কলকাতা, 29 মার্চ : দেশের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি এ রাজ্যেও ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ । রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে পরিকাঠামো সহ হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে । এর পাশাপাশি কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে । করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে । পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন ৷
এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, "আমরা সব ধরনের পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখছি । সরকারি হাসপাতালগুলি প্রস্তুত । কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে । টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে ।" স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে । স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, "মাস্ক পরা, করোনা প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে ।"
চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "গতবছর সংক্রমণের শুরুতে হাসপাতালগুলিতে যত বেড থাকার প্রয়োজন ছিল তা ছিল না ৷ ছিল না অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটর, পিপিই কিট । সরকারি এবং বেসরকারি সিস্টেমকে গত বছর স্ট্রিমলাইন করে ফেলা গিয়েছিল । এর পরেও যে খামতিগুলি ছিল, সে সব বিষয়ে চিকিৎসক সমাজের তরফে সরকারকে সাজেশন দেওয়া হয়েছিল। প্রোটোকল মনিটরিং কমিটিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের প্রতিনিধিরা সরকারকে সহায়তা করেছে ।" তিনি বলেন, "যেভাবে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে সেই ভিত্তিতে সরকারকে অবশ্যই কাজ করতে হবে । কারণ, একটি অভিজ্ঞতা হয়ে আছে । চিকিৎসকদের-ও অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে ৷ পাশাপাশি ভ্যাকসিনও এসে গিয়েছে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে নেতৃত্ব দিয়ে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে ।"
আরও পড়ুন : তায়কোন্ডোয় কাবু করোনা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার বক্তব্যে বিতর্ক
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, "স্বাস্থ্য দফতর প্র্যাকটিক্যালি কিছুই করছে না । প্রস্তুত থাকার মতো পরিকাঠামো নেই । স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব রয়েছে ৷ কাজটা কে করবেন ? আশা, এএনএম-দের মতো একই স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে সব ধরনের কাজ করানো হচ্ছে । লোকবলের অভাব রয়েছে । সরকারের সদিচ্ছাও নেই । গত বছর যেভাবে সংক্রমণ বেড়েছিল এবারও বাড়ছে ।" তিনি বলেন, "গতবছরের শিক্ষা নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা করার প্রয়োজন ছিল, পরিকাঠামো যেভাবে ঢেলে সাজানোর দরকার ছিল তা হয়নি ৷"
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, "খুবই চিন্তার বিষয় । চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি । কারণ গত এক বছর বহু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন । অনেক চিকিৎসককে হারাতে হয়েছে । যেটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ কোনও কোনও দেশে আরও ভয়ঙ্কর আকারে দেখা দিচ্ছে ।" তিনি বলেন, "আমাদের রাজ্যে সবাই এখন ভোট নিয়ে ব্যস্ত । করোনার কথা সবাই ভুলেই গিয়েছেন । গত বছর করোনা নিয়ে মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন ছিল ৷ কিন্তু বর্তমান অবস্থায় যদি করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলে আসে তাহলে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে । কারণ চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে রয়েছে ।"
তিনি বলেন, সরকারের তরফে নিশ্চয়ই কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । কিন্তু, সেই অর্থে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে কোনও উদ্যোগ-ই আমাদের নজরে পড়ছে না । যেভাবে মিটিং, মিছিল চলছে, জমায়েত হচ্ছে তাতে ন্যূনতম স্বাস্থ্য বিধি মানার কোনও প্রচেষ্টা নেই । আবার একটা ভয়ঙ্কর বিপদের সামনেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি । জনগণকে সচেতন করা দরকার । প্রয়োজন হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিটিং মিছিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হোক । না মানা হলে ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।"