কলকাতা, 29 মে: ধনে প্রাণে শেষ হওয়ার জোগাড়। পুজোর বাকি চার মাস। এখনও পর্যন্ত কোনও প্রস্তুতি নেই কুমোরটুলিতে। এবছর বাসন্তী পুজো, শীতলা পুজো এবং ফলহারিণী কালী পুজোসহ একাধিক পুজোতে বিক্রি হয়নি প্রতিমা। কুমোরটুলির শিল্পীদের মাথায় হাত। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বায়না করতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দূর-দূরান্ত থেকেও বায়নার জন্য আসেন বিভিন্ন পুজো কমিটি এবং উদ্যোক্তারা। এবছর কোরোনা ভাইরাসের গ্রাসে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে প্রতিমা বিক্রির আশা।

কারিগররা বাড়ি চলে যাওয়ায় মাথায় হাত কুমোরটুলির শিল্পীদের। 22জন কারিগর প্রতিবছর প্রতিমা গড়ার কাজ করতেন। রথের রশিতে টান পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত মজুর নিয়োগ করা হত প্রতিমা তৈরির কাজে। বাঁশ কেটে কাঠামো তৈরি, কৃষ্ণনগর থেকে গঙ্গা মাটি আনা, খড়-বিচলির কাজে ব্যস্ত থাকতেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। এবছরের চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। হাতে কোনও কাজ নেই। নদিয়ার বেথুয়াডহরি থেকে এসে আটকে পড়েছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। একজন শিল্পী জানলেন, দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে এরপর হকারি করতে বাধ্য হবেন। পরিবারের লোকের মুখে গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য মৃৎশিল্পের কাজ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

প্রতিবছর কুমোরের ঘরে জায়গা থাকে না পা ফেলার। এবার ঘর ফাঁকা। কিছু ঠাকুর তৈরি করা আছে। শেষ মুহূর্তে চাহিদামত জোগান দেওয়া হবে। কুমোরটুলির কর্ণধার গোপাল পাল জানান, "পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কোনও অর্ডার নেই। ঠাকুর যা বানানো হয়েছে, সবই পড়ে রয়েছে। এবছর দুর্গাপুজো হবে কি না তাও জানিনা। লোকজন খাটানো যাচ্ছে না। কারিগর নেই। কাজকর্ম পুরো বন্ধ। ঠাকুর বিক্রি নেই। বিক্রি না হলে পুরোটাই লস। প্রতিবছর চল্লিশটি বড় দুর্গা প্রতিমা এখান থেকে যায় পুজোর জন্য। এবছর কি হবে জানি না। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে প্রতিবছর। এবছর যেন সব স্তব্ধ। মনসা, বিশ্বকর্মা প্রতিমা এখনও তৈরি করিনি। বাসন্তী, শীতলা, কালী ঠাকুর তৈরি অবস্থায় পড়ে আছে। নিল না কেউ। কোনওরকমে সংসার চলছে। না খেয়ে তো আর থাকা যাবে না। আপাতত দু'জন কারিগরকে দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। দু'জনের বাড়ি নাদিয়ার বেথুয়াডহরিতে। এখানে কাজ করতে এসে আটকে পড়েছেন। কাছাকাছি যাঁরা থাকতেন তাঁরা সবাই চলে গেছেন।"

কুমোরটুলির কারিগর গোপাল পাল বলেন," তিন মাস ধরে এখানে আটকে রয়েছি। বাড়ি যেতে পারছি না। দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বাড়িতে রয়েছে। কোনওরকমে হাতখরচ পাঠাতে পারছি। সরকারি সাহায্য নেই। সরকারি সাহায্য পেলে ভালো হতো। কীভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না। বাড়িতে ফিরে রাস্তার ধারে ফল বিক্রি বা হকারি করতে হবে।"

অভাবী হাতে কাজ সরে না। লকডাউন ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। আশায় রয়েছেন একটু সরকারি সাহায্যের। দীর্ঘদিন বাড়ি যেতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন তাঁরা।