কলকাতা, 20 জানুয়ারি: ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় আইআইটির ডিরেক্টর বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি ভর্ৎসনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা (Cal HC Slams IIT Kharagpur Director) । ডিরেক্টরকে সরাসরি প্রশ্ন বিচারপতির, "আপনার বাড়িতে ছেলে মেয়ে নেই ! বিদেশ যাওয়া আগে, না ছাত্র মৃত্যুর তদন্ত আগে ?"
খড়গপুর আইআইটিতে ছাত্রের মৃত্যু: গত 3 নভেম্বর খড়গপুর আইআইটিতে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ফয়জান আহমেদ নামে এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ৷ প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলে অনুমান করেছিল পুলিশ ৷ ফয়জানের বাড়ি অসমে৷ তাঁর দেহ নিতে এসে এই নিয়ে সরব হয় তাঁর পরিবার ৷ ছেলের মৃত্যুতে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলেন তাঁরা ৷
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে ৷ এর আগেই এই মামলার শুনানিতে খড়গপুর আইআইটির ডিরেক্টর ও পুলিশের লিখিত রিপোর্ট তলব করেছিল আদালত ৷ সেই রিপোর্ট জমা পড়ে৷ কিন্তু এই ঘটনায় ডিরেক্টর কী পদক্ষেপ করেছেন, একাধিকবার জানতে চায় আদালত ৷ আদালতকে কিছু জানাতে পারেনি আইআইটি কর্তৃপক্ষ । শেষে ক্ষুব্ধ বিচারপতি ডিরেক্টরকেই আদালতে ডেকে পাঠান । সেই মতো শুক্রবার তিনি হাজির হয়েছিলেন হাইকোর্টে ৷
শুনানিতে উপস্থিত আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর: তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র বলেন, "ঘটনার পরে তথ্য অনুসন্ধান কমিটির গড়া হয়েছে । তারপরে তদন্ত করে ডিসিপ্লিনারি কমিটি রিপোর্ট দেয় । এরপরে হাই পাওয়ার কমিটি গড়া হয় ।’’ যা শুনে বিচারপতি বলেন, "ডিরেক্টর কেন বুঝতে পারছেন না, একটা ছেলের এমন মৃত্যু আর সেখানে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের চাপা দেওয়ার চেষ্টা খুব গুরুতর ।’’
এর পরই বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনার ছেলে মেয়ে আছে ? তাহলে আপনি তাদের কথা ভাবুন, বুঝতে পারবেন ওই বাবা মায়ের কান্না । যাঁরা পয়সার অভাবে গুয়াহাটি থেকে আসতে পারছেন না । তাঁর কাছে কোনটা জরুরি, আগে কোর্টের তলব, নাকি টোকিও যাওয়া ? ব়্যাগিং-এর (Ragging) ঘটনা এত হালকা ভাবে কেন নিচ্ছেন ? কোর্ট চায় এই ব্যাপারে ডিরেক্টর অতি সক্রিয় হয়ে পদক্ষেপ করুন ।"
বিচারপতির নির্দেশ: বিচারপতি নির্দেশে উল্লেখ করেন, আইআইটি খড়গপুর মতো একটা এটি উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটা যথেষ্ট খারাপ । এর জন্য মানসিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে পড়ুয়াদের মধ্যে । ডিরেক্টর তাঁর রিপোর্ট জমা দিয়েছেন । ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মামলাকারীর আইনজীবী তাঁর আপত্তি জানাবেন । 6 ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি ।
পাশাপাশি বিচারপতি জানিয়েছেন, কোর্ট আশা করে আগামিদিনে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, আইআইটি তার জন্য পদক্ষেপ করবে । প্রয়োজনে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করতে হবে । যাবতীয় ব্যাপারে দায়িত্ব ডিরেক্টরের । পাশাপাশি পুলিশকে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি । তিনি বলেন, "দয়া করে কোনও পক্ষ নেবেন না । আগামিদিনে কেস ডায়েরি হাজির করতে হবে আদালতে ।"
বিচারপতি মান্থার বেঞ্চ বয়কট: অন্যদিকে বিচারপতি মান্থার এজলাসে এখনও রাজ্যের কোনও আইনজীবী সওয়ালে অংশগ্রহণ করছেন না । সেই জন্য আইআইটি খড়গপুরের মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিজেই এগিয়ে এসে আদালতকে সহযোগিতা করতে রাজি আছেন বলে জানান বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে । মামলার সমস্ত নথি দ্রুত মামলাকারীকে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি ।
উল্লেখ্য, এই বিচারপতির বেঞ্চ বয়কট করার সিদ্ধান্তে এখনও অনড় রাজ্যের আইনজীবীরা । এখনও কোনও মামলাতেই হাজির হচ্ছেন না রাজ্যের আইনজীবীরা । সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: ছাত্রমৃত্যুর মামলায় হাজিরা নিয়ে খড়্গপুর আইআইটির অধিকর্তার উপর ক্ষুব্ধ বিচারপতি মান্থা