কলকাতা, 9 জুলাই : দলের এক সন্ধিক্ষণে তাঁর উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । চ্যালেঞ্জ ছিল লোকসভা ভোটে প্রায় ডুবতে বসা প্রদেশ কংগ্রেসকে তুলে ধরা । চ্যালেঞ্জও নিয়েছিলেন । কিন্তু শেষ অবধি সফল হননি । লোকসভা ভোটে দলের শোচনীয় ফলের দায় স্বীকার করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন সোমেন মিত্র । কিন্তু, সোমেন মিত্রর সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করল না AICC। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ জানিয়েছেন, নতুন সর্বভারতীয় সভাপতি এলে তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ততদিন পর্যন্ত সোমেন মিত্রকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে ।
গত বছর সেপ্টেম্বরে অধীররঞ্জন চৌধুরিকে সরিয়ে আচমকাই বাংলায় কংগ্রেসের মুখ করা হয়েছিল সোমেনকে । প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সিদের মতো হেভিওয়েটরা থাকলেও সে সময় রাহুল ব্রিগেড ভরসা রেখেছিল সোমেনের উপরই । লোকসভা ভোটে দেশজুড়ে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল গান্ধি (যদিও সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ নিয়ে এখনও টালবাহানা চলছে) । রাহুলের পথে হেঁটে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মিলিন্দ দেওরার মতো অনেকেই পদ ছেড়েছেন । এবার সেই পথে হেঁটেই পদত্যাগ করলেন সোমেন । আজ দিল্লিতে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন সোমেন ।
1992-1998 পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন সোমেন । সে সময়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূল তৈরি করেছিলেন । 1998 সালে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেস একটি মাত্র আসন পাওয়ায় পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন সোমেন মিত্র ।
2008-এ কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তিনি গড়েছিলেন প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস । 2009 সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন । সে বছরই ডায়মন্ডহারবার থেকে তৃণমূল সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন । 2014 সালে জানুয়ারি মাসে সোমেন আবার কংগ্রেসে ফিরেছিলেন । তার আগেই অবশ্য তৃণমূলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি ।
দায়িত্ব পাওয়ার পরই সোমেন বুঝিয়েছিলেন অধীরের মতো কট্টর তৃণমূল বিরোধিতার পথে তিনি হাঁটবেন না । দিল্লির নেতৃত্ব যেমন সিদ্ধান্ত নেবে সেই পথেই হাঁটবেন । যদিও বাংলায় লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও জোট হয়নি । রাজনৈতিক মহলের অভিমত, তৃণমূলের সঙ্গে জোট বা রাজ্যে কংগ্রেসকে হৃত মর্যাদায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সোমেনের হাত ধরে করা হয়েছিল তাতে সাফল্য আসেনি । ইতিমধ্যেই লোকসভায় গুরুত্ব বেড়েছে অধীরের । পরিস্থিতি বিচার করেই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কান্ডারি দায়িত্ব ছাড়ার পথই বেছে নিলেন ।