ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইন-সার্ভিস শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই সুবিধা ভোগ করতে পারতেন। কিন্তু, ROPA-2009-এ এই ধরনের কোনও বিজ্ঞপ্তি এখনও পর্যন্ত জারি করা হয়নি। তাই ২০১৬ সালের SLST-তে নতুন স্কুলে নিযুক্ত ইন-সার্ভিস শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যদি কোথাও সার্ভিস কন্টিনিউয়েশন বা পে প্রোটেক্টশন দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা আইন বহির্ভূত। তবে, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, ইন-সার্ভিস শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি দপ্তরের প্রতিটি নিয়ম মেনে পরীক্ষায় বসে নতুন স্কুলে জয়েন করে থাকেন তাহলে তাঁদের প্রাপ্য তাঁরা পাবেন। শুধু তার জন্য অর্থ দপ্তরের সম্মতির প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই ইন-সার্ভিস শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্যালারি নিয়ে ডাইরেক্টরেট অফ স্কুল এডুকেশনে একটি ফাইল তৈরি হয়েছে। ফাইলটি ইতিমধ্যেই অর্থ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।