কলকাতা, 6 জুলাই: পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার দিন থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্যে যে সমস্ত হিংসা, হানাহানি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । সার্বিকভাবে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন এখন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে । রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজ্যের শান্তি বজায় রাখতে যথাযথ ভূমিকা পালন করছেন না বা ব্যর্থ হচ্ছেন বলে এ দিন সরাসরি অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল । এ রকম পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা যায় এবং তার জন্য কী কী করণীয় সে বিষয়ে তিনি 8 দফা পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহাকে ।
ধমকের সুরেই এ দিন রাজ্যপাল বলেন, "রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সাহেব সঠিক পদক্ষেপ করুন । জীবন রক্ষা করুন ।" আর কী কী বলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস...
1) ভাঙড়, ক্যানিং, কোচবিহার, দিনহাটা, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, মালদা, চোপড়া, বাসন্তী, মেদিনীপুরের সংবেদনশীল এলাকায় শান্তি রক্ষা করুন । সেখানে যাতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিংসার পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করুন ।
2) এক দফায় ভোট করার অনুমোদন দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । তাই সহিংসতা বন্ধ করুন । মানুষের রক্ত ঝরা বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন । মানুষের এক ফোঁটা রক্ত ঝরানোর অধিকার নেই আপনার । মনে রাখবেন, "দৈত্য শক্তি থাকা ভাল, কিন্তু দৈত্যের মতো তা ব্যবহার করা বোকামি ।" একক ফেজ বা মাল্টি-ফেজ যেটাই করুন, রক্তপাত এড়িয়ে চলুন ।
3) অভিযান পরিচালনা করে পরিচিত গুন্ডা বাহিনী, নেতা এবং দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধমূলক ভাবে গ্রেফতার করুন ।
4) পরিষেবা কর্মকর্তারা যাঁরা অভিযোগে পক্ষপাতদুষ্ট, উদাসীন, অকার্যকর এবং সংবেদনশীল এবং তাঁদের এক্তিয়ারে সহিংসতা চললে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে গণতন্ত্র হত্যার দায়িত্ব কি নেবেন, মিস্টার এসইসি রাজীবাকে প্রশ্ন রাজ্যপালের
5) ভোটকেন্দ্রে সিএপিএফ মোতায়েন করুন এবং ভোট-পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের মোতায়েন অব্যাহত রাখুন ।
6) প্রয়োজনীয় স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে ভোটগ্রহণ কভার করুন এবং ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করুন । ডুপ্লিকেট ব্যালট পেপার ছাপানোর অভিযোগের বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত করা এবং এ ধরনের কার্যক্রম প্রতিরোধ করা প্রয়োজন ।
7) স্ট্রং রুমগুলিকে সুরক্ষিত করতে এবং গণনা কেন্দ্রে গণনা কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নির্ভুল ব্যবস্থা করুন ।
8) পিকেট, টহল, রুট মার্চ এবং ফ্ল্যাগমার্চ বাড়ানো হোক ।
এখানেই না থেমে রাজ্যপাল আরও বলেন, "আপনার সিদ্ধান্ত, একার সিদ্ধান্ত, এক মুহূর্তের সিদ্ধান্তই ঠিক করবে বাংলায় অন্ধকার না আলো থাকবে । ভালো ভাবে বেছে নিন, মিস্টার এসইসি । আপনি যদি সঠিক পছন্দ করতে ব্যর্থ হন, তবে আরবের সমস্ত সুগন্ধি আপনার ছোট্ট হাতকে মিষ্টি করতে পারবে না । পবিত্র গঙ্গার সমস্ত জল আপনার হাতের রক্ত ধুয়ে ফেলতে পারবে না । সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে কখনওই অবমূল্যায়ন করবেন না । তাঁরা একা নন । সংবিধান তাঁদের সঙ্গে আছে । দেশের আইন তাঁদের সঙ্গে আছে । যেমনটি স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন: জেগে উঠুন, লক্ষ্যে পৌঁছনো পর্যন্ত থামবেন না ।"