কলকাতা, 19 ডিসেম্বর: সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যুর (Lalan Sheikh Death in CBI Custody) ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের (Judicial Investigation) দাবিতে রুজু হয়েছে জনস্বার্থ মামলা (PIL) ৷ সোমবার এই মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখল কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷
মামলাকারীর তরফে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বগটুইয়ের ঘটনায় আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছিল ৷ আদালতই সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় ৷ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখ ফেরার ছিলেন ৷ এরপর তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ সিবিআই হেফাজতেই লালনের মৃত্যু হয় ৷ তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করা হয় ৷ সিবিআই ও সিআইডির মধ্যে লড়াই আগেও ছিল ৷ বর্তমানে আবারও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ বগটুইয়ের ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল ৷ মানবাধিকার কমিশন এখানে যথার্থ তদন্ত করতে পারে না ৷ সেই কারণেই প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করতে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের আর্জি জানাচ্ছি ৷"
আরও পড়ুন: 'আমার স্বামীর দেহের উপর অনেক অত্য়াচার হয়েছে, আর নয় !' বললেন লালনের স্ত্রী
প্রসঙ্গত, এদিনের শুনানি চলাকালীন সিবিআইয়ের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন ৷ তিনি আদলতকে জানান, বগটুইয়ের ঘটনার পরই মানবাধিকার কমিশন সক্রিয় হয়েছিল ৷ সেই প্রেক্ষিতেই মামলাকারীর আইনজীবী মানবাধিকার কমিশনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন ৷
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, "আবেদনকারী অনুসন্ধান চেয়েছেন ৷ সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার রায় অনুসারে লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনায় নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে করেছে রাজ্য সরকার ৷ এর সঙ্গে গরুপাচার ও কয়লাপাচার সংক্রান্ত তদন্তের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ রাজ্য়ের তদন্তের (লালন মৃত্যু মামলায় সিআইডি তদন্ত) জন্য ওই দু'টি তদন্তে ব্যঘাত ঘটানোর কোনও প্রশ্নই নেই ৷ আদালত চাইলে যে কোনও বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করাতেই পারে ৷ ইতিমধ্যেই, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে তদন্ত চলছে ৷ আগামী 21 ডিসেম্বর সিআইডিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে ৷ সিআইডিকে তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফিও করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ কে তদন্ত করবে, সেই ব্যাপারে আগেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷"
উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী এদিন আদালতে দাবি করেন, "সিবিআই আধিকারিকদের অকারণ হেনস্তা করা হচ্ছে ৷ তাঁদের সঠিকভাবে তদন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ তাঁরা কয়লাপাচার এবং গরুপাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলির তদন্ত করছেন ৷ সেই তদন্তে ব্যাঘাত ঘটছে ৷ কারণ, সিআইডি তাদের হেনস্থা করছে ৷ রাজ্যের পক্ষ থেকে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ৷ তদন্তে বিঘ্ন ঘটানোর জন্যই রাজ্য প্রশাসন সিআইডিকে দিয়ে সিবিআইকে হেনস্তা করছে ৷"
সিবিআইয়ের আইনজীবীর আরও বক্তব্য হল, "সিবিআইয়ের এসপি এবং ডিএসপির বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে ৷ এর অর্থ হল, যখনই ইচ্ছা হবে, যেকোনও সিবিআই আধিকারিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হতে পারে ৷ এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ৷ আমরা তদন্তের ভয় পাই না ৷ সত্য সামনে আসুক, তা আমরাও চাই এবং সেটা যথাযথ পথেই আসুক ৷ তদন্তের নামে সিআইডি যেন হেনস্তা না করে ৷"
সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর মামলার রায়দান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ৷ উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যেই সিআইডি লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে ৷ আগামী 21 ডিসেম্বর সেই মামলার শুনানি হবে সিঙ্গল বেঞ্চে ৷