কলকাতা, 1 নভেম্বর: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে হয়রানির মামলায় পূর্বে মেদিনীপুরের এগরার এসডিপিও’কে 5 লাখ টাকা জরিমানা করা হল ৷ বুধবার এই জরিমানা করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । নির্দেশে তিনি জানান, এসডিপিও-কে নিজের পকেট থেকে এই টাকা দিতে হবে । আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই জরিমানার টাকা না-দিলে আদালত রুল ইস্যু করবে ।
পাশাপাশি বিচারপতি জানিয়েছেন, এই মামলায় কোনও নোটিস ইস্যু করা যাবে না । আগের ইস্যু করা নোটিস খারিজ করা হল ৷ এদিন এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে ৷ নির্দেশে বিচারপতি আরও উল্লেখ করেন, একজন সাক্ষীকে এভাবে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নয় । পুলিশ কোনও নাগরিককে হয়রানির জন্য তৈরি হয়নি । বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের প্রশ্ন, সাক্ষী হিসেবে ডেকে কীভাবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন চাইতে পারেন ?
উল্লেখ্য, পল্লব দত্ত নামে এক ব্যাক্তি পূর্ব মেদিনীপুরে দীঘা-মেচেদা রোডের দু’ধারে যে এলইডি আলো দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেন । কাঁথি পৌরসভা এলাকায় 2016-2017 আর্থিক বছরে ওই আলোর ব্যবস্থা করা হয় ৷ 2-3 কোটি টাকা খরচ করে ওই আলো রাস্তার দু’পাশে দেওয়া হয় । কিন্তু সেগুলো কোনও পরিচর্যা করা হচ্ছে না । তাই কাঁথি পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা দায়ের করেন পল্লব দত্ত নামে ওই ব্যক্তি । সেই সময় কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী ।
এ দিন আদালতে শুভেন্দু-সৌমেন্দুদের বড়দা কৃষ্ণেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী ছিলেন রাজদীপ মজুমদার ৷ তিনি আদালতে ব্যঙ্গের সুরে বলেন, ‘‘অভিযোগকারী মর্নিংওয়াকে গিয়ে দেখেন এবং মেচেদা বাইপাস থেকে দিঘা বাইপাসের আলোর সমস্যা নিয়ে একটি অভিযোগ জানান । সেই দিনই কাঁথি থানায় বিরোধী দলনেতার ভাইয়ের (সৌমেন্দু অধিকারী) নামে এফআইআর দায়ের হয়ে গেল । সেই মামলাতেই 160 নোটিস ইস্যু করে ডেকে পাঠানো হয়েছে কৃষ্ণেন্দু অধিকারীকে ।’’
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলায় শর্তসাপেক্ষে আরও তিনসপ্তাহ বাড়াল সৌমেন্দুর রক্ষাকবচ
আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আরও বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন কী জিজ্ঞাসা করতে চান, সেই প্রশ্ন দু’দিন আগে দিলে কৃষ্ণেন্দু অধিকারী বুঝতে পারবেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে পারবেন । 160-এর নোটিশ দিয়ে মামলাকারীকে আইটি রিটার্নের (আয়কর দেওয়ার তথ্য়) কাগজ নিয়ে যেতে বলা হয়েছে । এই মামলায় আইটি রিটার্নের কাগজ কী কারণে প্রয়োজন ?’’
এর পর ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, পুলিশ যদি কোনও কিছুর তদন্তের জন্য কাউকে তলব করে, তাহলে কি তাঁর কাছে 10 বছরের আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত তথ্য চাইতে পারে ? পুলিশ অযথা হয়রানি করার জন্য তাঁকে তলব করেছে । একজন ভারতীয় নাগরিককে এই ভাবে পুলিশ হয়রানি করতে পারে না ৷
সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন । ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, ‘‘অবিলম্বে এর উত্তর চাই ।’’ কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী সময় দিতে আবেদন জানান । তারপরই বিচারপতি আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েন । এবং নির্দেশে বলেন, ‘‘পুলিশকে অবিলম্বে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করা হচ্ছে । না হলে আদালত কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে ।’’
পাশাপাশি এই ধরনের নোটিশ দেওয়ার জন্য এসডিপিও এগরাকে 5 লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের । যদি পুলিশ আধিকারিক যদি টাকা না দেন, তাহলে ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান বিচারপতি ।
আরও পড়ুন: যোগেশ চন্দ্র ল'কলেজের অধ্যক্ষা সুনন্দা গোয়েঙ্কা ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়