কলকাতা, 28 জানুয়ারি: সময় খারাপ। শূন্য ভাঁড়ার। প্রজাতন্ত্র দিবসেই 2019 সালের ট্রাফিক আইন বলবৎ করা হল কি শূন্য কোষাগার ভরানোর জন্যই ? এমনটাই মনে করেছে ওয়াকিবহলমহল। গত 24 জানুয়ারি রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতরের পক্ষ থেকে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করার জরিমানা হিসেবে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের যানবাহন সংগঠনগুলি ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ। রাজ্যজুড়ে চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ। কেন্দ্রের ট্রাফিক আইনের সঙ্গে সমতা বজায় রেখেই এই নতুন আইন রাজ্যেও প্রজাতন্ত্র দিবস থেকেই বলবৎ করা হয়েছে (New traffic law introduced in West Bengal)।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ এই আইনের (208 WT/3M -128/97(Pt(III)D) বিরোধিতা করলেও এই মহামারীর সময় যখন মানুষের হাতে এমনিতেই অর্থাভাব তখন এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে মানুষের কোমর আরও ভেঙে দেওয়া। এমনটাই মনে করছে যান সংগঠনগুলি। এই বিষয় বামপন্থী সংগঠন AITUC অনুমোদিত টাক্সি ও অ্যাপ ক্যাব সংগঠনের সম্পাদক নওয়াল কিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, "রাজ্য সরকারের কোষাগারে এখন টান পড়েছে তাই সাধারণ মানুষের উপর অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে কোষাগার পূরণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা আগামী 1 ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার শহর তথা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
কলকাতা ওলা উবের অ্যাপ ক্যাব অপারেটর ও ড্রাইভার ইউনিয়ন(সিআইটিইউ) সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ মনে করেন, "এই আইন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার করছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রনদিতভাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার এই আইনের বিরোধিতা করছেন। তবে রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতর কীভাবে এই নিয়ম লাগু করল ? কোভিড পরিস্থিতিতে এমনিতেই যাত্রী কম। তার উপর অস্বাভাবিক জ্বালানির দাম। সারাদিন গাড়ি যালিয়ে রোজগার নেই বললেই চলে। ঠিক সেই সময় এই ধরনের পাঁচগুণ জরিমানা চাপানোর অর্থ হল তাদের চাবুক মারা। জরিমানার টাকা দিলেও তিনমাস সাসপেন্ড থাকবে লাইসেন্স।"
অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের রাজ্যে 2020 বা 2021 সালে না করে একেবারে এই বছরে এসে জরিমানার অর্থ পাঁচগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হল। যখন করোনার তৃতীয় ঢেউ ও যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে, তখন বাস মালিকরা কোনও মতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একটা মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। জেলার স্বাভাবিক মূলত বৃদ্ধির চাপে পরে সরকারের কাছে আমরা বারে বারে আর্থিক প্যাকেজ-সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানাচ্ছি। ঠিক সেই সময় এই নিয়ম মরার উপর খাঁড়ার ঘা।"
আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসার খরচে অস্বচ্ছতা, স্বাস্থ্য কমিশনের রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
2019 সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যখন এই ট্রাফিক আইন প্রস্তাব করা হয় তখন সমস্ত রাজ্যের কম বেশি এই আইন চালু করা হয়। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের পথ দুর্ঘটনার তথ্য অনুসারে আমাদের রাজ্য দাড়িয়ে আছে 11তম স্থানে। এর থেকে বোঝাই যায় যে জরিমানা বাড়ানো ছাড়াই আমাদের রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা কমেছে। তাহলে কি হঠাৎ করে এই ট্রাফিক আইন প্রণয়ন পথ দুর্ঘটনা কমানোর জন্য, নাকি সরকারি কোষাগার বৃদ্ধি করার জন্য ? পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, জরিমানা বন্ধ না হলে চালকরা মানসিক চাপে থাকবে । ফলে, ঘটে যেতে পারে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা।