কলকাতা, 25 ডিসেম্বর: 22 থেকে 24 ডিসেম্বর তিনদিনের মুদ্রা উৎসব হয়ে গেল কলকাতায় । যার থিম ছিল ‘মহাবীরের নির্বাণের 2550 বছর’ ৷ নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অফ ক্যালকাটার উদ্যোগে বালিগঞ্জের হলদিরাম ব্যাংকওয়েট হলে এই মুদ্রা প্রদর্শনী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ জ্ঞানমুনি জিগনেশ মহারাজ এবারের উৎসবের সূচনা করেন ৷ সারা ভারত থেকে বিভিন্ন অতিথিরা এসেছিলেন ৷ যাঁরা মুদ্রা ভালোবসেন, মুদ্রা নিয়ে চর্চা করেন ৷
ভারতের প্রথম থেকে 2023 সাল পর্যন্ত যত মুদ্রা রয়েছে, প্রত্যেকটির আসল মুদ্রা এই প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে ৷ মনোমুগ্ধকর তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের গল্প তুলে ধরা হয় এখানে ৷ প্রতিটি মুদ্রার উত্তরাধিকার ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে ৷
এই উৎসবে ছিল রাজা শশাঙ্কের প্রচলন করা মুদ্রাও ৷ ইতিহাস বলছে, রাজা শশাঙ্ক বা শশাঙ্কদেব ছিলেন বাংলা অঞ্চলের একীভূত রাষ্ট্রের প্রথম স্বাধীন রাজা । রাজা শশাঙ্ককে গৌড় রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় । রাজা শশাঙ্কও বাংলার ইতিহাসের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত । সেই রাজা শশাঙ্কর 600 সিই ও 636 সিই-র মধ্যে সোনার দিনার চালু করেছিলেন । যার ওজন ছিল প্রায় 8.94 গ্রাম । এই মুদ্রার একদিকে লেখা আছে ‘শিব নিম্বতে’ ৷ সেখানে শিব উপবিষ্ট ডানদিকে মুখ করে শুয়ে থাকা ষাঁড়ের ওপর হেলান দিয়ে ৷ আর বামদিকে রয়েছে চাঁদ । এই মুদ্রার উল্টোদিকে 'অভিষেক লক্ষ্মী নিম্বতে’ লেখা ৷ ব্রহ্মী কিংবদন্তি শ্রী শশাঙ্কের সঙ্গে পদ্মের উপর আড়াআড়ি পায়ে উপবিষ্ট একটি পদ্ম ধারণ করে রয়েছেন ৷
অসমের জয়ধ্বজ সিংহের (1648-63) প্রচলন করা অষ্টভুজ রূপী জপমালা-সহ একটি দ্বিগুণ রৈখিক সীমানার মধ্যে উভয় পাশে চার লাইনের শিলালিপি থাকা মুদ্রাও প্রদর্শিত হবে এই উৎসবে ৷ ইতিহাস অনুযায়ী, অসমের অহম শাসকরা মুদ্রায় থাকা অষ্টভুজাকার বিন্যাসটি গ্রহণ করেছিলেন । ত্রিপুরার অমরা মাণিক্যের (1577-86) প্রচলন করা টংকাও (টাকা) থাকছে এই উৎসবে ৷ এছাড়া গুপ্ত রাজবংশের কুমারগুপ্ত (প্রথম মহেন্দ্রদিত্য - 415-455 সিই) দ্বারা প্রচলিত সোনার দিনারও ছিল এই প্রদর্শনীতে ৷
এই উৎসবে শুধু মুদ্রা প্রদর্শন হয়েছে এমনটা নয়, মহাবীরের মৃত্যু, 2550 বছরের নানা ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে ৷ মোট কুড়িটি ক্যাবিনেটে এই মুদ্রাগুলি সাজানো ছিল ৷ দশ জন মুদ্রা বিশেষজ্ঞ সেগুলির ইতিহাস তুলে ধরেন এখানে ৷ এবারের প্রদর্শকদের তালিকায় ছিলেন - ললিত বাইদ, যিনি ‘ভগবান মহাবীরের উপর মুদ্রা ও পদক’ নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেন ৷ রবিশঙ্কর শর্মা ‘মহাজনপদের মুদ্রা’র ইতিহাস বর্ণণা করেছেন ।
উল্লেখ্য, 1985 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অফ ক্যালকাটা ৷ বিশ্বব্যাপী মুদ্রাবিদদের জন্য এটাই প্রধান সংস্থা । যাঁরা মুদ্রা সংগ্রহ এবং গবেষণায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করেন, তাঁরা এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । বিশ্বব্যাপী 500-র বেশি সদস্যদের এই সংগঠন মুদ্রার পদ্ধতিগত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সংখ্যাগত গবেষণার জন্য কাজ করেন ।
আরও পড়ুন: