কলকাতা, 5 জুলাই: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় পর্ষদের নতুন ডিফেন্স, অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক মামলারই পরিপ্রেক্ষিতে (Controversy over Giving Extra one Mark) । 2014 সালের টেট পরীক্ষার 6টি প্রশ্নের উত্তরে ভুল ছিল বলে বিশ্বভারতীর বিশেষজ্ঞ কমিটি মত দিয়েছিল । তারপরই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় আদালতে মামলাকারীদের নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । সবাইকে নম্বর দেওয়ার নির্দেশ বিচারপতি দেননি বলে এদিন হাইকোর্টে উল্লেখ করলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত ।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে মনে করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন । সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছে রাজ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ । ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় সব পক্ষ মঙ্গলবার তাঁদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে লিখিতভাবে জমা করেছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও লাপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ।
আরও পড়ুন : মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণকে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ
মামলাকারী চাকরি প্রার্থীদের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "যারা আন্দোলন করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের সামনে, ঝামেলা এড়াতে তাদের মধ্যে থেকে কিছু ছেলে-মেয়েকে অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়া হয় । 20 নভেম্বর 2017 প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-সহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং হয় । সেখানে নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে রীতিমতো সচেতনভাবেই বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে । 2014 সালের সব চাকরিপ্রার্থীদের থেকে আবেদন গ্রহণ না করে আন্দোলনকারীদের থামাতে অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়া হল ? যদি নিয়োগ স্বচ্ছ হয় তাহলে তদন্তে ভয় কী ! তদন্ত হোক । আপার প্রাইমারি, গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি নিয়োগের জন্য যেমন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে সুপার কমিটি গঠন করা হয়েছিল বেআইনিভাবে । পরবর্তীকালে সেই কমিটি বেআইনি বলে জানা যায় । একইভাবে এখানেও বেআইনি নিয়োগ করা হয়েছে । সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য এই দুর্নীতির তদন্তের প্রয়োজন ।
এর উত্তরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত জানান, দ্বিতীয় দফায় নম্বর দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেটা সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়নি এটা ঠিক । কিন্তু এটাতে কোনও দুর্নীতি আছে কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি । তিনি জানান, এমন নয় যে ওই ছাত্রছাত্রীরা 1 নম্বর পাওয়ার যোগ্য নয় । প্রশ্ন ভুলের জন্য এবং তাদের যেহেতু ট্রেনিং ছিল সেই কারণে তাদের নথি খতিয়ে দেখে নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি । কিন্ত সিঙ্গল বেঞ্চ তড়িঘড়ি বিকেল 5.30 এর মধ্যে তদন্ত শুরু করে সবাইকে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়ে দেয় । যারা সহযোগিতা করবে না তাদের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সিবিআইকে ।
আরও পড়ুন : খোদ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির চাকরি কাড়লেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্ট এইভাবে কাউকে হঠাৎ করে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে না । সব পরীক্ষার্থী সুযোগ পায়নি এটা ঠিক । কিন্তু কোথা থেকে এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে এখানে দুর্নীতি যুক্ত রয়েছে ৷ বিচারপতি সুব্রত তালুকদার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, "আপনি একজন ক্লাস টিচার নন যে সব বুঝিয়ে দিলেন । এটা একটা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের পরীক্ষা । কী করে বুঝবেন এখানে ক্রিমিনালিটি আছে কি না, বুঝবেন কী করে ফরেনসিক টেস্ট না-করে ?"
লক্ষী গুপ্ত ফের জানান, মোট 2854 আবেদন করেছিল ৷ তার মধ্যে 2787 জন নথি দিয়েছিল । আবেদনকারীর মধ্যে কিছু প্রার্থী ছিল যাদের ট্রেনিং ছিল, কিছু প্রার্থীর ট্রেনিং ছিল না ।" বিচারপতি আবার জানতে চান, কীভাবে একটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাঝখানে এসে আপনারা এই ট্রেন্ড আনট্রেন্ড প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণহীন বিষয়টি যোগ করলেন?
লক্ষ্মী গুপ্ত জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয় নির্দিষ্ট তারিখের পর আর আনট্রেন্ডদের নিয়োগ করা যাবে না । যে কোনও মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে না বলে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ রয়েছে । বিচারপতি জানান, আপনি তাহলে বলতে চান তদন্তের প্রয়োজন নেই ?
লক্ষ্মী গুপ্তর যুক্তি, এটা কি আদৌ সেই ধরনের মামলা যেখানে তদন্তের প্রয়োজন আছে ? এজেন্সির প্রয়োজন আছে তদন্তের জন্য ?
2014 টেটের প্রশ্ন ভুলে প্রচুর মামলা হয় আদালতে তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল যারা মামলা করেছে তাদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার । সবাইকে নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি । আগামী বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি হবে ডিভিশন বেঞ্চে ।