কলকাতা, 1 জুলাই: ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া সত্ত্বেও সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র তাঁর কাছে নেই ৷ অন্তত শুক্রবার প্রায় সাড়ে 11 ঘণ্টা জেরার পর এমনই তথ্য অভিনেত্রী নেত্রীর কাছ থেকে পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা ৷ আর যা শুনে-দেখে কার্যত 'থ' দুঁদে গোয়েন্দারা ৷
তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে তৃণমূল যুবনেত্রী সায়নী ঘোষের ব্যাংক মারফৎ যাবতীয় ট্রানজাকশন দেখিয়ে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সায়নীকে। সূত্রের খবর, জেরা পর্বে সায়নী তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, যে তিনি একটি রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংক থেকে 50 লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তাঁর সেই ফ্ল্যাটে কোনও টাকা কুন্তল বিনিয়োগ করেননি। তদন্তকারীদের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সায়নী ঘোষ যখন কুন্তলের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এই কথা জানাচ্ছেন তদন্তকারীদের, তখনই ইডি আধিকারিকরা সায়নীর কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ঋণ নেওয়ার কাগজপত্র দেখতে চান। আর সেখানেই থমকে যান অভিনেত্রী ৷ জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া চলাকালীন সায়নী ঋণ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্রই তদন্তকারীদের দেখাতে পারেননি। ফলে আগামী বুধবার ফের সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সের সায়নী ঘোষকে তলব করেছে ইডি।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে খবর, সায়নীকে প্রথম বার জিজ্ঞাসাবাদ করে আধিকারিকরা সন্তুষ্ট হননি। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে গিয়েছে তাদের কাছে ৷ আর সেই প্রশ্নগুলির উত্তর জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মনে করছেন তদন্তকারীরা। যার জেরে, সায়নী ঘোষকে আগামী বুধবার ফ্ল্যাট কেনার ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও নথি সমেত সিজিও কমপ্লেক্সে আসতে বলা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। তবে এই বিষয়ে জানতে সায়নী ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইডি সূত্রে খবর, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসন যার বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা ৷ সেই আবাসনের একটি ফ্ল্যাট কুন্তল ঘোষ কুড়ি লক্ষ টাকা দিয়ে সায়নীর জন্য বুকিং করেছিলেন। পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, যে ফ্ল্যাট বুকিং-এর দিন কুন্তল এবং সায়নী ওই প্রোমোটারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: 'চোপ একদম'! আদালত চত্বরে রত্নার দিকে আঙুল উঁচিয়ে তেড়ে গেলেন শোভন
গত শুক্রবার প্রথম প্রশ্নবানেই খানিকটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে। ইডি সূত্রের খবর, ওইদিন সকাল 11 টা 24 মিনিট নাগাদ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দফতরে আসেন সায়নী ঘোষ। সঙ্গে তিনি আনেন বেশ কিছু নথিপত্রও। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের খবর, প্রথমেই সায়নী ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন একজন মহিলা আধিকারিকের নেতৃত্বে মোট চারজন ইডি অফিসার ৷ সায়নীকে দেখানো হয় কুন্তল ঘোষের একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। যদিও সংশ্লিষ্ট কথোপকথনে কী তথ্য রয়েছে তা সামনে আনেননি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা।
সূত্রের খবর, কুন্তল ঘোষের ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া ওই চ্যাট-এর কথোপকথন প্রথমেই দেখানো হয় সায়নীকে। জানতে চাওয়া হয় সেই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের কথোপকথন সম্পর্কে সায়নী ঘোষ কী জানেন? জবাবে সায়নী ঘোষ কী বলেছেন সেই বিষয়টি জানা না গেলেও তদন্তকারী সূত্রের খবর, তার জবাবে সন্তুষ্ট হননি তদন্তকারীরা। এছাড়াও সায়নীর কাছ থেকে প্রথম পর্যায়ে জানতে চাওয়া হয় যে, প্রথম কুন্তল ঘোষের সঙ্গে তাঁর কীভাবে আলাপ হয়েছিল? কেন একাধিক কাগজপত্রে দেখা গিয়েছে সায়নী ঘোষের বিভিন্ন সম্পত্তিতে কুন্তল ঘোষের বিনিয়োগ রয়েছে? এই বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের খবর সায়নী ঘোষ এই সকল প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু কাগজ জমা দিয়েছেন। কাগজগুলি ইতিমধ্যেই ভেরিফিকেশন করতে শুরু করেছেন ইডি'র তদন্তকারী আধিকারিকরা।