কলকাতা, 25 জুন: রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নকে ঘিরেই অশান্তি এবং হিংসার ছবি স্পষ্ট হয়েছিল । দু'পক্ষের সংঘর্ষে গোলা-গুলিতে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল উত্তরের চোপড়া থেকে দক্ষিণের ভাঙড় । মনোনয়নে অশান্তির আবহেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০ জনের । নিজে সরাজমিনে ক্যানিং, ভাঙড় ঘুরে দেখেছেন রাজ্যপাল । আর তারপরই তলব করেছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহাকে । যদিও সেবার তলব এড়িয়ে গিয়েছিলেন রাজীবা সিনহা । অবশেষে রবিবার ফের তলব পেয়ে রাজভবনে আসেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার । আর এদিন প্রায় দু'ঘণ্টার বেশি রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের নির্যাস কী, তা নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ।
ভাঙড়, ক্যানিং পরিদর্শনের পর বিরোধীদের সঙ্গেও একপ্রস্থ আলোচনা করেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস । আর তারপরই তিনি তলব করেছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে । যদিও সেবার নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত আছেন অযুহাতে তলব এড়িয়েছিলেন রাজীবা সিনহা । যার জেরে ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল তাঁর জয়েনিং লেটার নবান্নে ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের মাঝেই রবিবার সময় চেয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা। এদিন সাড়ে পাঁচটার পর রাজভবনে ঢোকেন তিনি। দু'ঘণ্টারও বেশি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও রাজীবা সিনহার মধ্যে আলোচনা হয়। সাড়ে সাতটার পর রাজভবন ছাড়েন রাজীবা। যদিও সাংবাদিকদের ডাকাডাকিতে তিনি এদিন সাড়া দেননি। দাঁড় করাননি গাড়িও । একপ্রকার নীরবেই এদিন রাজভবন ছাড়েন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।
তবে, প্রায় দু'ঘণ্টার বেশি বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বিভিন্ন জায়গায় হিংসা মোকাবিলায় দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেই রাজভবন সূত্রের দাবি। এমনকী, রাজ্যপালের উদ্যোগে রাজভবনে খোলা শান্তিকক্ষে এতদিন যে সমস্ত অভিযোগ এসেছে সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এদিনের বৈঠক নিয়ে রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত দু'পক্ষের তরফে মুখ খোলা হয়নি। তবে সূত্রের খবর, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে যে টালবাহনা চলছে তাতে কীভাবে শান্তি বজায় রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা করবেন কমিশনার তা জানতে চান রাজ্যপাল। জানা গিয়েছে, সে বিষয়ে যাবতীয় তথ্য রাজ্যপালকে দিয়েছেন রাজীবা সিনহা। একইভাবে এখন পর্যন্ত যে সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া গেছে তা কোন জেলায় কীভাবে মোতায়েন করা হচ্ছে এবং কীভাবেই বা পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশনার তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে দু'জনের মধ্য়ে।
আরও পড়ুন: রাজধর্মের জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই রাজ্যপালের, কটাক্ষ কুণালের
দক্ষিণ 24 পরগনার ক্যানিং, ভাঙড়, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ইত্যাদি সন্ত্রাস কবলিত জেলার কোন এলাকায় কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে কমিশন তাও জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল । আর এর সঙ্গেই এদিন কমিশনারকে রাজ্যপাল আরও একবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনওভাবেই যাতে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিৎ করতে হবে কমিশনকে । জনগণই যে গণতন্ত্রের শেষ কথা তাও তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বলে খবর। সর্বোপরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ তুলছেন, সে বিষয়েও তাঁকে সতর্ক হওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সূত্রের দাবি, রাজ্যপাল স্পষ্ট জানিয়েছেন এমন কোনও কাজ করা যাবে না যাতে যেখানে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে।