কলকাতা, 30 অগস্ট: রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন মেধা তালিকায় বিস্তর অসঙ্গতি ৷ এই অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল মামলা। যার জেরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের রিপোর্ট তলব করল বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে গত 23 অগস্ট রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন নতুন প্যানেল প্রকাশ করে। সেই প্যানেলে চূড়ান্ত অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েক হাজার চাকরি প্রার্থী। গত 16 অগস্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল যে, নতুন যে প্যানেল তৈরি করেছে এসএসসি তার তালিকা প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু কোর্টের অনুমতি ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে না স্কুল সার্ভিস কমিশন। শুধু তাই নয় মামলাকারীদের অভিযোগ থাকলে আদালত পরবর্তীতে সেই অভিযোগ সম্পর্কিত আবেদনও শুনবে বলে জানায় ডিভিশন বেঞ্চ।
2016 সালে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। 1 অক্টোবর 2019 সালে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এরপরই কিছু অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী সেই তালিকা চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। 11 ডিসেম্বর 2020 সালে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য এসএসসির মেধা তালিকা বাতিল করে দেন ৷ পাশাপাশি প্রার্থীদের তথ্য আপলোড করে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতেও নির্দেশ দেন। এবং নতুন করে ইন্টারভিউয়ের সঙ্গেই মেধা তালিকা প্রকাশ করতে বলেন।
21 জুন 2021 সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে যারা প্রথম মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল তাদের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরবর্তীতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলায় অভিযোগ ওঠে যে, স্বচ্ছভাবে তালিকা তৈরি করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। তালিকাভুক্ত অনেক চাকরি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র বিকৃত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে ৷ শুধু তাই নয়, অনেকের নম্বর বাড়িয়েও দেখানো হয়। অনেকেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, এমন প্রার্থীরাও সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, মামলাকারীদের ব্যক্তিগত অভিযোগ তারা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে জানাতে পারবে। পরবর্তীকালে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে 150 জন মামলাকারী।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশই বহাল রাখে। 24 জুলাই 2021 সালের মধ্যে সমস্ত মামলাকারীদের স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করতেও নির্দেশ দেওয়া হয় আদালতের তরফে। কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী 21 জুন 2021 সালে ইন্টারভিউ তালিকার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে সমস্ত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশন সেই অভিযোগ খতিয়ে না-দেখেই গড়পরতা জানিয়ে দেয় মামলাকারীদের কোন যোগ্যতাই নেই।
বুধবার বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে 150 জন চাকরিপ্রার্থীর আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী আদালতে লিখিতভাবে জানান যে, তাঁরা প্রথম মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে তাদের সেই তালিকা থেকে কেন বাদ দিয়ে দেওয়া হল তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি এসএসসি। অনেক তালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন পত্র বিকৃত করা হয়েছে বলেও আদালতে জানান আইনজীবী। মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেট ওয়েটেজ (টেটে নম্বর) রি-অ্যাসেসমেন্ট করে প্রথম মেধা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, আর সেই জন্য প্রথম মেধা তালিকা বাতিল হয় বলেও অভিযোগ। অথচ সেই নম্বরের ভিত্তিতে অনেকে নতুন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওএমআর যাচাইয়ের তথ্য এখানে গুরুত্বহীন, কারণ এসএসসি সমস্ত প্রার্থীদের ওএমআর প্রকাশ করা হয়নি বলেও দাবি। তাহলে সেই মেধা তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। এই কারণে প্রথম মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের অযোগ্য বলার নৈতিকতা নেই।
আরও পড়ুন: চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্টের ভিডিয়ো ফুটেজ চাইলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
সওয়াল শেষে এদিন বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানিয়েছে, আগামী 4 সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্যান্য মামলাকারীদের লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন আগামী 13 সেপ্টেম্বর তার উত্তর দেবেন এবং 14 সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।