কলকাতা, 13 এপ্রিল : আগামীকাল নববর্ষ । আম বাঙালির কাছে এদিন যেমন আনন্দের-উদযাপনের, ব্যবসায়ীদের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । নতুন খাতায় নাম লিখে শুরু হয় নতুন বছরের ব্যবসা । কিন্তু এবার কোথায় ব্যবসা ? কোথায় হালখাতা ? একদিকে, কোরোনার দাপট। অন্যদিকে, ইস্ট- ওয়েস্ট মেট্রো। শোচনীয় অবস্থা বউবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ।
গত বছর অগাস্ট মাসে ইস্ট- ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজ চলাকালীন হঠাৎই ধস নামে । ধসে যায় বউবাজার এলাকার একাধিক বাড়ি । বহু বাড়িতে বড়সড় ফাটল ও চিড় দেখা দেয় । বহু মানুষকে ভিটে-বাড়ি ছাড়া হতে হয় রাতারাতি । বন্ধ করে দেওয়া হয় সোনার দোকানগুলি । তারপর অনেক দোকান খুললেও, কালীপুজো ও ধনতেরাসেও ব্যবসায় ছিল মন্দা । হাল ফেরেনি বউবাজার সোনাপট্টির । ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে একটু একটু করে দোকান খুললেও ব্যবসায় উন্নতি হয়নি । এবার "গোদের উপর বিষফোঁড়া" কোরোনা ।
বউবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দীপক জয়সওয়াল বলেন, "লকডাউনের প্ৰয়োজনীয়তা রয়েছে । তবে, এই সময়ে অনেকগুলি বিয়ের দিন ছিল । মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ের পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় । তাই বহু গ্রাহক অনেক আগে থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন । আবার কেউ আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে গেছেন । তবে এই লকডাউনের জেরে বহু ক্রেতা বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছেন । তাই কবে আবার বাজার খুলবে, আবার পুরোদমে ব্যবসা শুরু হবে তা নিয়ে আমরা সন্দেহে আছি । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের কোনও সাহায্য ঘোষণা করেনি ।"
বউবাজারের আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিম্পা দাস বলেন, "আমরা ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েছি । বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বছর পার হয়ে যেতে পারে । এই আর্থিক লোকসান কাটিয়ে উঠতে বছর পাঁচেক লেগে যাবে । পাশাপাশি আমাদের দোকানের কর্মীদের দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে । রয়েছে দোকানের অন্যান্য খরচ । সব মিলিয়ে আমরা চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছি ।"
বউবাজার স্ট্রিটে ছোটো-বড় মিলিয়ে সোনার দোকানের সংখ্যা প্রায় 330 । স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকারী সভাপতি সমরকুমার দে বলেন, " আর্থিক কারণে ব্যবসায়ীরা আজ অনেকদিন হল একটা ডামাডোলের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন । তারমধ্যে দোসর হল বউবাজারের ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ এবং বর্তমানে কোরোনা আতঙ্ক । এর ফলে ব্যবসায়ীদের কোমর একেবারেই ভেঙে গেল । আমরা ভেবেছিলাম, এবার অক্ষয় তৃতীয়ার অনুষ্ঠানটিও বেশ বড় করে করব। কিন্তু সে গুড়ে বালি । যে আর্থিক বোঝা আমাদের উপর আসতে চলেছে তা কাটিয়ে উঠতে বহু দিন লেগে যাবে ।"