কলকাতা, 20 অক্টোবর: বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের সম্মান, তাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ এই বয়সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা আকছারই ঘটে থাকে ৷ আর এর সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের যোগ রয়েছে ৷ নাবালক-নাবালিকারা নিজেদের ইচ্ছায় যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ৷ এদিকে পকসো আইনে এমন সম্পর্ক আইনবিরুদ্ধ ৷
এই পরিস্থিতিতে 16-18 বছরের বয়ঃসন্ধিতে থাকা নাবালক-নাবালিকাদের সচেতন করতেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ এই বয়সের ছেলে এবং মেয়েরা যাতে আইনি জটিলতাগুলি বুঝতে পারে, তাদের নিজের নিজের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়, সামাজিক মূল্যবোধগুলি মেনে চলে, তাই তাদের জন্য এই বিশেষ নির্দেশিকা আদালতের ৷
সম্প্রতি একটি মামলায় এক যুবক তাঁর নাবালিকা প্রেমিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ৷ এই ঘটনায় তাঁর 20 বছরের কারাবাসের সাজা হয় ৷ তবে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ ওই যুবককে মুক্তি দেয় ৷ এরপরই আদালত পকসো আইন 16-18 বছর বয়সিদের মধ্যে ইচ্ছাকৃত যৌন সম্পর্ককে আইনি স্বীকৃতি না-দেওয়ার ব্যাপারটি নজরে আনে ৷
আরও পড়ুন: বন্ধুকে বিশ্বাস করে গণধর্ষণের শিকার নাবালিকা, ঘটনায় গ্রেফতার চার
এই প্রসঙ্গে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ মহাভারত থেকে 'ধর্মো রক্ষয়তি রক্ষয়িতা'-র কথা তুলে ধরেন ৷ এর অর্থ- যে আইন মেনে চলে, আইন তাকে রক্ষা করে ৷ আবেদনকারী ওই যুবককে মুক্তি দিতে গিয়ে দুই বিচারপতি বয়ঃসন্ধিকালীন সম্পর্ককে সামলানোর জন্য একটি সার্বিক পরিকাঠামো তৈরির উপর গুরুত্ব দেন ৷
এই বয়সের কিশোর-কিশোরীরা যাতে সামাজিক মূল্যবোধগুলিকে সম্মান দিতে শেখে এবং তাদের ভালো থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা যায় ৷ বয়ঃসন্ধিতে থাকা নাবালক-নাবালিকাদের তাদের শরীর সুস্থ রাখা এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা প্রয়োজন, পর্যবেক্ষণ করে আদালতের ৷ এর সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদেরও তাদের শারীরিক ভালো-মন্দের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন ৷ তাদের সম্ভ্রম, তারা কীসের যোগ্য বা কীসের নয়, তা জানা দরকার ৷ অনেক সময়ই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার জন্য মেয়েদেরই আগে কলঙ্কিত করে সমাজ ৷ 16-18 বছর বয়সি মেয়েদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় আদালত ৷ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিও তাদের জানা দরকার ৷
মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেদেরও কিশোরী, মহিলাদের সম্মান জানাতে শিখতে হবে ৷ তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন, তাদের গোপনীয়তাকে সম্মান জানানো, তাদের শরীরের অধিকার সম্পর্কে ছেলেদেরও সচেতন হতে হবে ৷ এই সবকিছুর পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের জীবনে সেক্স এডুকেশন বা যৌন শিক্ষার ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷
আদালতের পরামর্শ, এই যৌন শিক্ষার হাতেখড়ি পরিবারের মধ্যে থেকেই হওয়া উচিত ৷ স্কুলের পাঠ্যসূচিতও তা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ৷ সামগ্রিক যৌন শিক্ষা পাঠে বয়ঃসন্ধিতে থাকা কিশো বা কিশোরী তাদের শরীরকে জানতে পারবে, নিজেদের আবেগকে বুঝতে পারবে ৷ আর এর পাশাপাশি একে অপরের সীমাকেও সম্মান জানাতে শিখবে ৷ একটি প্রজন্ম জানুক সুস্থ সম্পর্ক কাকে বলে, কোনও সম্পর্কে একে অপরের সম্মতি দেওয়া নিয়ে সচেতন হোক এটাই এই যৌন শিক্ষার উদ্দেশ্য ৷ আর সর্বোপরি কোনও ভাবে নাবালক-নাবালিকারা যেন হেনস্থা না হয়, তাদের কোনওভাবে ব্যবহার না করতে পারে- সেই মানসিক গঠন তৈরি করা ৷
আরও পড়ুন: গর্ভবতী নাবালিকা, ধর্ষণের অভিযোগ সরকারি কাজে সাহায্যকারী ভলেন্টিয়ারের বিরুদ্ধে